কাঠালিয়ায় একযুগ ধরে গাছে তাঁর ঝুলিয়ে চলছে ৬’শ পরিবারের বিদ্যুৎ সাপ্লাই, ঝুঁকিতে এলাকাবাসী
পুরাতন লাইন মেরামতের বরাদ্ধ অর্থ লুটপাটের অভিযোগ
মোঃ রাজু খান (ঝালকাঠি):
গ্রাম হবে শহর, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, শতভাগ বিদ্যুৎ প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রæতি থাকলেও ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ৫টি গ্রামে একযুগেরও বেশি সময় ধরে জীবন্ত গাছের সাথে খোলা তার ঝুলিয়ে ৬’শ পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া কচুয়া ফিডারের বীনাপানি-কচুয়া ও দোগনা এক ফেইজ লাইন বহু বছর ধরে বিদ্যমান থাকায় চরম ভোগান্তি ও ঝুঁকিতে রয়েছে ওই সব গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। ঝুঁকিপূর্ণ এসব বৈদ্যুতিক লাইনে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটেছে। এদিকে পুরাতন লাইন মেরামতের জন্য একাধিকবার অর্থ বরাদ্ধ আসলেও কাজ না করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বরাদ্ধকৃত টাকা হরিলুট করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
কাঠালিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের পশ্চিম আউরা, বড় কাঠালিয়া গ্রামে তিন-চার কিলোমিটার এলাকায় প্রায় ২শ পরিবারকে বিদ্যুতের খোলা তাঁর জীবন্ত গাছের সাথে ঝুলিয়ে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আমুয়া ইউনিয়নে ছোনাউটা গ্রামের ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোঃ লিঃ কাঠালিয়া অফিস ৮০টি পরিবারকে জীবন্ত গাছে গাছে বিদ্যুতের তাঁর ঝুলিয়ে সংযোগ দিয়েছেন। শৌলজালিয়া ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের খেয়াঘটা এলাকায় একইভাবে প্রায় ২শ পরিবার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় সংযোগ দেয়া হয়েছে। প্রতি মাসে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী পরিবারগুলো নিয়মিত বিল পরিশোধ করে আসলেও সব সময় তারা আতংকে থাকছেন, কখন যেন তাঁর জড়ানো ওই জীবীত গাছগুলো বিদ্যুতায়িত হয়ে দূর্ঘটনার শিকার হন। অপরদিকে জীবন্ত গাছে ঝুলান্ত লাইন থাকার কারণে কোন গাছ ও গাছের ডাল-পালাও কাটতে বা বিক্রি করতে পারছেন না গাছ মালিকরা। এছাড়া গাছে গাছে খোলা তারের বিদ্যুৎ লাইন গুলোতে লো-ভোল্টেজ হওয়ায় কারণে কোনভাবে বাতি-ফ্যান জ্বালানো সম্ভব হলেও অন্য কোন ইলেকট্রনিক সামগ্রী চালানো সম্ভব নয়, লো-ভোল্টেজের কারণে ফ্রিজ, টিভি, ফ্যানসহ অন্যান্য বৈদ্যুতিক মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয় স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ শামীম মোল্লা জানান, কাঠালিয়া ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোঃ লিঃ অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে বহুবার বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা সত্তে¦ও তারা কোন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে নষ্ট করছেন। অথচ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা, গ্রাম হবে শহর, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। কিন্তু আমাদের জীবন নিয়ে তামাসা করছেন বিদ্যুৎ বিভাগ।
ছোনাউটা ফাজিল মাদ্রাসার প্রভাষক ফেরদৌস জমাদ্দার জানান, ২০০৭ সালে নভেম্বরে প্রলয়ংকারী সিডরে বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুৎ লাইন বিধ্বস্ত হয়, পরে স্থানীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে জীবিত গাছে গাছে তাঁর বেঁধে ওই এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ দেন। এলাকাবাসী মনে করেছিলেন এটি সাময়িক সময়ের জন্যে দেয়া হয়েছে। দীর্ঘ বছরেও স্থানীয়দের জোর দাবি সত্বেও অবস্থার কোন পরিবর্তন না হওয়ায় ভূক্তভোগীরা দিন কাটছেন ঝুঁকি ও আতংকে। সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগ অতিদ্রæত সময়ের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এ সব ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ বা মেরামতের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ ও ভূক্তভোগী গ্রাহকদের পরস্পর বিরোধী বক্তব্যের সঠিক তথ্য খুঁজতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্যের সন্ধান মিলেছে। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে নির্ভযোগ্য একটি সূত্রে জানাগেছে, পুরাতন ঝুকিপূর্ণ এসব বিদ্যুৎ লাইন সংস্কারের জন্য অনেক পূর্বেই যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লাইটপোষ্ট, তার ও সংঞ্জরাদিসহ একাধিকবার অর্থ বরাদ্ধ হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কমকর্তা ও ঠিকাদারের সিন্ডিকেট করে পুরাতন লাইন মেরামত না করে বরাদ্ধকৃত টাকার ইকুভমেন্ট দিয়ে নতুন গ্রাহককদের সংযোগ দিয়ে এ সিন্ডেকেট চক্রটি এ খাত থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যে কারণে ঝুঁকিপূর্ণ এক ফেইজ ও জীবন্ত গাছে গাছের বিদ্যুৎ লাইন বছরের পর বছর ধরে পড়ে আছে।
উপজেলা আবাসিক প্রকৌশলী দিপক মিস্ত্রী জানান, এটি পূর্নবাসন প্রকল্পের আওতার কাজ। তবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে, অল্প সময়ের মধ্যে কাজ শুরু হতে পারে।
এ বিষয় নির্বাহী প্রকৌশলী বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ঝালকাঠির মোঃ আঃ রহিম জানান, ঝুঁকিপুর্ণ বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণের জন্যে ইতোমধ্যেই টেন্ডারের মধ্যে মালামাল ক্রয় করা হয়েছে, লাইট পোষ্টগুলো কাঠালিয়ায় চলে গেছে। তাঁর এবং ফিটিং এর অভাব থাকায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। তবে আশাকরি ঈদের পরে কাজ শুরু হবে”।
বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রকল্প বিভাগ-৪, ইএএপিডিএসপি) মোঃ রাশেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে পুর্নবাসন প্রকেল্পর অনুমোদন পায়। পরবর্তীতে ২০২০ সালের শেষের দিকে মালামাল ক্রয়ের দরপত্র আহবান করা হয়। করোনাসহ বিভিন্ন জটিলতার কারণে ভারত থেকে মালামাল এখনও আসেনি। তাই মালামাল সংকট থাকায় পুর্নবাসন কাজ চলছে না। তবে ছোনাউটার বিষয়টি আলাদা, এটি আমাদের এ প্রজেক্টের ৯-১০ বছরের আগের একটি বিষয়। দীর্ঘ সময়েও ওই জায়গার সমাধান কি কারণে হয়নি সেটা আমার জানা নেই।