South east bank ad

বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস আজ: ৮৫ শতাংশ সংক্রমণ বান্দরবান জেলায়

 প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২২, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   বিশেষ সংবাদ

বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস আজ: ৮৫ শতাংশ সংক্রমণ বান্দরবান জেলায়

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম

বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ১৩ জেলার ৭২ উপজেলায় মরণব্যাধি ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ বান্দরবান জেলায়। দেশের মোট ম্যালেরিয়া সংক্রমণের ৮৫ ভাগই এই জেলায়। যার ৭৫ শতাংশ সংক্রমণ আবার জেলার আলীকদম, থানচি ও লামা উপজেলায়। এ ছাড়া পার্বত্য অন্য দুটি জেলা, সিলেট বিভাগের ৪ জেলায়, ময়মনসিংহ বিভাগের ৪ জেলা এবং কক্সবাজারে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ রয়েছে। তবে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়ি জেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি। দেশে ম্যালেরিয়ার ব্যাপক সংক্রমণ এখনো উপস্থিত। এমনকি অনেক দেশে ম্যালেরিয়া ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। এই কঠিন বাস্তবতায় ২০৩০ সালের মধ্যে রোগটি নির্মূল্যের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘উদ্ভাবনী কাজে লাগাই ম্যালেরিয়া রোধে জীবন বাঁচাই’। এই সেøাগান বাংলাদেশের জন্য খুবই সময়োপযোগী। কারণ বাংলাদেশ ম্যালেরিয়া নির্মূলে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং ব্যবহার করছে। উদ্ভূত কোডিও-১৯ পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবারের বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবসে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ম্যালেরিয়া কার্যক্রম চলমান রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির তথ্যমতে, বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ১৩টি জেলার ৭২টি উপজেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ রয়েছে। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান- এই তিন পার্বত্য জেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুহার সর্বাধিক। এই তিন জেলাকে উচ্চ ম্যালেরিয়াপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে গণ্য করা হয়। গ্লোবাল ফান্ড টু ফাইট এইডস, টিবি অ্যান্ড ম্যালেরিয়ার আর্থিক সহায়তা বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া কার্যক্রমকে আরও সম্প্রসারিত, শক্তিশালী ও গতিশীল করেছে। বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া নির্মূলের জন্য জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কার্যক্রমের সঙ্গে ব্র্যাকসহ ৪টি এনজিওর সমন্বয়ে গঠিত একটি কনসোর্টিয়াম যৌথ অংশীদারত্বের মাধ্যমে কাজ করছে। ম্যালেরিয়াপ্রবণ অঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় ম্যালেরিয়ার সেবা বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্যমতে, ২০০৮ থেকে ২০২১ সালে দেশে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা ও ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু হ্রাসের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। ২০০৮ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ম্যালেরিয়াজনিত অসুস্থতা শতকরা ৯৪ ভাগ এবং মৃত্যু শতকরা ৯৩ ভাগ কমেছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ মোট ম্যালেরিয়া রোগী ছিল ৭ হাজার ২৯৪ জন। ওই বছর রোগটিতে মৃত্যু হয় ৯ জনের। উচ্চ ম্যালেরিয়াপ্রবণ তিন পার্বত্য জেলায় মোট ম্যালেরিয়া রোগীর ৯৪ শতাংশ পাওয়া গেছে। ম্যালেরিয়া নির্মূলের আওতাধীন ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলের ৪ জেলায় ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১০ জন। আশা করা যাচ্ছে, এই জেলাগুালায় ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাক্তন মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এমএ ফয়েজ বলেন, দেশ থেকে ম্যালেরিয়া চূড়ান্তভাবে নির্মূল করতে হলে তৃণমূলে কর্মতৎপরতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে প্রান্তিক পর্যায়ে অধিক পরিমাণ মাঠকর্মী নিয়োগ করতে হবে।

জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার-ডিপিএম ডা. ইকরামুল হক বলেন, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ঝুঁঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিনামূল্যে দীর্ঘমেয়াদি কীটনাশকযুক্ত মশারি প্রদান করা হচ্ছে। জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির পক্ষ থেকে ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১২.৭ মিলিয়নের বেশি দীর্ঘমেয়াদি কীটনাশকযুক্ত মশারি বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ম্যালেরিয়া নির্মূলের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পার্শ্ববর্তী, সীমান্তবর্তী দেশসমূহে চলাচলকারীর মধ্যে ইমপোর্টেড ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া।

বাংলাদেশ থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূলে সরকার যে পদ্ধতিতে কাজ করছে, তার সঙ্গে আরও কিছু পদ্ধতি যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার। গতকাল রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বলেন, বাংলাদেশের একটা টার্গেট আছে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে ম্যালেরিয়ামুক্ত ঘোষণা করার। সেটা বাস্তবায়ন করতে হলে, বিশেষ ধরনের মশারি বিতরণের পাশাপাশি আরও কিছু পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। ম্যালেরিয়ার যে ওষুধ, সেটাও কোথাও কোথাও রোগ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে নতুন ওষুধের সন্ধান করতে হবে। তা ছাড়া মশারি ব্যবহারের নিয়মেও পরিবর্তন আনতে হবে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, এখনো দেশকে ম্যালেরিয়ামুক্ত ঘোষণা করা যায়নি। কিন্তু আশা করছি শিগগির ঘোষণা করা যাবে। ঘোষণার জন্য জয়েন্ট মনিটরিং ভিজিট হয়। সেটার মাধ্যমে ডিক্লারেশন দেওয়া হয়। সামনে এ রকম কয়েকটি ভিজিট আছে। তারপরও আশা করছি ঘোষণা করতে পারব।

ডা. ইকরামুল হক বলেন, আগামী মে মাসে একটা জয়েন্ট মনিটরিং মিশন হবে। সারাবিশ্বের ম্যালেরিয়া রোগ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পাঁচ বছর পরপর এই মিশন করা হয়। সেই মিশনে আমরা কীভাবে পর্যায়ক্রমিকভাবে নির্মূল ঘোষণা করতে পারি, সেটার অফিসিয়াল উদ্যোগ গ্রহণ করছি। এভাবে পর্যায়ক্রমে ঘোষণা করার পর একসময় আমরা গোটা দেশ ম্যালেরিয়া নির্মূল ঘোষণা করব। এভাবে পর্যায়ক্রমে ঘোষণা দেওয়া হলো যারা ম্যালেরিয়া নির্মূলে কাজ করছেন, তারাও কাজে উৎসাহিত হবেন।

BBS cable ad