শিরোনাম

South east bank ad

‘স্মার্ট হাইওয়ে’ : উদ্ভাবন আগৈলঝাড়ায় , বাস্তবায়ন হবে জাপানে

 প্রকাশ: ১০ জুন ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

‘স্মার্ট সোলার হাইওয়ে অ্যান্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট’ ব্যবহার করে একটি সড়ক থেকে তিন উপায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। যার মাধ্যমে আধুনিক শহর চালু রাখা যাবে। সড়ক সংস্কারে বাড়বে না বাজেট। উল্টো দুই লেনের এক কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ ব্যয় কমে আসবে। এই সড়কের কোনো অংশ সংস্কারের দরকার হলে পুরো সড়ক সংস্কারের প্রয়োজন নেই। বরং ক্ষতিগ্রস্ত অংশটুকু মেরামত করলেই চলবে।

বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ‘স্মার্ট সোলার হাইওয়ে অ্যান্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট’ উদ্ভাবন করেছেন কলেজছাত্র মোসলেউদ্দীন সাহান। তার উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তি জাপানের দুই কিলোমিটার সড়কে পাইলট প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে। সাহানের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি দেশে পরিচিতি না পেলেও স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার জিতে দেশের বাইরেও প্রদর্শিত হয়েছে। ২০১৮ সালের এপ্রিলে জাপানের সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এজেন্সির আমন্ত্রণে সাকুরা সায়েন্স এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন সাহান। সেখানে নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানীরাও অংশ নেন।

মোসলেউদ্দীন সাহান আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেকমো ডা. মোখলেছুর রহমানের ছেলে ও গৈলা ইউনিয়নের কালুপাড়া এলাকার বাসিন্দা।

মোসলেহ উদ্দীন সাহান জানান, স্মার্ট সোলার হাইওয়ে অ্যান্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রযুক্তি জাপানের দুই কিলোমিটার সড়কে পাইলট প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে। সুফল মিললে তারা বৃহৎ পরিসরে কাজ শুরু করবে বলে আমাকে জানানো হয়েছে। ভবিষ্যতে এই স্মার্ট সোলার হাইওয়ে আরো বেশি উন্নীতকরণ করার ইচ্ছা আছে তার যাতে করে দেশ ও দেশের মানুষ উপকৃত হয়। ভবিষ্যতে এই স্মার্ট সোলার হাইওয়েতে ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম এবং ডাস্ট সেন্সরসহ আরো কিছু প্রযুক্তি যুক্ত করতে চায়। যাতে করে মানুষ আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করতে পারে। তাছাড়া এই স্মার্ট সোলার হাইওয়ের আশেপাশের প্রতিটি বাসা-বাড়ি থেকে শুরু করে কলকারখানা শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং প্রতিটি স্থানের যতগুলো ইলেকট্রিক লাইন আছে সবগুলি স্মার্ট ফোনের সাহায্যে কন্ট্রোল করা যায়।

স্মার্ট সোলার হাইওয়ে এন্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট উদ্ভাবন বিষয়ে সাহান বলেন, আমাদের দেশে মূলত কয়লা, পিছ ও বিটুমিন দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হয়। যখন কয়লা পিচ দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয় তখন অবশ্যই কয়লা ও পিচ পোড়াতে হয়। কয়লা এবং পিচ যখন পোড়ানো হয় তখন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন গ্যাস যেমন- কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন-মনোক্সাইড উৎপন্ন হয় যা মোটেও পরিবেশ বান্ধব নয়। যে জ্বালানি দিয়ে কয়লা ও পিচ পোড়ানো হয় তাতে যদি সালফারের যৌগ থাকে তাহলে তা পরিবেশের জন্য এ্যাসিড বৃষ্টি সৃষ্টিকারী গ্যাস যেমন- সালফার-ডাই-অক্সাইড, সালফার-ট্রাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে যা মোটেও পরিবেশ বান্ধব নয়। কিন্তু এ স্মার্ট সোলার হাইওয়ে তৈরি করতে এরকম পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোন ধরনের পদার্থ ব্যবহার করা হয় না।
সাহান ২০১৬ সালে সরকারি গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় স্মার্ট সোলার হাইওয়ে এন্ড পাওয়ার প্লান্ট প্রজেক্টের কাজ শুরু করে ২০১৭ সালে প্রজেক্টের কাজ শেষ করে। সাহান ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ এবং ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় মাহিলাড়া ডিগ্রী কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পয়েন্ট নিয়ে পাশ করে।

উদ্ভাবক সাহান জানান, রাস্তা তৈরি করতে ন্যানোটেকনোলজি দ্বারা তৈরিকৃত সোলার সেল ব্যবহার করা হয় যা মূলত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন। তাছাড়া স্মার্ট সোলার হাইওয়ে হচ্ছে একটি ‘পরিবেশ বান্ধব এবং নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস’। এই রাস্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে এটা যে কোন মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। তাছাড়া এই রাস্তা তিনটি উপায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম। সূর্যের আলোর মাধ্যমে, মানুষের চলাচলের সময় যে ঘর্ষণ উৎপন্ন হয় সে ঘর্ষণের মাধ্যমে এবং মানুষের ও গাড়ির প্রেসারকে কাজে লাগিয়ে।
এই রাস্তা প্রাথমিক অবস্থায় ৩০ টন পর্যন্ত চাপ নিতে সক্ষম। আর সোলার হাইওয়ে দিয়ে যখন বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে তখন মানুষের তড়িৎপৃষ্ট হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ এখানে ম্যাট্রিক্স টেকনোলজি, পলিক্লিস্টালিন টেকনোলজি এবং পলিকার্বনেট টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে যে কারণে ঘর্ষণের সময় যে ইলেকট্রনের যে ক্ষয় হয় তা দ্বারা মানুষের তড়িৎপৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

এই রাস্তার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে এই রাস্তা দ্বারা সূর্যের আলোর মাধ্যমে ২ কি. মি. রাস্তা দ্বারা ৬,৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব এবং মানুষের চলাচলের মাধ্যমে ও গাড়ির প্রেসারকে কাজে লাগিয়ে পিজো ইলেক্ট্রিক এফেক্ট এর মাধ্যমে আলাদা ভাবে আরও বছরে ১৫০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।

এ বিষয়ে আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আবুল হাশেম বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্মার্ট সোলার হাইওয়ে এন্ড পাওয়ার প্লান্ট উদ্ভাবক কলেজ ছাত্র মোসলেউদ্দীন সাহানের এই প্রজেক্ট বাংলাদেশকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। তার এই প্রজেক্টকে আরও আধুনিকভাবে তৈরি করার লক্ষ্যে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দরকার।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: