শিরোনাম

South east bank ad

প্যাডেল রিকশা ও সিরাজ ইসলামের জীবন

 প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

কায়সার সামির:

রাতের খাবার খেয়ে মুন্সীগঞ্জ শহরের লঞ্চঘাট এলাকা থেকে বাসার উদ্দেশে ফিরছিলাম। তখন ১১ টা বাজে। বারটা ছিলো শুক্রবার। পথিমধ্যেই ব্যাটারীচালিত অটোরিকশা ও মিশুকের পাশে দেখতে পেলাম পায়ে চালিত এক রিকশাচালকে। নাম তার সিরাজ ইসলাম। বয়েস প্রায় ৪৫। বর্তমান সে যোগিনীঘাটে থাকে। সিরাজ রিকশার সিটে বসে বসে ঝিমুচ্ছে। আর কিছুক্ষণ পর পর লঞ্চঘাট দিয়ে যাত্রী আসলেই বলে ভাই যাবেন কোথায়? আসেন আমার রিকশায়। মিশুকের ভাড়াই আমাকে দিয়েন। কিন্তু কেউই তার রিকশায় উঠে না। প্রায় আধঘন্টা চললো তার রিকশায় যাত্রী তোলার ব্যর্থ চেষ্টা। কে উঠবে তার পায়ে চালিত রিকশায়। একেতো হজবরল অবস্থা। তার ওপর ধীরগতি। সভ্যতার এমন আধুনিক যুগে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মিশুকে ছাড়া কে বা উঠবে এই পায়ে চালিত পুরনো রিকশায়।

তখন আমি নিজ থেকেই তার রিকশায় উঠে বললাম চলো মামা যাই। তখন সে বলল কোথায় যাবেন মামা। তখন বললাম তোমাকে নিয়ে একটু গুরে আসি। আমার কথা শুনে সে খুশি হয়ে একটু হাসলো। রিকশা চলার সময় সিরাজের সাথে কথা বলে জানলাম তার জীবন ও পায়ে চালিত রিকশার কথা।

সময়টা ছিলো ৯০ সাল। তার দু'এক বছর এদিক সেদিক হবে। তখন সিরাজ ১৫ বছর। এই সময় তার বাবা মারা যায়। এর পর থেকে এক ভাই ও মা নিয়ে চলে তার সংসার নামের বাস্তবতার সংগ্রাম। সে সময় থেকে জীবিকার তাগিতে সে রিকশা চালাতে শুরু করে। মা আর ভাই নিয়ে বেশ ভালই চলছিল তাদের জীবন। ২০০০ সালে যখন সে বিয়ে করবে, ঠিক তখন তার জীবনে নেমে আসে প্যারালাইস নামের এক দুর্যোগ। পরে তার আর বিয়ে করা হয়নি। এই প্যারালাইসে তার ডান সাঈদ পঙ্গু হয়ে যায়। এমন করে প্রায় ১০ বছর সে বিছানায় পড়ে ছিলো। সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে সে পুনরায় আগের মত ভালো হয়ে তার আগের পেশা রিকশা চালাতে শুরু করলো। এখন সিরাজের বয়স ৪৫। বিয়ে করেনি এখনো।

সংসার ও বিয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে সে বলেন, বউ, বাচ্চা ও সংসার করার স্বপ্ন সকলের থাকে। এর ব্যতিক্রম না আমি। কিন্ত যৌবনটাই গেলো বিছানায় শুয়ে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে। সেখানে বিয়ে আবার কি? আল্লাহ আমাকে সুস্থ করেছে তাতেই আমি অনেক খুশি। এখন বিয়ে করার ইচ্ছেও নেই। তাছাড়া এই বয়সে কে বা মেয়ে বিয়ে দিবে আমার কাছে। এখন কার সাথে থাকেন? তখন সিরাজ বলেন, মা আর ভাইয়ের সাথে নানার বাড়িতে থাকি। মার অংশে দুই ভাই মিলে ঘর বানিয়ে থাকি। প্রতিদিন খাবার বাবদ ভাইকে একশত টাকা দেই। দাদার বাড়ি ইদ্রাকপুর, ওই খানে থাকা হয় না।

আধুনিক যুগে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও মিশুক না চালিয়ে পায়ে চালিত রিকশা কেনো চালান? তখন সে এই প্রতিবেদককে বলেন, এতো টাকা দিয়ে মিশুক কিনার সামর্থ্য আমার নেই। তাছাড়া এগুলো বেশি দুর্ঘটনা ঘটায়। তিনি আরো বলেন, ৩ বছর আগে ভালোই চলছিল পায়ে চালিত রিকশা। কদরও ছিল বেশ। কিন্তু ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মিশুক বেড়ে যাওয়া দিনের বেলায় কেউ পায়ে চালিত রিকশায় উঠতে চায় না। তাই দিনের বেলায় অন্যের কাজ করে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পাই। আর রাতে রিকশা নিয়ে বের হয়। তখন অটো ও মিশুক চার্জ না থাকায় শহরে তেমন বেশি মিশুক চলে না। যাত্রীরা তখন বাধ্য হয়ে রিকশায় উঠে। রাত ৮ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত চালিয়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পাই।

তিনি নারায়ণগঞ্জ শহরের মতো যেন মুন্সীগঞ্জ প্যাডেল চালিত রিকশা ব্যতীত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মিশুক না চলার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানান। না হয় আধুনিক যুগে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মিশুকের ফলে দিন দিন দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সেই প্যাডেল রিকশা। বাড়বে সড়ক দুর্ঘটনা।

শুধু সিরাজ ইসলা নয় তার মতো হাজার সিরাজের চাওয়া কতটুকু পূরণ হবে তার উত্তর জানা নেই। কিন্তু বেঁচে থাকুক তাদের চাওয়া, পাওয়া ও তাদের স্বপ্ন। আধুনিকতার ছোঁয়ায় যেন বাংলার জমিন থেকে না হারিয়ে যায় প্যাডেল রিকশা এটাই কামনা সকলের।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: