South east bank ad

বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে রিলায়েন্স ও আদানি গ্রুপ

 প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারী ২০১৬, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   র‍্যাব

বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে রিলায়েন্স ও আদানি গ্রুপ
ভারতের বড় দুই শিল্প গ্রুপ বাংলাদেশে ১১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। বেশিরভাগ বিনিয়োগ হবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। এর মধ্যে আদানি গ্রুপ ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ও রিলায়েন্স গ্রুপ বিনিয়োগ করবে তিন বিলিয়ন ডলার। রোববার ঢাকার র‌্যাডিসন হোটেলে দু’দিনের বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি ও রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান সমির কে গুপ্তা তাদের সামগ্রিক বিনিয়োগ পরিকল্পনার কথা জানান। একই সঙ্গে বিপুল এই বিনিয়োগ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তারা ভূমি অধিগ্রহণ, প্রয়োজনীয় অনুমোদন ও ছাড়পত্রের বিষয়ে সরকারের সহায়তা চান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। গত বছরের জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় এই দুই গ্রুপ এখানকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সাড়ে পাঁচ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের সমঝোতা চুক্তি করে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল গ্রুপ দু’টির কর্ণধাররা নতুন করে তাদের সামগ্রিক পরিকল্পনা তুলে ধরেন। গ্রুপ দুটির নীতিনির্ধারকরা আগের চেয়ে বিনিয়োগ বাড়ানোর ঘোষণা দেন। আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি বলেন, ভবিষ্যতের সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে আদানি গ্রুপ আট বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ প্রায় ৬৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। এর মধ্যে আগের প্রতিশ্রুতির বাইরে নতুন করে ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার কথা জানান তিনি। বাংলাদেশের জন্য আদানি গ্রুপ এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করবে। এর মধ্যে একটি বাংলাদেশে, অন্যটি ভারতে স্থাপন করা হবে। ভারতে কেন্দ্র স্থাপিত হলেও সেখানকার বিদ্যুৎ শুধু বাংলাদেশেই দেওয়া হবে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সঞ্চালন লাইনসহ এই খাতে পাঁচ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে গ্রুপটি। একই সঙ্গে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে উচ্চ ক্ষমতার সঞ্চালন লাইন করা হবে, যা দিয়ে ভবিষ্যতে আরও বিপুল পরিমাণে বিদ্যুৎ আদান-প্রদান করা সম্ভব হবে। এই লাইন দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক বিদ্যুৎ-বাণিজ্যেও সহায়ক হবে। আদানি গ্রুপের নতুন করে ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের আওতায় ৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হবে। একই সঙ্গে ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের ধামরায় এলএনজি ও এলপিজি টার্মিনাল করা হবে। সেখান থেকে সরাসরি বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে পাইপলাইনে করে গ্যাস দেওয়া হবে। মংলা নিয়ে তাদের বড় বিনিয়োগ পরিকল্পনাও আছে বলে জানান গ্রুপের চেয়ারম্যান। বাংলাদেশে তাদের গ্রুপের বিদ্যমান বিনিয়োগ প্রসঙ্গে গৌতম আদানি বলেন, দুই দশক ধরে এই দেশে তাদের প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ রয়েছে। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের ভোজ্যতেল ‘রূপচাঁদা’ লাখো বাংলাদেশির কাছে জনপ্রিয়। আদানি বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতি সত্যিই বিস্ময়কর। ধারাবাহিকভাবে ৬ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা বিশ্বের কমসংখ্যক দেশের পক্ষেই সম্ভব হয়েছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, দারিদ্র্য বিমোচনে এ দেশের সাফল্য শিক্ষণীয়। এ দেশের উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা দিতে তার গ্রুপের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বিনিয়োগের জন্য জমি অধিগ্রহণ ও বিভিন্ন ধরনের অনুমোদন কার্যক্রমে সরকারের কাছে সহায়তা চেয়েছেন। এই বিনিয়োগ সম্মেলনে রিলায়েন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনিল ধীরুভাই আম্বানির উপস্থিত থাকার কথা ছিল। তবে ঘন কুয়াশার কারণে তাকে বহনকারী বিমান ঢাকায় নামতে পারেনি। সম্মেলনের উদ্বোধনীতে তার লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান সমির কে গুপ্তা। লিখিত বক্তব্যে আম্বানি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, হিমালয় দেখেননি তিনি। তবে ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতায় হিমালয়ের মতো অটল শেখ মুজিবকে দেখেছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুযোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে সামনে থেকে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ দেশের উন্নয়নের অংশীদার হতে পেরে তার গ্রুপ গর্বিত। বাংলাদেশে রিলায়েন্স নামে কোম্পানি গঠনের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে আম্বানি বলেন, তার কোম্পানি এ দেশে এলএনজিভিত্তিক তিন হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করবে। এতে তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে। এর মধ্যে রিলায়েন্সের নিজস্ব সম্পদ থাকবে ৯০ কোটি ডলার। আগামী মার্চের মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে বিনিয়োগবিষয়ক চূড়ান্ত চুক্তি সম্পন্ন করার আশা প্রকাশ করে আম্বানি বলেন, ৩০ মাসের মধ্যে প্রতিশ্রুতির প্রথম ধাপের কাজ শেষ হবে। এই বিনিয়োগে সরাসরি পাঁচ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। এ জন্য তিনি শেখ হাসিনা সরকারের সহযোগিতা চান। এদেশের বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতির প্রশংসা করে রিলায়েন্স গ্রুপের স্বত্বাধিকারী বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। জ্বালানি খাতে যথাযথ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার সক্ষমতা হলো মূল বিষয়। তিনি এ সময় ভারতে রিলায়েন্স গ্রুপের বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরে বলেন, গ্রুপের মোট সম্পদের পরিমাণ এখন ৪০ বিলিয়ন ডলার। বছরে মুনাফা হয় তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি।
BBS cable ad

র‍্যাব এর আরও খবর: