বগুড়া জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্ত
প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া) :
বগুড়া জিলা স্কুলের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। এতে করে অন্য ছাত্রদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বিদ্যালয়টিতে করোনার উপসর্গ নিয়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে বলেও বিদ্যালয়ের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি পালন শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে স্বাস্থ্য বিধি মানছেন না কেউ। ছুটির ঘন্টা বাজতেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। থাকছে না কোন বিধি নিষেধ।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সামান্য ঢিলেঢালাভাব পেলেই শিক্ষার্থীরা স্কুল থেকে বেরিয়ে স্কুলের ড্রেস পরে পাশের হোটেলে বসে অথবা স্কুলের সামনে ফুচকা,ঝালমুড়ি ও আচারের দোকান থেকে স্বাস্থ্য বিধি উপেক্ষা করে খাবার কিনে খাচ্ছে। গতকাল রবিবার বেলা ১২টায় দেখা গেছে, একটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে স্কুলের পাশে ফুচকা খেতে খেতে গল্পে মত্ত থাকতে দেখা যায়। করোনাকালে শহরের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ঝাল মুড়ি ও চানাচুরের দোকান বসেছে। তারা ফেরি করে এই সব খাবার বিক্রি করছে। শিশু শিক্ষার্থীরা তা কিনতে ভিড় করছে। সামাজিক সংস্পর্শে কারণে করোনা ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বগুড়া জিলা স্কুলে ১০ম শ্রেণির দ্ইু শিক্ষার্থীর মধ্যে একজনের নমুনা পরীক্ষায় পজেটিভ ও একজনের উপসর্গ থাকায় হোম কোয়ারেন্টিনে আছে বলে জানিয়েছে প্রধান শিক্ষক শ্যাম পদ মুস্তফী।
তিনি আরো জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার প্রথম দিকে স্কুলে উপস্থিতি ছিল ৮৫ শতাংশ। এখন উপস্থিতি নেমে এসেছে ৭০ শতাংশে। স্কুলে অনুপস্থিত থাকলে শ্রেণি শিক্ষকরা অভিভাবকদের ফোন করে খোঁজখবর নিচ্ছেন। তিনি জানান, এভাবে খবর নিতে গিয়ে দশম শ্রেণির এক ছাত্র করোনা পজেটিভের সংবাদ পওয়া গেছে। ১০ শ্রেণির অন্য এক ছাত্রের অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে সে জানায়, তার দাদা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। সে জ¦র অনুভব করছে। তাই সে হোম আইস্যুলেশনে আছে। তবে সে নমুনা পরীক্ষা করেনি।
এদিকে বেশ কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, অনেক কোচিং সেন্টারে স্বাস্থ্য বিধি উপেক্ষা করে গাদাগাদি করে কোচিংয়ের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। তা থেকে সামাজিক কন্ট্রাটে করোনার ঝুঁকি অনেক খানি বেড়ে যাচ্ছে। এসব কোচিং সেন্টারগুলোতে কারো মুখে মাস্ক নেই। করোনা সংক্রমণের অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। তারা চান না যে আবার স্কুল বন্ধ হোক। শিক্ষার্থীরা আবার ঘরে আবদ্ধ হয়ে পড়ুক।
বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন জানান, স্কুলের মধ্যে স্বাস্থ্য বিধি কড়াকড়িভাবে পালন করা হচ্ছে। স্কুল থেকে বেরিয়ে গেলে আমাদের দেখার কিছু থাকে না।
বগুড়া সদর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা ও কোভিড কমিটির সদস্য ডা. সামির হোসেন মিশু জানান, করোনা মহামারিতে শিক্ষার্থীরা স্কুল থেকে বেরিয়ে গিয়ে হোটেল অথবা স্কুলের সামনে ঝাল-মুড়ির দোকানে না যায়, সেজন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই সঙ্গে স্কুলের সামনে ফেরিওয়ালাদের বসতে দেওয়া ঠিক হবে না। তার ব্যবস্থাও স্কুল কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।
বগুড়া জেলা সিভিল সার্জন জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে যারা ফেরি করে খাবার বিক্রি করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক কন্ট্রাক্ট যাতে না ঘটে তার জন্য শিক্ষক ও অভিভাবকদের সচেতন থাকাতে হবে।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক জানান, এসব বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে। করোনা সংক্রমণের হার নিম্নমুখি হওয়ায় কেউ আর স্বাস্থ্য বিধি মানছেন না। তবে বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নজরদারিতে রাখতে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট দিয়ে অবস্থার উন্নতি করতে হবে।