আন্তর্জাতিক কলের সীমা ১.৭ সেন্ট করার প্রস্তাব

বিদেশ থেকে আসা আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন রেটের সর্বোচ্চ সীমা ১ দশমিক ৭ সেন্ট বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। প্রস্তাবনাটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদনের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। বিটিআরসি ও মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কলরেটের সর্বোচ্চ সীমা বা সিলিং রেট ১ দশমিক ৭ সেন্ট নির্ধারিত হলে আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটররা এখনকার মতো দুই সেন্টে আর বিদেশি কল আনতে পারবে না। তবে নতুন এ প্রস্তাবে কল টার্মিনেশন রেটের সর্বনিম্ন সীমা (ফ্লোর রেট) আগের মতো দেড় সেন্ট রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া কলরেট নির্ধারণে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি তৈরির প্রস্তাবও করেছে বিটিআরসি। এই কমিটিতে অর্থ মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বিটিআরসিসহ খাত-সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই কমিটি ‘কস্ট মডেলিং’ পদ্ধতিতে কলরেট কত হবে তা নির্ধারণ করবে।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে কলরেটের সর্বনিম্ন সীমা (ফ্লোর রেট) তিন সেন্ট থেকে কমিয়ে দেড় সেন্ট করা হয়। ওই সময় সর্বনিম্ন রেট অর্থাৎ দেড় সেন্টেই রাজস্ব ভাগাভাগির নিয়ম রেখে আন্তর্জাতিক কল আনার নতুন পদ্ধতি পরীক্ষামূলকভাবে চালুর অনুমোদন দেওয়া হয়। রাজস্ব ভাগাভাগির এ পরীক্ষামূলক পদ্ধতি কয়েক দফায় চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এরপর প্রায় দেড় মাস চলে গেলেও নতুন কোনো নির্দেশনা দিতে পারেনি সরকার।
কল টার্মিনেশন রেট যখন তিন সেন্ট ছিল, তখন কলরেট বাড়ানোর সর্বোচ্চ সীমা (সিলিং রেট) ছিল সাড়ে তিন সেন্ট। কিন্তু কলরেট কমিয়ে দেড় সেন্ট করার সময় আর সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। কলরেটের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে না দেওয়ার এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বাড়তি আয় করছে আইজিডব্লিউ অপারেটররা। এর ফলে আইজিডব্লিউ অপারেটররা দুই সেন্টে কল আনলেও আগের দেড় সেন্টেই সরকারসহ অন্যান্য পক্ষের সঙ্গে আয় ভাগাভাগি করছে।
দেশে বর্তমানে মোট ২৩টি আইজিডব্লিউ থাকলেও বাড়তি সুবিধা নিয়ে ব্যবসা করছে সাত অপারেটর। এ সাত অপারেটরের প্রতিষ্ঠিত আইজিডব্লিউ অপারেটর ফোরাম (আইওএফ) দুই স্তরে দেশে আন্তর্জাতিক কল নিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক কল নিয়ন্ত্রণের জন্য এই সাত আইজিডব্লিউ নিজেরাই একটি কমন ইন্টারন্যাশনাল পয়েন্ট (সিআইপি) তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে শুধু তারাই বিদেশি কল গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি এক মিনিট কল থেকে যে আয় হয়, তার ৪০ শতাংশ সরকার, ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ আইসিএক্স, ২২ দশমিক ৫ শতাংশ মোবাইল অপারেটর আর বাকি ২০ শতাংশ আইজিডব্লিউ কোম্পানিগুলো পেয়ে থাকে।
আইওএফ চালুর পর প্রথমদিকে আন্তর্জাতিক কলের পরিমাণ বাড়লেও চলতি বছরের ২৪ আগস্ট কলরেট বেড়ে দুই সেন্ট হওয়ার পর গত তিন মাসে আন্তর্জাতিক কল সংখ্যা তিন কোটি মিনিট কমে গেছে। এ কলের প্রায় পুরোটাই অবৈধ ভিওআইপি হয়ে দেশে ঢুকছে।
বিটিআরসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশে বৈধ পথে দৈনিক কল আসছে সাড়ে সাত থেকে আট কোটি মিনিট। এর আগে গত ২৩ আগস্ট পর্যন্ত দেশে বৈধ কলের সংখ্যা ছিল সাড়ে ১০ কোটি মিনিট। আর চলতি বছরের জুন-জুলাইয়ে এ সংখ্যা ছিল প্রতিদিন গড়ে ১১ থেকে ১২ কোটি মিনিট।