সম্পত্তির লোভে বাবাকে অপহরণের চেষ্টা, ছেলেসহ গ্রেপ্তার ৭
প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া) :
বগুড়ার শাজাহানপুরে সম্পত্তির লোভে মোস্তফা রাশেদ (৫০) নামে এক অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যকে রাতের আঁধারে হাত, পা বেধে মাইক্রোবাস যোগে অপহরণের সময় ছেলেসহ ৭জনকে হাতেনাতে আটক করেছে থানা পুলিশ।
সোমবার (৪ অক্টোবর) রাত ১২ দিকে কার নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, মোস্তফা রাশেদের ছেলে খালেদ মাহমুদ (২৫), রাজশাহী জেলার বোয়ালমারি উপজেলার বালিয়া পুকুর গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে মোসাদ্দেকুর রহমান (৩৬), একই উপজেলার কয়েরদাড়া বিলপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল কাসেমের ছেলে আব্দুস সাত্তার (৩৬), একই জেলার কাশিয়াডাঙ্গা উপজেলার মুন্সিপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে মোহাম্মদ অলি (৪২) এবং পাবনা জেলা সদরের পৈলানপুর গ্রামের আরিফুল ইসলামের ছেলে নোমান আরাফাত (২৫), ছাতিয়ানপুর গ্রামের শহিদ আলীর ছেলে আজিজুর রহমান সুমন (৪৪) ও লস্করপুর গ্রামের রেহেজ শেখের ছেলে মাইক্রোবাসের চালক মানিক শেখ (৩২)।
এঘটনায় মঙ্গলবার বিকেলে অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য মোস্তফা রাশেদ বাদি হয়ে শাজাহানপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
মোস্তফা রাশেদ বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার পোড়াপাইকড় গ্রামের মৃত আবেদ আলী প্রামানিকের ছেলে। তিনি বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে সার্জেন্ট পদে চাকরি করতেন। অবসর গ্রহণের পর বর্তমানে তিনি শাজাহানপুর উপজেলার মাঝিড়াপাড়া গ্রামের বসতবাড়ি নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন।
মোস্তফা রাশেদ জানান, ২০১৫ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন। দুই বছর থেকে তার স্ত্রী ও বড় ছেলে খালেদ মাহমুদের সঙ্গে তার সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ চলে আসছে। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি ও মানসিকভাবে অত্যাচার, নির্যাতন শুরু করলে দুই মাস আগে শাজাহানপুর উপজেলার মাঝিড়াপাড়া গ্রামে ৩ শতক জমির উপর ৫ কক্ষ বিশিষ্ট বসতবাড়ি ক্রয় করেন। সেখানে এক কক্ষে নিজে থাকেন অপর ৪ কক্ষ ছাত্রাবাস হিসেবে ভাড়া দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি সিএনজি চালিত অটোটেম্পু চালিয়ে জীবনধারণ করছেন। এমতাবস্থায় গত সোমবার (৪ অক্টোবর) সন্ধার দিকে অজ্ঞাতনামা নাম্বার থেকে ফোন করে বলেন বাংলালিংক কোম্পানী থেকে আপনার গিফট এসেছে সি-ব্লক এলাকায় এসে নিয়ে যান। কিন্তু সময় না পাওয়ায় তিনি যেতে পারেননি। একই দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে একই নাম্বার থেকে ফোন করে মাঝিড়া স্ট্যান্ড থেকে গিফট নিয়ে যেতে বললে মাঝিড়া স্ট্যান্ডে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর রাত ১২ টার দিকে আবারো ফোন করে বলেন গিফট নিয়ে আপনার বাসায় আসছি। একথা বলার পরপরই তার ছেলে খালেদ মাহমুদসহ ৬-৭ জন জোরপূর্বক বাসায় ঢুকে তাকে রশি দিয়ে হাত, পা বেধে কোলে করে রাস্তায় নিয়ে এসে মাইক্রোবাসে তোলে। এসময় ছাত্রাবাসের ছেলেরা এগিয়ে এসে মাইক্রোবাস আটকে দিয়ে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা পুলিশের লোক বলে পরিচয় দেন। এরপর সন্দেহ হলে ছাত্রাবাসের ছেলেরা পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে টহল পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন এবং ৭জনকে আটক করেন।
তিনি আরো জানান, তাকে অপহরণ করে হত্যার পর লাশ গুম করে তার সম্পত্তি গ্রাস করা পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এঘটনায় তিনি শাজাহানপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
এদিকে মোস্তফা রাশেদের স্ত্রী আনিছা বেগম জানান, তার স্বামী একজন মানসিক রোগী। তার স্বামীর চিকিৎসার জন্য পাবনা জেলা সদরের মাসুমবাজার এলাকার আলোর পথ মানসিক/মাদকাশক্তি নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য বড় ছেলে খালেদ মাহমুদ নিরাময় কেন্দ্রের লোকজনের সহায়তায় তাকে নিয়ে যেতে এসেছিলেন।
আলোর পথ মানসিক/মাদকাশক্তি নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক আলভি আদনান জানান, রোগীকে নিতে এসে তার লোকজন ফেঁসে গেছেন।
শাজাহানপুর থানার ওসি আব্দুল্রাহ আল মামুন জানান, খবর পেয়ে অপহরণের পূর্ব মূহুর্তে মাইক্রোবাসের ভিতর হাত-পা বাধা অবস্থায় ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং ছেলেসহ ৭জনকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে মামলা দায়ের শেষে গ্রেপ্তারকৃত আসামীদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।