শিরোনাম

South east bank ad

ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ ট্রলারে মোটরসাইকেল-যাত্রী পারাপার

 প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

আরাফাত হাসান, (মাদারীপুর) :

পদ্মায় ইঞ্চিন চালিত ট্রলারে যাত্রী ও মোটরসাইকেল পারাপার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ এই নির্দেশনা অমান্য করে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে দিনের পাশাপাশি রাতেও প্রকাশ্যে অবৈধ এসব ট্রলার চলাচল করতে দেখা গেছে। ফলে আবারও এই নৌপথে বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে গত আড়াই মাসে চার দফায় বেশির ভাগ সময় ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ গত ২৬ অক্টোবর এই নৌপথে পরীক্ষামূলক ফেরি ছাড়া হলেও নৌ-চ্যানেলে স্রোত বেশি থাকায় পরবর্তীতে ফেরি চলাচল বানিজ্যিক ভাবে শুরু হয়নি। বর্তমানে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকলেও দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা ঢাকামুখী ও রাজধানী ঢাকা থেকে আসা দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মানুষ যাতায়াতের সুবিধার্থে এই নৌপথে স্পিডবোট ও লঞ্চে সেবা চালু আছে। তবে সন্ধ্যার পরে স্পিডবোট ও লঞ্চ বন্ধ থাকলেও পদ্মায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ইঞ্চিত চালিত প্রায় শতাধিক অবৈধ ট্রলার। রাতের পাশাপাশি তারা দিনেও প্রকাশ্যে উভয় ঘাট থেকে যাত্রী ও মোটরসাইকেল পারাপার করছে।

শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাংলাবাজার ঘাটে ফেরি বন্ধ থাকায় মোটরসাইকেল আরোহীরা এই ঘাটে না এসে তারা চলে যাচ্ছে ৫০০ মিটার দূরে পুরাতন কাঁঠালবাড়ি ঘাট। এই কাঁঠালবাড়ি ঘাটেই সারিসারি ট্রলার। আধা ঘন্টা পরপর শিমুলিয়া থেকে ছেড়ে আসা যাত্রী ও মোটরসাইকেল বোঝাই করা ট্রলার কাঁঠালবাড়ি ঘাটে এসে ভিড়ছে। কাঁঠালবাড়ি ট্রলার ঘাট থেকেও আধা থেকে এক ঘন্টা পরপর শিমুলিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে ইঞ্চিন চালিত ট্রলারগুলো। প্রতিটি ট্রলারে ২৫ থেকে ৩০টি মোটরসাইকেল বহন করা হয়। একই সঙ্গে প্রায় শতাধিক যাত্রীও থাকে ট্রলারে। দিনের বেলায় প্রতি ট্রলারে একটি মোটরসাইকেল পারাপারের জন্য ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। রাতে নেওয়া হচ্ছে এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা।

শিমুলিয়া থেকে ট্রলারে আসা মোটরসাইকেল চালক মিঠু বলেন, ‘আমার জরুরি কাজে খুলনা যাবো। তাই এই পথে বাইক নিয়ে আসছি। ফেরি না পেয়ে বাধ্য হয়েই ৫০০ টাকা দিয়ে ট্রলারে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হইছি। এ ছাড়া আর কোন পথ ছিল না।’

সিলেট থেকে বরিশাল মোটরসাইকেল যোগে যাচ্ছে রফিকুল ইসলাম। ট্রলার থেকে নেমে তিনি বলেন, ‘ফেরি বন্ধ, সাতরে তো আর পদ্মা পার হওয়া যাবে না। তাই ঝুঁকি, ভয় নিয়েই আসতে হলো।’

মাদারীপুরগামী সাইদুল কবির নামে এক যাত্রী বলেন, ‘ঢাকা থেকে গাড়ি নিয়ে শিমুলিয়া ঘাটে এসে দেখি ফেরি বন্ধ। তাই বাধ্য হয়ে ট্রলারে পার হইছি। জরুরি না হলে এভাবে আসতাম না। তা ছাড়া আমার মত অনেকেই এই ঝুঁকি নিয়ে আসতেছে। কেউ তো তাদের থামাচ্ছে না।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নৌপথে ট্রলারে যাত্রী ও মোটরসাইকেল পারাপারের নৈপথ্যে রয়েছেন শিবচর উপজেলার ভাইস-চেয়ারম্যান ও কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বি এম আতাউর রহমান ওরফে আতাহার ও ট্রলার ঘাটের ইজারাদার সজীব হাওলাদার। ট্রলার ঘাটে মালিকপক্ষ থেকে শ্রমিক সবাই এই দুই নেতার কথা মত ট্রলার ঘাট থেকে ছাড়ে। এই ট্রলার ঘাটেও সুপারভাইজার রয়েছে। শিফট অনুযায়ী রাসেল মল্লিক ও আক্তার মুনশি নামে এই দুজন এই ঘাট নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকেন। প্রতি ট্রলার ঘাটে আসা ও ছেড়ে যাওয়া মাত্রই তাদের দুই থেকে তিন হাজার টাকা কমিশনও দিতে হয়। কমিশনের একটি ভাগ ট্রাফিক পুলিশ ও নৌপুলিশকে দিতে হয় বলে জানান ট্রলার মালিকরা।

