ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ওয়েবিনার : তামাক ছেড়ে সুস্বাস্থ্য গঠনের আহ্বান অধ্যাপক ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্তের
৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে আজ ২৬ মে ২০২১ (বুধবার) সকাল ১১:৩০ টায় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি) আয়োজিত “তামাকের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও যুবসমাজের ভূমিকা” শীর্ষক একটি ওয়েবিনারে বক্তারা বলেন, তামাক একটি নেশা সৃষ্টিকারী পণ্য। পৃথিবীর অর্ধেক শিশুই নিকোটিনপূর্ণ বাতাসে শ্বাস নিচ্ছে। সুস্থ পরিবেশে শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য তামাককে বর্জন করতে হবে।
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত এবং সভাপতিত্ব করেন টিসিআরসির প্রেসিডেন্ট ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান, সংসদ সদস্য ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্ট্রি বোর্ডের মাননীয় ভাইস-চেয়ারম্যান ডাক্তার এস. কাদির পাটোয়ারি এবং আন্তজাতিক সংস্থা দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক এ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন । প্রায় তিন শতাধিক অংশগ্রহনকারীদের নিয়ে ওয়েবিনারটি জুম সফটওয়ারের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড-এর ভাইস চেয়ারম্যান ডাঃ এস কাদের পাটোয়ারী বলেন, “তামাকের কোন ভালো দিক নেই। এরপরেও তামাকের ব্যাপারে কিছু ভুল ধারনা এবং পারিবারিক ও মানষিক নানা ধরনের হতাশার কারণে কিশোর তরুণেরা অল্প বয়সেই জড়িয়ে পড়ছে ধুমপানে। আর ধুমপান থেকেই আসলে সব রকম নেশার দিকে যাত্রা শুরু হয়। তিনি তরুণদেরকে তামাক থেকে দূরে থেকে একটি সুস্থ সুন্দর জীবন গড়ার আহ্বান জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, এমপি বলেন, তামাক কোম্পানি গুলো তরুণদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে এবং মানুষরা বুঝে উঠতে পারছে না যে তারা টাকা দিয়ে বিষ কিনে খাচ্ছে। তামাক পণ্যের উপরে প্রচুর করারোপ করা প্রয়োজন যাতে তা তরুণদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। ধুমপান করা কোন স্মার্ট বিষয় নয়- এটা তরূণ প্রজন্মকে বুঝতে হবে। তামাক বিরোধী আন্দোলনকে সফল করতে গেলে তরুণদের অংশ গ্রহণ প্রয়োজন । এছাড়া রাষ্ট্রকেও বিশেষজ্ঞদের মতামত গুরত্ব সহকারে প্রয়োগে নিয়ে যেতে হবে। তিনি যোগ করেন, ধুমপায়ীরা সরকারি চাকরি পাবে না- এই মর্মে নীতিমালা প্রণয়ন করা হলে তরুণদের মাঝে ধূমপানের প্রবণতা অনেকটাই কমে আসবে।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, ধুমপানের ফলে পৃথিবী ব্যাপী প্রতি বছর ৫.৪ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়, ২০৩০ সাল নাগাদ এ মৃত্যু ১১ মিলিয়নে গিয়ে দাঁড়াবে। স্রেফ একটা তামাক পাতায় ১৯ টি ক্যান্সারের উপাদান থাকে। চুল থেক পায়ের নখ পর্যন্ত মানব শরীরের এমন কোন অংশ নেই যা ধুওম্পানের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়না। পরিপাকতন্ত্রের ক্ষতি, ফুসফুসের ক্যান্সার সহ নানা ধরনের ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ এমনকি স্থায়ীভাবে অন্ধত্ব বরণ পর্যন্ত করতে হতে পারে ধুম্পয়ানের ফলে। পাবলিক প্লেসে একজনের ধুমপানের ফলে অন্যরা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগলে সেটা অপরাধ। কিশোর- তরুণদের ধুমপান আসক্তির দায় তাদের পরিবারের সদস্যদের উদাসীনতার উপরও বর্তায়। স্রেফ একদিন সিগারেট না খেলেই হার্ট এটাকের সম্ভাবনা কমে যাবে। তিনি তার উপস্থাপনায় তামাকের বিভিন্ন স্বাস্থ্য ক্ষতি উল্লেখের পাশাপাশি পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ক্ষতিও তুলে ধরেন। মূল উপস্থাপনা শেষে তিনি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং তামাককে বর্জন করার ও তামাক নিয়ন্ত্রণে তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আর্ন্তজাতিক সংস্থা দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক (বাংলাদেশ) এ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন বলেন, তামাক কোম্পানি গুলো নিজেদের ব্যবসার প্রসার এবং টিকিয়ে রাখার জন্য নানাবিধ ভ্রান্ত ধারণা প্রচার করে। এর ফলে মানুষ তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব ও দিকগুলো সম্পর্কে বিভ্রান্ত হয়। অত্যন্ত সূক্ষভাবে এই কাজগুলো করা হয়, যাতে সাধারণ মানুষ তামাকপণ্য গুলোকে তেমন একটা ক্ষতিকর বলে মনে না করে। আমাদেরকে তাদের এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে সরে আসতে হবে। তামাক বা নেশার দিকে ধাবিত না হয়ে, তরুণ যুবকেরা যেন শারিরীক ব্যায়াম ও সঠিক খাদ্যাভাসে নিজেদের জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলে সে বিষয়ে সুপরামর্শ দেন তিনি। তিনি ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকে পাবলিক হেলথ নিয়ে এধরনের সচেততামূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সাধুবাদ জানান।
টিসিআরসির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফারহানা জামান লিজার সঞ্চালনায় উক্ত ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণে ন্যাশনাল ও লোকাল পর্যায়ে কর্মরত বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকর্তাবৃন্দ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীবৃন্দ। তরুণদের তামাক বর্জন করার আহ্বান জানিয়ে ও এবারের তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য “আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি, জীবন বাঁচাতে তামাক ছাড়ি” স্লোগানের মাধ্যমে ওয়েবিনারটি শেষ করা হয়।