বেক্সিমকোর সুকুক বন্ডের আবেদন শুরু ২৫ জুলাই
পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড (বেক্সিমকো) শরীয়াহভিত্তিক বেসরকারি সুকুক বন্ডের আবেদনের দিন নির্ধারণ করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই জন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১৯ জুলাই। আর বিনিয়োগকারীদের বন্ড বুঝিয়ে দেওয়া হবে ৩১ আগস্ট। কোম্পানিটির এই বন্ডের জন্য আবেদন দুই মেয়াদে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে গ্রহণ করা হবে। বেক্সিমকো ১৯৮৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। বর্তমানে কোম্পানিটি বি ক্যাটাগড়িতে লেনদেন হচ্ছে। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন এক হাজার কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৮৭৬ কোটি ৩১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। মোট শেয়ারের ৩০ দশমিক ৫৫ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ১৫ দশমিক ১৮ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং ৫২ দশমিক ৮০ শতাংশ রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। জানা গেছে, প্রাইভেট প্লেসমেন্ট, সাধারণ ও বর্তমানে শেয়ারহোল্ডারদের আবেদন গ্রহণ করা হবে ২৫ জুলাই থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত। অন্যদিকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন গ্রহণ করা হবে ১৭ আগস্ট থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত।
বেক্সিমকোর এই সুকুকের ইস্যু ম্যানেজার, অ্যারেঞ্জার ও অ্যাডভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস লিমিটেড এবং অগ্রণী ইক্যুইটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। আর ট্রাস্টি হিসেবে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)।
সুকুক কী? : এটি প্রচলিত সাধারণ বা ট্রেজারি বন্ড নয়। বিশ্বব্যাপী চালু আছে, এমন একটি শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি বন্ড এটি। এ ধরনের বন্ড ‘সুকুক’ নামে পরিচিত। সুকুক একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে সিলমোহর লাগিয়ে কাউকে অধিকার ও দায়িত্ব দেওয়ার আইনি দলিল। সুকুক ইসলামি বন্ড চালু হলে সরকারের অর্থ সংগ্রহের নতুন একটি উৎস তৈরি করেছে।
এর আগে বিএসইসির ৭৭৯তম নিয়মিত কমিশন সভায় তিন হাজার কোটি টাকার সুকুক বন্ডের অনুমোদন দেওয়া হয়। বেসরকারি পর্যায়ে প্রথমবারের মতো সুকুক বন্ড ছেড়ে বেক্সিমকো লিমিটেড এই টাকা তুলবে।
বিএসইসি সূত্র মতে, প্রতিষ্ঠানটি ৫ বছর মেয়াদি সুকুক বন্ড ছেড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। এ টাকায় বেক্সিমকো তাদের টেক্সটাইল ব্যবসা সম্প্রসারণ করবে। পাশাপাশি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। বেসরকারি পর্যায়ে এটিই প্রথম সুকুক বন্ড। এর আগে সুকুক বন্ড ছেড়ে সরকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ৮ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়। এরই মধ্যে দুই দফায় সেই অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে।
বন্ডটির ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে। বাকি ৭৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে। প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে কোম্পানিটি যে টাকা সংগ্রহ করবে, তার মধ্যে ৭৫০ কোটি টাকা নেওয়া হবে বিদ্যমান শেয়ারধারীদের কাছ থেকে। বাকি ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে অন্যান্য বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে।
সুকুকটির প্রতিটি ইউনিটের অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালু নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। বন্ডটির ন্যূনতম লট হবে ৫০টি ইউনিটে। একজন বিনিয়োগকারী ন্যূনতম ৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন এ বন্ডে। বন্ডের টাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পরিবেশ উন্নয়ন ও সংরক্ষণে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বিএসইসি। এ কারণে বন্ডটিকে গ্রিন বন্ড হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। বিএসইসি বলছে, এটিই দেশের প্রথম গ্রিন বন্ড।