আজ বিশ্ব পার্কিনসন দিবস

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
১১ এপ্রিল, আজ বিশ্ব পার্কিনসন দিবস। প্রতি বছর ১১ এপ্রিল এই দিনটি পালিত হয়। এটি এমন একটি রোগ, যার কারণে ব্যক্তি চলাফেরা শক্তি হারিয়ে ফেলে, মাংসপেশী শক্ত হতে শুরু করে, হাতে-পায়ে এবং শরীরে কম্পন দেখা দেয়। ষাটোর্ধ্বদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ বেশি দেখা দেয়। আবার নারীদের তুলনায় ৫০ শতাংশ অধিক পুরুষরা এই রোগে গ্রস্ত। এই রোগের লক্ষণ এতটাই সূক্ষ্ম যে প্রাথমিক পর্যায় ধরা পড়ে না। বেশ কয়েক সপ্তাহ অথবা কয়েক মাস কেটে যাওয়ার পর এই রোগটি ধরা পড়ে। ততদিনে লক্ষণের তীব্রতাও বৃদ্ধি পায়।
রোগের কারণ- মস্তিষ্কের একাংশের তন্ত্রিকা কোষ বা নিউরন্স নষ্ট হতে শুরু করলে এই রোগ দেখা দেয়। ডোপামাইন নামক এক রসায়ন উৎপাদন করে নিউরন্স। তবে নিউরন্সগুলো নিষ্ক্রিয় হতে শুরু করলে ডোপামাইনের উৎপাদন কমে যায় এবং ব্যক্তি পার্কিনসন রোগের শিকার হয়ে পড়ে। ডোপামাইনের অভাবে নিউরনের মধ্যেকার যোগাযোগও হ্রাস পেতে থাকে। উল্লেখ্য এই নিউরনই ব্যক্তির অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো চলাফেরা বা কাজ করার ইঙ্গিত সরবরাহ করে থাকে। এই রোগের লক্ষণ অত্যন্ত সূক্ষ্ম। তিনটি লক্ষণ এই রোগের সঙ্গে জড়িত। হাত কাঁপা থেকে শুরু হয় এই রোগ, তার পর ক্রমশ ধীরগতির হাঁটাচলা এবং মাংসপেশী শক্ত হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
পরিবারে ষাটোর্ধ্ব সদস্য থাকলে এ বিষয় লক্ষ্য রাখা উচিত। এজিং রিসার্চ রিভিউস নামক এক জার্নালে প্রকাশিত সমীক্ষা অনুযায়ী, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কে নানান ধরণের চাপ সৃষ্টি হয়, যা নিউরন্সগুলোকে দুর্বল করে তোলে। প্রাথমিক পর্যায় সতর্ক হলে এবং চিকিৎসা শুরু করলে এই রোগের কবল থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক এই পার্কিনসনের কিছু লক্ষণ সম্পর্কে-
কম্পন
আঙুল, হাত ও পা কাঁপা এই রোগের সবচেয়ে প্রাথমিক ও সাধারণ লক্ষণ। সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি আরো বিকট হয়।
ঘুম
ব্যক্তি তার মুভমেন্টের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। পার্কিনসন ফাউন্ডেশন অনুযায়ী, এই রোগের ফলে ঘুমের সমস্যাও দেখা দেয়। নিজের গতিবিধিতে নিয়ন্ত্রণ হারানোর আগেই ব্যক্তির মধ্যে ঘুমের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
ছোট হাতের লেখা
হাতের লেখায় পরিবর্তনও এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। পার্কিনসন রোগীদের মধ্যে মাইক্রোগ্রাফিয়া বা ছোট হাতের লেখার সমস্যা দেখা দেয়। বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেল্থ অ্যান্ড নিউরোসায়েন্সেস-এর একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, পার্কিনসন রোগীগের মধ্যে ভেলোসিটি, অ্যাকসিলারেশন ও সাবলীলতার ক্ষেত্রে অ্যাবনর্মালিটি দেখা দিতে পারে।
কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন
এই রোগের অ্যাডভান্সড স্টেজে ব্যক্তির কথাবার্তা অস্পষ্ট ও অপরিষ্কার হয়ে পড়ে। রোগের প্রথম দিকে কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন দেখা দেয়। এ সময় ব্যক্তিদের কণ্ঠস্বর কর্কশ হয়ে পড়ার প্রবণতা দেখা দেয় এবং তারা ধীরে কথা বলতে শুরু করেন।
ভাবভঙ্গি
পার্কিনসনের প্রাথমিক পর্যায় ব্যক্তির ভাবভঙ্গিতে স্থিরতা দেখা দেয়। সমন্বয় ও ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার কারণে এমন হয়ে থাকে।
ডিমেনশিয়া নিউরোসাইকোলজিয়া নামক একটি জার্নালে প্রকাশিত যে, অস্থিতিশীল ভঙ্গি এবং চলাফেরায় প্রতিবন্ধকতার কারণে এই রোগে আক্রান্তরা পড়ে যান এবং তাদের মধ্যে নানান অক্ষমতা দেখা দেয়।
এই রোগ থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে কী করবেন-
এই রোগের প্রভাব কমানোর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। মস্তিষ্কেও ব্যায়ামের ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। অ্যারবিক করার ফলে মস্তিষ্কের ফোলাভাব কমে। এর ফলে রোগের লক্ষণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এ ছাড়াও পুষ্টিকর খাবারও জরুরি। মাছ, ডিম, আখরোটের মতো ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ খাবার খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা উচিত। এ ছাড়াও ব্রকোলি, পালক, শাকপাতা যুক্ত সবজি, মটর, কাবলিছোলা খাওয়াও উপকারী। পার্কিনসনে আক্রান্ত হলে অবসাদ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।