রাজাপুর ফাজিল মাদ্রাসায় অনিয়মের ভারে ন্যুজ্ব
মোঃ রাজু খান, (ঝালকাঠি) :
ঝালকাঠির ঐতিহ্যবাহী রাজাপুর ফাজিল মাদ্রাসায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বাণিজ্যের পায়তারা করার অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। ২০১৭ সালে গঠিত কমিটির অধীনে নিয়োগের বিষয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে গত ২১ অক্টোবর লিখিত অভিযোগ করেন মাদ্রাসায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে আবেদনকারী মো. মাসুম নামের এক প্রার্থী। এছাড়াও পরিদর্শক ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বরাবরে একই বিষয়ে মাদ্রাসাটির উপাধ্যক্ষ মোঃ জাকির হোসাইন আরো একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন মহলে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। উক্ত ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি সুরক্ষায় কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
সূত্রমতে জানা গেছে, ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে অনিয়ম-দুর্নীতি, প্রভাব বিস্তার ও ক্ষমতার অপব্যবহার ব্যাপকভাবে জেঁকে বসেছে। দুর্নীতির মহামারীতে গ্রাস করা প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ পদে মাওলানা আসাদুজ্জামান গত ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ সালে অবসরে গেলে পদটি শুন্য হলে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ম্যানেজিং কমিটি। অধ্যাক্ষসহ কম্পিউটার অপারেটর ও আয়া পদে ১ জন করে মোট ৩ পদে ৩ জন লোক নেয়ার জন্য বিভিন্ন পত্রিকায় ০৯-০৬-২০২০, ২০-০৬-২১, ০১-০৮-২০২১ ও ০৫-১০-২০২১ তারিখে আলাদা আলাদা বিজ্ঞপ্তি দেয় মাদ্রাসা কতৃপক্ষ।
পরিকল্পিত ভাবে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ প্রত্যাশির আত্মীয় ও বন্ধু মিলিয়ে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্যানেল তৈরি করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের নেতৃত্বে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি এ নিয়োগের পায়তারা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরকারি বিধান মতে, মাদ্রাসার বর্তমান কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ কামাল হোসেন সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পরে আজ পর্যন্ত সদস্যদের উপস্থিতিতে একটি মিটিংও করেননি মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টরা। অপর দিকে ভারপ্রপ্ত অধ্যক্ষের চাকুরির মেয়াদ কয়েক মাস থাকায় তিনি দুর্নীতির অভিপ্রায়ে ষড়যন্ত্র করে সভাপতিকে ভুল বুঝিয়ে পদ্ধতিগতভাবে দুর্নীতিকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছেন। অথচ গত ২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর অনুমোদিত চলমান কমিটির অভিভাবক সদস্য হিসেবে আছেন স্থানীয় মাহাবুবুর রহমান ও আঃ রাজ্জাক অথচ তারা মাদ্রাসাটির কোন শিক্ষার্থীর অভিভাবক নন। অপর এক স্থানীয় লুৎফুর রহমান ম্যানেজিং কমিটির দাতা সদস্য দেখানো হলেও তিনি অত্র প্রতিষ্ঠানে নিজে কোন জমি বা নগদ অর্থ দান না করেই সাবেক অধ্যক্ষ ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অত্যন্ত আস্থাভাজন হওয়ায় তাকে ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবে রাখেন। এছাড়াও একজন শিক্ষক প্রতিনিধি আবুল কালামের মৃত্যু হওয়ায় পদটি শুন্য রয়েছে।
এছাড়াও তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদবি ব্যবহার করে নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতামূলক কর্মকান্ড অব্যাহত রাখছেন। এতে করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এখন দুর্নীতির ভারে ন্যুজ্ব হয়ে পড়েছে। এ ধরনের অনিয়ম দুর্নীতির কারনে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের পথে বড় রকমের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ ব্যাপারে মাদ্রাসাটির অভিয়ুক্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ নুরুজ্জামান তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিধি সম্মতভাবে সভায় সবার সম্মতিতে এ নিয়োগ কার্যক্রমের সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সে লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি চলছে, এককভাবে আমি কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি, আমার বিরুদ্বে তদন্তে এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে মেনে নেব।