আমদানি বেশি ক্রেতা কম পাবনার পশুর হাটগুলোতে
রনি ইমরান (পাবনা):
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার শরৎনগর উত্তরবঙ্গের বৃহৎ কোরবানির পশুর হাটে শনিবার গরু, ছাগল, ভেড়ার প্রচুর আমদামি ছিল। সে অনুযায়ী বিক্রি না হওয়া ও আশান্বিত দাম না ওঠায় দুপুরের আগেই ফিরতে দেখা যায় অনেক বিক্রেতাকে। হাটের পাড়ে বড়াল নদী ঘাটে কোরবানি পশুদের নৌকায় তুলতে দেখা যায় বেশ কিছু বিক্রেতাকে। গরুর ব্যাপারী হাফিজ মন্ডল জানায়, হাটে বিক্রেতা বেশি ক্রেতা কম । দামও তেমন উঠছে না, তাই অন্য হাটে যাবো। মূলত পাবনা জেলার শরৎনগর হাটে পাবনার ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর সহ বিভিন্ন গ্রাম ও চলনবিল এলাকার প্রচুর গবাদীপশুর আমদানি হয়।আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে স্থানীয় ক্রেতাদের পাশাপাশি দেশের দূর দূরান্ত থেকে অনেক ব্যাপারীরাও আসে এই হাটে কোরবানির পশু কিনতে।
শনিবার দুপুরে সরজমিনে দেখা যায়, হাটে গরু ছাগল ভেড়ার আমদানিতে হাটের মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। ভাঙ্গুড়া, উপজেলার অষ্টমনিষা থেকে দুইটি ছাগল নিয়ে এসেছেন মধ্যবয়সী তোয়াব বিশ্বাস তিনি বলেন, আধা ঘন্টা হয়ে গেলো ক্রেতা আসেনি আর কিছুক্ষণ দেখে বাসায় ফিরবো। তিনি দুইটি মাঝারি আকারের ছাগল বিক্রি করবেন তার দাম হাঁকাচ্ছেন প্রতিটি ১২ হাজার করে। কিন্ত ক্রেতার দেখা মিলছে না। পাবনার দাশুড়িয়া থেকে ৪০ টি ছাগল হাটে বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন ব্যাপারী নূর মোহম্মদ তিনি বলেন, আজকে আমদানি অনেক বেশি এতো ছাগল নিয়ে চিন্তায় আছি। ছাগলের পাশাপাশি ভেড়ার আমদানিও ছিল বেশ। চলনবিল এলাকার তরুণ মহসিন একটি ভেড়া বিক্রি করবেন,ভেড়াটির দাম চান ৮ হাজার টাকা সেখানে এক ক্রেতা ভেড়াটি ৬ হাজার টাকায় কিনে নিতে চায় কিন্তু মহসিন শেষ পর্যন্ত তা দিতে রাজি হয়নি। মহসিন ৭ হাজার টাকা আশা করেন। বলছিলেন, মোঃমহসিন। তবে হাট কতৃপক্ষ বলছে, ক্রেতারা সাধারণত শেষ বেলাতে বেশি কোরবানি পশু কেনে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিক্রিও বেড়ে যাবে।
পাবনায় কোরবানির হাটগুলোতে পশু আমদানি অনেক বেশি। পাবনা সদরের আরিফপুর হাজিরহাট, টেবুনিয়া, পুষ্পপাড়া, ঈশ্বরদীর আওতাপাড়া, অরনকোলা, বেড়ার চতুর হাট, কাশিনাথপুর, চাটমোহরের রেলবাজার, ভাঙ্গুড়ার শরৎনগরসহ বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা যায় নানা দামের কোরবানির পশু উঠেছে। খামারিরা বলছে,করোনা ও লকডাউনের ধাক্কা পড়েছে গবাদি পশুর হাটগুলোতে। ফলে এ বছর লোকসানের আশঙ্কায় আছে খামারি ও চাষীরা। কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, এবারের কঠোর লকডাউনে পাবনায় গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া কম আমদানি হচ্ছে। আবার হাটে ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। প্রতি বছরই পাবনা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা গরু-মহিষ কিনে থাকে। এ বছর পাবনা অঞ্চলে দেশের বিভিন্ন জেলার কোরবানি পশু সরবরাহের জন্য প্রস্তুত হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ গরু-মহিষ। হাটগুলোতে নসিমন, করিমনে দূর-দূরান্ত থেকে পায়ে হেঁটে গরু নিয়ে হাটে আসছেন অনেকে। বাস চলাচল খুলেছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারী ও পাইকাররা আসছে গরু কিনতে।
সেলন্দা গ্রামের খামারি আজম খান তার খামারের সবচেয়ে বড় ষাঁড় গরুটি বিক্রি করতে হাটে নিয়ে এসেছেন। আজম বলেন, দাম ধরেছি তিন লাখ টাকা। স্থানীয় কিছু ক্রেতা ও ব্যাপারী দাম বলছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। বেড়া উপজেলার পায়না গ্রামের আসাদুল নামের গরু ব্যবসায়ী বলেন, গরু বিক্রি করতে না পারায় সংসার চালানো নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে।
হাটগুলোয় সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। কয়েকটি হাটের ইজারাদার বলেছেন, সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মাইকিং করা হচ্ছে।কিন্ত মানুষ তা মানতে চাচ্ছে না। হাটে মাস্ক ব্যবহার করতে ক্রেতা-বিক্রেতাকে অনুরোধ করেছেন পাবনা সদরের হাজিরহাট কতৃপক্ষ। তারা প্রতিনিয়ত হাটে জনসাধারণকে স্বাস্হ্যবিধি মানতে বলছেন এবং হাটে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানায় কতৃপক্ষ।