বড় একটি ট্রলারের শ্রমিক সাইদুল মাদবর বলেন, ট্রলার বুইঝা মোটরসাইকেল লোড দেওয়া হয়। কোনটায় ২০টা আবার কোনটায় ৩০টা। পুলিশসহ ঘাটে যারা আছে তাদের ম্যানেজ করে ঘাট মালিকরা। তা ছাড়া আমরা এখানে সবাই ভাইস চেয়ারম্যানের লোক। আমাদের যেভাবে চালাতে বলে, আমরা সেভাবেই ট্রলার চালাই।’

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ট্রলারে এক মালিক বলেন, ‘ঝুঁকি থাকলেও একটি ট্রলারে ৩০টি মোটরসাইকেল সুন্দর ভাবে বহন করতে পারে। ৩০টি মোটরসাইকেলে ট্রলারে কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা ওঠে। তিন হাজার টাকা তেল খরচ যায়। এ ছাড়াই লাইন ম্যান, ঘাটের সুপারভাইজার, ট্রাফিক পুলিশ, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ডদেরও টাকা দিতে হয়। সব মিলিয়ে ট্রলার মালিক এক টিপে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা পায়। বাকি টাকা ভাগবাটায়ারা হয়ে যায়।’

অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে শিবচর উপজেলার ভাইস-চেয়ারম্যান বি এম আতাউর রহমান মুঠোফোনে বলেন, ‘ট্রলার ঘাটের ইজারাদার সজীব হাওলাদারের নেতৃত্বে এসব ট্রলার চালানো হচ্ছে। ওরা যারা আমার কথা বলে থাকলে মিথ্যে বলেছে। আমি এসবের সাথে জড়িত নই।’
কাঁঠালবাড়ি ট্রলার ঘাটের ইজারাদার সজীব হাওলাদার বলেন, ‘কিছু ট্রলার লুকিয়ে লুকিয়ে মানুষ ও মোটরসাইকেল পারাপার করে। যা আমি জানিও না। আমি ঘাটে লোক পাঠিয়ে বিষয়টি দেখছি।’

কাঁঠালবাড়ির ট্রলার ঘাটটি পাশেই ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়। পুলিশের চোখের সামনে ট্রলারে যাত্রী ও মোটরসাইকেল পারপারের বিষয় জানতে চাইলে ঘাটের দায়িত্বরত পুলিশ পরিদর্শক জামালউদ্দিন বলেন, ‘ট্রলারগুলোয় যাত্রী ও মোটরসাইকেল পার হওয়ার বিষয় আমরা জানিনা। এগুলো নৌপুলিশ নিয়ন্ত্রণ করে।’

জানতে চাইলে ঘাটে দায়িত্বরত চরজানাজাত নৌপুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আব্দুল রাজ্জাক মুঠোফোনে বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশের চোখের সামনে ট্রলার ঘাট। তারা এমন অনেক কিছুই দেখেও দেখে না। আমাদের লোকবল কম। নেই জলযানও। তাই এসব ট্রলার বন্ধে আমরা সেভাবে কাজ করতে পারছি না।’

স্থানীয়রা জানায়, নৌপুলিশ, ঘাট কতৃপক্ষের চোখের সামনেই ট্রলার চলাচল করছে। এসব বন্ধে মাঝেমধ্যে নৌপুলিশের অভিযান দিলেও পরে আবার ট্রলারগুলো ছেড়ে দিচ্ছে। ফলে কোন ভাবেই ট্রলারে যাত্রী ও মোটরসাইকেল পরিবহন বন্ধ হচ্ছে না।

বিআইডব্লিউটিএ বাংলাবাজার ঘাটের ট্রাফিক পরিদর্শক আক্তার হোসেন বলেন, ‘ট্রলার ঘাটের ইজারা থাকলেও যাত্রী ও মোটরসাইকেল পারাপার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এসব বন্ধের জন্য আমরা পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অফিসিয়াল চিঠি দিয়েছি। তারা কার্যত পদক্ষেপ না নিলে অবৈধ এসব ট্রলার চলাচল ঠেকানো যাচ্ছে না।’

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: