শিরোনাম

South east bank ad

বরগুনাগামী লঞ্চে আগুন, ৩৬ জনের মৃতদেহ উদ্ধার , দগ্ধ ৮০, নিখোজ শতাধিক

 প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

মোঃ রাজু খান,(ঝালকাঠি):

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী এমভি অভিযান ১০ নামে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চে আগুন লেগে ৮০ জনেরও বেশি যাত্রী দগ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী ও ফায়ার সার্ভিসের উপরিচালক মোঃ কামাল উদ্দিন ভুইয়া।

লঞ্চটি ঢাকা থেকে বরগুনা যাওয়ার পথে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর দপদপিয়া এলাকায় আসলে বৃহস্পতিবার সাড়ে তিনটার দিকে ইঞ্জিন কক্ষ থেকে আগুন লাগে। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও বেচেঁ যাওয়া যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা থেকে তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে বরগুনা যাচ্ছিল এমভি অভিযান ১০ যাত্রীবাহী লঞ্চটি। রাতে ইঞ্জিন কক্ষ থেকে আগুন লাগে। এ সময় কেবিন ও ডেকের বেশীরভাগ যাত্রীরা ঘুমিয়ে ছিলেন।

লঞ্চটি বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া এলাকায় পৌছালে ইঞ্জিন কক্ষে আগুন ধরে যায়। বেচেঁ যাওয়া যাত্রী বামনা উপজেলার মোঃ আবদুল্লাহ জানান, “আগুন দেখে নিচতলার ডেকের যাত্রীরা দোতলায় অবস্থান নেয়। লঞ্চের স্টাফরা কেবিনের যাত্রীদের কেবিন থেকে বের হতে নিষেধ করে ।”

আবদুল্লাহ আরও জানান আগুন লাগার পরও লঞ্চটি প্রায় ৩০/৪০ মিনিট চালিয়ে প্রথমে ঝালকাঠির বিষখালী-সুগন্ধ্যা-ধানসিড়ি নদীর মোহনায় মোল্লাবাড়ি তোতা শাহর মাজার এলাকায় থামিয়ে দেয় । সেখানে লঞ্চের সকল স্টাফসহ তিনশাতাধিক যাত্রী নেমে যেতে সক্ষম হয়।

যাত্রী মোঃ বাচ্চু মিয়া জানান, “বেশীরভাগ যাত্রী ও স্টাফরা মাজার এলাকায় নেমে গেলেও লঞ্চে আটকা পড়েন কেবিন ও ডেকের ঘুমন্ত যাত্রীরা। ”

এখান থেকে লঞ্চটি ভাসতে ভাসতে ঝালকাঠির দিয়াকুল গ্রামে সুগন্ধ্যা নদীর তীরে আটকে যায় । এখানেও বেশ কিছু যাত্রীকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা। অনেকে লঞ্চ থেকে লাফিয়ে নদীতে পড়েন । ভোর পাচটার দিকে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ নদীর তীর থেকে যাত্রীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

উদ্ধারকৃত লাশ ঝালকাঠি পৌর মিনি পার্কে এনে রাখা হয় । এখানে সুরতহাল তৈরি করে লাশ পাঠানো হয় ময়না তদন্তের জন্য মর্গে । ঝালকাঠির ফায়ার সার্ভিসেরকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে ৮০ জনেরও বেশি যাত্রী দগ্ধ হয়। এখন পর্যন্ত ৩০ জনের লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা। দগ্ধ যাত্রীদের উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনাস্থলে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করছেন।এদিকে লঞ্চে আগুনের খবর শুনে বরগুনা ও এর আশেপাশে এলাকা থেকে স্বজনরা ঝালকাঠি লঞ্চঘাট এলাকায় এসেছেন। তাদের আহাজারিতে ভারি হয়ে গেছে এখানকার আকাশ।

হারানো স্বজনদের খোজে আসা বরগুনার মোঃ হারুন বলেন, তার মেয়ে রিমু বেগম (২১) নাতি লিমা (১১) নিখোজ রয়েছে । একই এলাকার স্বজন আল-আমিন বলেন, তার বড় ভাই ইদ্রিস (৬০) নিখোজ । স্বজন ফোরকান বলেন বোন রিনা (২৮) ভাগ্নি নুসরাত (১০) এর কোন খোজ পাওয়া যাচ্ছে না।

ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মোঃ জোহর আলী জানান, উদ্ধারকৃত ৩৬ লাশের মধ্যে ৫ জনের লাশ সনাক্ত করা হয়েছে , সকল লাশেরই পোস্ট মর্টেম সম্পন্ন করে তারপর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে । তিনি আরও জানান ঘটনা তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ সদস্য বিশিস্ট একটিতদন্ত কমিটি করা হয়েছে । নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে প্রদান করা হবে ।

এছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে একলাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা করে দেয়া হবে । ঝালকাঠির ফায়ার সার্ভিস এর উপপরিচালক কামাল উদ্দিন ভুইয়া জানান, ফায়ার সার্বিস কর্মীরা ৩০ টি লাশ উদ্ধার করেছে । বাকি লাশ কোস্ট গার্ড উদ্ধার করেছে । ফায়ার সার্ভিস ও কোস্ট গার্ডের ডুবুরী দল সুগন্ধ্যা ও বিষখালী নদীতে অভিযান অব্যহত রেখেছে ।

দূর্ঘটনার কারন সম্পর্কে উপপরিচালক বলেন, তদন্ত ছাড়া এটি পুরোপুরি বলা সম্ভব না । তবে লঞ্চের যাত্রীরা বলছেন, ইঞ্জিনরুমে বিকট শব্দর পর পুরো লঞ্চে আগুন ধরে যায় ।

লঞ্চের আহত যাত্রী রাসেল মিয়া, বলেন, “আগুন লাগার পর লঞ্চের চালক ইচ্ছে করলে লঞ্চটি অনেক আগে থামাতে পারতেন আগুন লাগার পরও তিনি লঞ্চটি অনেক্ষন চালিয়েছেন । ”

সর্বশেষ লঞ্চের সকল স্টাফ যাত্রীদের মৃত্যুর মুখে রেখে পালিয়ে যান ।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: