বাল্যবিবাহ ও শিশু নির্যাতনের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
এম.এস রিয়াদ, (বরগুনা) :
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বাল্যবিবাহ ও শিশুর প্রতি সহিংসতা এবং নির্যাতন। মিডিয়া মনিটরিং এর রিপোর্ট অনুযায়ী গত জুন-২০ থেকে জুলাই-২১ মাস পর্যন্ত ৫৮৪ জন শিশু বিভিন্ন প্রকার নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
এমন সামাজিক ব্যাধির প্রতি তীব্র নিন্দা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বরগুনা জেলা ন্যাশনাল চিলড্রেন টাস্কফোর্স (এনসিটিএফ)।
সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে সিবিডিপির অফিস কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা এনসিটিএফ এর সভাপতি রাইমু জামান।
লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি বলেন- সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও কোভিড-১৯ মহামারী ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যকরী এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে আজ শক্ত হাতে এই কোভিড মোকাবেলা করা সম্ভব হয়েছে।
পত্র পত্রিকা খুললেই শিশু নির্যাতন, শিশুর প্রতি সহিংসতা এবং বাল্যবিবাহের খবর প্রতিনিয়ত দেখা যাচ্ছে। এসব নির্যাতনের খবর দেখে শিশুরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া সম্প্রতি ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয় জেন্ডার অ্যান্ড জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে করোনা কালীন সময়ে দেশে পূর্বের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি শিশু বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে।
বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলে এই বাল্যবিবাহের সংখ্যা পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি বেড়েছে। গবেষণার তথ্যানুযায়ী গত এক বছরে ২৩১ জন শিশু বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। বর্তমানে শিশু ধর্ষণের ঘটনায় ন্যাশনাল চিলড্রেন টাস্কফোর্স (এনসিটিএফ) শিশুরা অত্যন্ত লজ্জিত ও মর্মাহত।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি জেলার সকল শিশুদের পক্ষ থেকে এসব বাল্যবিবাহ ও শিশু নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। সেইসাথে এনসিটিএফ সারাদেশের শিশুদের পক্ষ থেকে দেশে প্রচলিত বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ এবং শিশু আইন ২০১৩ এর সঠিক ও কার্যকরী বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিশু নির্যাতন ও বাল্য বিবাহ এর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
পত্রটিতে উল্লেখ করা হয়েছে- বর্তমান সরকার জাতীয় শিশু নীতি ২০১১ এবং শিশু আইন ২০১৩ চূড়ান্ত করার সময় এনসিটিএফ এর অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছিল।
শিশুরা বাল্যবিবাহ ও শিশু নির্যাতনের সাথে জড়িত সকল ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে। সেই সাথে ভবিষ্যতে কেউ শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করতে সাহস না পায় সে ব্যবস্থাও গ্রহণ করার জন্য জোর দাবি জানান সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি।
ন্যাশনাল চিলড্রেন টাস্কফোর্স (এনসিটিএফ) জাতীয় পর্যায়ের একটি শিশু সংগঠন এবং শিশুদের দ্বারাই গঠিত ও পরিচালিত। এই সংগঠনটি বাংলাদেশে ৬৪ জেলায় শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে চলেছে।
শিশু অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ১৯ টি চাইল্ড পার্লামেন্ট অধিবেশন করেছে। সেখানে মন্ত্রিপরিষদের বিভিন্ন মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় উপস্থিত ছিলেন এবং শিশুদের সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সরকার জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ ও জাতীয় শিশু নীতি ২০১১ ও শিশু আইন ২০১৩ তৈরিতে শিশুদের মতামত গ্রহণ করেছেন। সেজন্য এনসিটিএফ এর সকল শিশুরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন।
এনসিটিএফ এর সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ও সাংবাদিক জাকির হোসেন মিরাজ নিরাপদ সড়ক চাই ও দৈনিক এশিয়া বরগুনা জেলা প্রতিনিধি আর অভি ও দৈনিক দ্বীপাঞ্চল পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার বিডি ফিন্যান্সিয়াল নিউজ ২৪ ডটকম এর বরগুনা জেলা প্রতিনিধি মোঃ সানাউল্লাহ রিয়াদ।
এসময় সাংবাদিকরা শিশু নির্যাতন ও বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে বিভিন্ন প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। যার মধ্যে অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিয়ে প্রতিটি বিদ্যালয়ে যথাযথ কাউন্সিলিং করা উল্লেখযোগ্য। সেই সাথে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো অধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করারও পরামর্শ দেন তারা।
এনসিটিএফ এর সভাপতি রাইমু জমান উপস্থাপন প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে বিষয়গুলো নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন, শিশু অধিদপ্তর ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে ছোট্ট পরিসরে হলেও কাউন্সিলিংয়ের বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তবে সামাজিক ব্যাধির জন্য দারিদ্রতাকে তিনি অধিক পরিমাণে দায়ী করেন। তাই সঠিক পরিমাণে কর্মক্ষেত্র তৈরি করার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সেইসাথে শিশু আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের জোর দাবি জানান।