শিরোনাম

South east bank ad

মোটিভেশনে শুরু

 প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২০, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   র‍্যাব

"তোমাকে আমি একটি মহাগুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ার জন্য ডেকেছি। ব্যাটালিয়নের ২০ জন র‍্যাব সদস্যের করোনা টেস্ট করা হয়েছিলো, এর মধ্যে ১৩ জনই পজিটিভ! তারাসহ ভবিষ্যতে এখানে যত করোনা রোগী শনাক্ত হবে তাদের সবার চিকিৎসাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও দেখভালের কাজ ব্যাটালিয়নের সকল অফিসারের পক্ষ থেকে তুমি পালন করবে। নিতে হবে বাহিনীর বাইরের অনেক মানুষের করোনা চিকিৎসার দায়িত্বও। এই ব্যাটালিয়ন তথা বৃহত্তর সিলেট বিভাগকে করোনার হাত থেকে রক্ষার এই মহাঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব আমি তোমার হাতে অর্পণ করতে চাই।" ২৯ মে, রাত সাড়ে ১১টার সময় অফিসে ডেকে র‍্যাব-৯ এর সন্মানিত সিও লে. কর্ণেল আবু মুসা মো. শরীফুল ইসলাম স্যার যখন আমাকে এই কথাগুলো বলছিলেন, চকিতে মনের কোনে ভেসে উঠেছিলো বাবামায়ের মুখ। যখনই কথা হয়, বারবার শুধু বলেন যেন সাবধানে থাকি... যেন সাবধানে থাকি। তারা কি এখন ঘুমিয়ে পড়েছেন? নাকি রাতের খাবার খেয়ে ঘুমুতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন? আমি এরকম একটা হতচ্ছাড়া দায়িত্ব নিয়েছি জানলে তারা নিশ্চয়ই ভীষণ রকম মন খারাপ করবেন। এত এত মানুষ থাকতে কেন আমি, এই প্রশ্ন নিশ্চয়ই তাদেরকে কুড়ে কুড়ে খাবে। এ পর্যন্তই। আমি বিন্দুমাত্র চিন্তা না করে, এই মহাঝুঁকির দায়িত্ব এড়াতে কোনরকম অজুহাত খাড়া না করে তাৎক্ষণিক সেই দায়িত্ব মাথা পেতে নিলাম। প্রতিউত্তরে স্যারকে জানালাম, দায়িত্ব যত ঝুঁকিপূর্ণ আর বিপদসঙ্কুল হোক, সেটি যথাযথভাবে প্রতিপালনে আমি প্রস্তুত রয়েছি। আমিসহ মোট ৬ জনের টিম। সিও স্যারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দেরি না করে সাথেসাথেই টিমের প্রথম মিটিং কল করলাম। তখন ঘড়ির কাঁটা বারটার ঘর পেরিয়ে গেছে। টিমের প্রত্যেকের মোরাল খুব নিচুতে। তারা খুব মন খারাপ করে আমার অফিস রুমে হাজির হলো। ব্যাটালিয়নের অন্য ৬ শ সদস্যের মধ্যে কেন তাদেরকেই এই ৬ জনের টিমে নেওয়া হলো, তা নিয়ে তাদের মধ্যে হতাশার অন্ত নেই। অস্বাভাবিক কিছু না অবশ্য। সন্তান যখন করোনা আক্রান্ত মা'কে জঙ্গলে ফেলে আসে, সেসময় একজন বাহিনী সদস্য নাচতে নাচতে করোনা রোগী পরিবেষ্টিত হয়ে দিনরাত কাটাতে রাজি হবে, এটা তো ভাবনারও অতীত। একজন তো বলেই ফেললো, তাকে ষড়যন্ত্র করে এই টিমে ঢোকানো হয়েছে। বুঝলাম, এদেরকে মোটিভেট করতে হবে। জানতে চাইলাম, ছোটবেলা থেকে তারা কখনো সিনেমার নায়কের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করেছে কিনা। তারা হ্যাঁ সূচক জবাব দিলো। আমি বললাম, বাহ্যিক সৌন্দর্য বা টাকাপয়সার জোরে সিনেমার নায়ক হওয়া গেলেও বাস্তব জগতের নায়ক কিন্তু কেউ ইচ্ছে করলেই হতে পারেন না। পরিবেশ পরিস্থিতিই একজন সাধারণ মানুষকে নায়কের পর্যায়ে উন্নীত করে। আর প্রকৃত নায়ক তো তিনিই, যিনি দেশের জন্য, মানবজাতির জন্য নিজের জীবনকে বিসর্জন দিতে প্রস্তুত থাকেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সকল কারণে ইতিহাসের মহানায়কের স্থানে অধিষ্ঠিত হয়েছেন,তার মধ্যে প্রধানতম কারণ হলো তিনি বারবার নিজের জীবনকে বিপন্ন করে বাঙালির স্বাধীকার প্রতিষ্ঠার অন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর চাপিয়ে দেওয়া জেল-জুলুম, বুলেট, প্রাণনাশের হুমকির পরোয়া না করে বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনকে অবধারিত করে তুলেছেন। আমরা ৬ জন আজ এমন এক মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছি,আমরা যদি সাহস করে এগিয়ে যাই, নিজের জীবনকে বিপদের মুখে ফেলে ব্যাটালিয়নের ৬ শতাধিক সদস্যকে বিপদমুক্ত করতে ভূমিকা পালন করতে পারি, তবেই সাধারণ মানুষ হতে আমাদের নায়কে উত্তরণ ঘটতে পারে। ঝাড়া আধাঘন্টার লেকচারের পর কথায় চিড়ে ভিজলো। তারা প্রত্যেকে কথা দিলেন, পরিস্থিতি যা-ই হোক, আমরা আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব প্রতিপালনে পিছপা হব না। (চলবে) Md. Anwar Hossan (Shamim Anwar) এএসপি (টিম লিডার) করোনা রেসপন্স এন্ড ম্যানেজমেন্ট টিম র‍্যাব-৯, সিলেট। (করোনা দিনের ডায়েরি-১)
BBS cable ad

র‍্যাব এর আরও খবর: