সোনাতলার শান্তি নিবাসে বৃদ্ধ ও এতিম শিশুদের মাথাগোঁজার ঠাঁই পাবে
প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া) :
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার পল্লীতে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠছে শান্তি নিবাস। এলাকার অসহায় দরিদ্র বৃদ্ধ ও এতিমরা এখানে মাথাগোঁজার ঠাঁই পাবেন। প্রায় ৫শ আসন বিশিষ্ট ব্যতিক্রমধর্মী এই প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় খেটে খাওয়া অভাবী দরিদ্র মানুষের মনে হতাশা কেটেছে।
জানা গেছে, উপজেলা সদর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার পশ্চিমে বালুয়া ইউনিয়নের সমজাতাইড় গ্রাম। ওই গ্রামের অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ নাজিম উদ দৌলাহ্, মাহামুদ আখতার শাহীম ও প্রভাষক মাহমুদুল হাসান রতনের যৌথ উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে বৃদ্ধ ও এতিমদের জন্য নিরাপদ আবাস ও পূর্ণবাসন কেন্দ্র। যার নাম দেওয়া হয়েছে সার্প শান্তি নিবাস। একই এলাকার আনোয়ারুল ইসলাম মন্ডল ২০১৪ সালের গরীব দুস্থদের সহায়তা ও মাথাগোঁজার ঠাঁই করে দেওয়ার জন্য তার পৈত্রিক সম্পত্তি সার্প শান্তি নিবাসের নামে দান করে দেন। সার্প ফাউন্ডেশনের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান সার্প শান্তি নিবাস। প্রথমে ২০ জন দরিদ্র বৃদ্ধ ও এতিম সন্তানেরা মাথাগোঁজার ঠাঁই পেলেও পর্যায়ক্রমে ৫শ জন বৃদ্ধ ও এতিম সন্তানেরা ওই আবাসে স্থান পাবে। এজন্য ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় ৫বিঘা জমি ক্রয় করা হয়েছে। সেখানে গড়ে তোলা হচ্ছে অত্যাধুনিক আবাসন ভবন। বর্তমানে ওই নিরাপদ আবাসে ১৫টি কক্ষ রয়েছে। আবাসন কক্ষ ৮টি, স্বাস্থ্যসেবা কক্ষ, প্রসাধন কক্ষ, রন্ধন শালা, ভোজন শালা, বিনোদন কক্ষ, পাঠদান কক্ষ, প্রশাসনিক কক্ষ, অযু ও গোসল খানা। প্রতিটি কক্ষে ২টি করে বেড, ২টি টেবিল, ২টি চেয়ার, ২টি জাগ, ২টি গ্লাস, ২টি প্লেট, ২টি বাটি। ইতিমধ্যেই ওই নিরাপদ আবাসে এলাকার দরিদ্র অসহায় বৃদ্ধ ও এতিমরা মাথাগোঁজার ঠাঁই পেয়েছে। এসব দরিদ্র নারী-পুরুষ ও বালক-বালিকাদের দেখাশোনা ও তদারকি করার জন্য ৬ জন বেতন কর্মচারি রয়েছে। ওই নিরাপদ আবাসে আশ্রয় নেওয়া লোকজনদের প্রতিদিন সকালের নাস্তার জন্য খাবার দেওয়া হয় পাউরুটি। সঙ্গে রয়েছে বাটার-জেলি, কলা, সিদ্ধ ডিম। আবার বেলা ১১টায় বিস্কুট, মুড়ি বাটি। দুপুরে সাদা ভাত, সবজি, ডাল ও ছোট মাছ। বিকেলের নাস্তা কমলা, দুধ। রাতের খাবার সাদা ভাত, সবজি, ভর্তা, পেঁপের ডাল। তবে খাবারের তালিকা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করে পরিবেশন করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট নিবাস সূত্রে জানা গেছে। বসবাসকারীদের প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে নির্ধারিত চিকিৎসক দ্বারা নজর দারিতে রাখা হয়।
শান্তি নিবাসে বসবাসকারী সোনাতলা উপজেলার দক্ষিণ আটকরিয়া গ্রামের গোলেজা বেওয়া (৬৫) ও বালুয়াপাড়া এলাকার জমিলা বেওয়া (৬৫) জানান, এক সময় খাওয়া পড়া, চিকিৎসা ও থাকার জন্য চিন্তা করতে হতো। সন্তান-সন্তানদি থাকলেও অভাব অনটনের কারণে তাদের দেখভাল করতো না। এখানে আসার পর এখন বাড়ির চেয়ে ভালই আছি।
এ বিষয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ নাজিম উদ দৌলাহ্ জানান, প্রাথমিকভাবে ৩জনসহ আমাদের বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের আর্থিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু করা হয়। বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সার্প ফাউন্ডেশনের আয়োজনে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করায় সন্তানদের অবহেলায় অবহেলিত বৃদ্ধ পিতামাতারা ভালোভাবে খেয়ে পড়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন। এছাড়াও তিনি আরও জানান, আমরা অচিরেই ৫শ সদস্য ধারণ ক্ষমতা বিশিষ্ট শান্তি নিবাস কমপ্লেক্সের কাজ শুরু করে করব।
এ বিষয়ে উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন জানান, এ ধরনের কাজকে প্রথমেই সাধুবাদ জানাই। এটি একটি মহৎ উদ্যোগ। মানুষ যখন বয়ঃবৃদ্ধ হয় তখন সে অসহায়ত্ব অনুভব করে। আর সেই সময় তারা ভালোভাবে খেয়ে পড়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখে। এ সমস্ত বয়স্ক ও বয়ঃবৃদ্ধ মানুষের মাথাগোঁজার ঠাঁই সোনাতলায় হওয়ায় আমি ব্যক্তিগতভাবে আনন্দিত।
এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান বলেছেন, তার নির্বাচনী এলাকায় বৃদ্ধ ও এতিমদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে বসবাসের সুযোগ করে দেওয়ায় সার্প ফাউন্ডেশনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান শান্তি নিবাসের প্রতিষ্ঠাকারীদের সাধুবাদ জানাই। এছাড়াও তিনি আরও জানান, সরকারি অনুদানের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সহায়তা করতে পারলে তিনি আত্মতৃপ্তি পাবেন বলেও জানান।