স্বাধীনতার ৫০ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মেলেনি আব্দুল মান্নানের
আব্দুর রহমান, (নেত্রকোনা):
দেশকে স্বাধীন করতে জীবন বাজি রেখে যারা যুদ্ধ করেছিলেন তাদের কে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান (মুক্তিযোদ্ধা) হিসেবে মূল্যয়ন করা হয়। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি ও সম্মান না পাওয়া একজন মুক্তিযোদ্ধার নাম আবু সালেহ মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান (৬৬)। তিনি নেত্রকোনার মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের গোবিন্দশ্রী (বড্ডা) গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যুদ্ধে অংশ নিতে ১১ নম্বর সেক্টর কোম্পানি কমান্ডার ইলিয়াস চৌধুরী মাধ্যমে মহেশখোলা ইয়ুথ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণে যান আবু সালেহ মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান। পরে ইউনুছ আলী সীমান্ত পেরিয়ে প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের ঢালু ইয়ুথ, দাম্বু ও রংড়া ক্যাম্পসহ বেশ কিছু ক্যাম্পের নিরস্ত্র প্রশিক্ষণ করেন তিনি। রংড়া থেকে বাঘমারা ক্যাম্প হয়ে ভারতের তুরাত ক্যাম্পে যোগ দেন আব্দুল মান্নান। তুরাত ক্যাম্পে প্রশিক্ষণার্থী অতিরিক্ত থাকায় মহাদেও ক্যাম্পে যান তিনি।
স্বাধীনতার যুদ্ধের পূর্বে আব্দুল মান্নানের আনসার প্রশিক্ষণের এর দুটি সনদপত্র থাকায় মহাদেও ক্যাম্পের উপদেষ্ঠা কমিটির সভাপতি এডভোকেট আনিছুর রহমান আব্দুল মান্নান কে ওই ক্যাম্পেই রেখে দেন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষক হিসেবে। মহাদেও ক্যাম্পের প্রশিক্ষক আব্দুল মান্নানের নিকট হতে মুক্তিযোদ্ধারা প্রাথমিক ভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে ভারতের যেতেন সশস্ত্র প্রশিক্ষণে। এভাবে তিনি দীর্ঘ চার মাস প্রায় দুই শতাধিক মুক্তিযোদ্ধাদের কে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাহাদেও ক্যাম্পের উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আনিছুর রহমানের প্রত্যয়ণ পত্র নিয়ে কর্নেল এমএজি ওসমানী স্বাক্ষরিত সনদপত্র লাভ করেন আব্দুল মান্নান।
স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পর একাত্তরের টগবগে যুবক এখন বয়সের ভারে খুব একটা চলতে পারেন না। দীর্ঘদিন ধরে অনেক চেষ্টা তদবির করেও মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় তার নাম লিপিবদ্ধ হয়নি। তালিকায় নাম অর্ন্তভুক্তি না হওয়ায় তিনি বঞ্চিত রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিতে পারছেন না তিনি। নিজ গ্রামের মানুষসহ উপজেলার অন্য বীর মুক্তিযোদ্ধারা আব্দুল মান্নান কে মুক্তিযোদ্ধা বলে ডাকলেও কাগজে-কলমে তার স্বীকৃতি মিলেনি স্বাধীনতার ৫০ বছরেও। ৬৬ বছর বয়সী আব্দুল মান্নান অলস সময়ে ঝাপসা চোখে এখন শুধু মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রোমন্থন করেন।
আবু সাহেল মো. আব্দুল মান্নান বলেন, যুদ্ধের পূর্বে আনসার প্রশিক্ষণ করে দুটি সনদপত্র লাভ করেছিলাম। দেশে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধে অংশগ্রহণ করি। আনসার প্রশিক্ষণের দুটি সনদ দেখে মাহাদেও ক্যাম্পের উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আনিছুর রহমান সেখানে প্রশিক্ষক হিসেবে আমাকে রেখে দেন। সেখান থেকে প্রায় দুই শতাধিক মুক্তিযোদ্ধাকে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দিয়েছি। স্বাধীনতার পর মাহাদেও ক্যাম্পের উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আনিছুর রহমানের প্রত্যয়ণ পত্র নিয়ে কর্নেল এমএজি ওসমানী স্বাক্ষরিত সনদপত্র লাভ করি। আমার প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়ে দুই শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পেলেও আমার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মিলেনি স্বাধীনতার ৫০ বছরেও। মৃত্যুর আগে আমি কি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাব না? এই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
মদন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কদ্দুছ বলেন, আব্দুল মান্নান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। যুদ্ধে অংশ নিয়েও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না পাওয়াটা দুঃখজনক।
মদন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা হেলাল উদ্দিন তালুকদার বলেন, আব্দুল মান্নান স্বাধীনতার সংগ্রামে অংগ্রহণ করেছিলেন। তার যে প্রমাণাদি রয়েছে, এতে তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এর কোন সন্দেহ নেই। স্বাধীনতার ৫০ বছরে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়া এখন তার অধিকার।