দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাইবার অপরাধ ও দস্যুতা নির্মূলে র্যাব-৮’র অধিনায়ক আতিকা ইসলামের অনন্য নজির
মো. ইউছুফ হোসেন:
র্যাব-৮ (র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান) এর অধিনায়ক অথবা কমান্ডিং অফিসারের দায়িত্ব রয়েছেন পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আতিকা ইসলাম। দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকেই বরিশালের ৬ জেলা সহ দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলাকে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দস্যুতা নির্মূলের পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ভুমিকা রেখে আসছেন। বাংলাদেশ পুলিশের নারী সদস্যদের কর্মক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ‘বাংলাদেশ উইমেন পুলিশ অ্যাওয়ার্ড ২০১৯’ প্রদান করা হয়েছে।
একজন নারী অফিসার হিসেবে ২০১৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক মর্যাদাপূর্ণ বিপিএম ( সাহসিকতা ) পুরষ্কারে ভূষিত হন যা । এছাড়া সুন্দরবনকে দস্যু মুক্ত করার জন্যও তিনি বিশেষ পুরষ্কার পেয়েছেন।
দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন সংলগ্ন নদীতে একাধিক জলদস্যু, ডাকাত বাহিনী বিপুলসংখ্যক নিরীহ মৎস্যজীবীকে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়সহ হতাহতের ঘটনা ঘটিয়ে আসছে। এ অবস্থায় সুন্দরবনে র্যাব-৮ এর ক্রমাগত অপারেশনে অস্ত্র,-গোলাবারুদসহ অসংখ্য জলদস্যু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছেন। উদ্ধার হয়েছে বিপুলসংখ্যক দেশি-বিদেশি অস্ত্র-গোলাবারুদ। বর্তমানে মৎস্য আহরণ মৌসুমে সুন্দরবনের মংলা, কয়রা ও শরণখোলা রেঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলে জলদস্যু-বনদস্যুরা পূর্বের ন্যায় আবারও যাতে সক্রিয় হতে না পারে সে জন্য জলদস্যুদের বিরুদ্ধে র্যাব-৮ তাদের অপারেশন কার্যক্রম জোরদার করে অব্যাহত রেখেছে। চলমান এ সাফল্যের প্রধান কারিগর হলেন র্যাব-৮ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি আতিকা ইসলাম।তার দায়িত্ব প্রাপ্ত সময়েই কিছু দিন আগে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সুন্দরবনকে জলদস্যু মুক্ত ঘোষণা করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলার ইতিহাসে অন্যতম মাইলফলক । এছাড়া অতিরিক্ত ডিআইজি আতিকা ইসলাম ” সুন্দরবনের হাসি ” নামক প্রকল্পের মাধ্যমে আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যু ও তাদের পরিবারের পুনর্বাসন ও সার্বিক উন্নয়নে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন যা অত্যন্ত অনুকরণীয় এবং প্রশংসনীয় একটি দৃষ্টান্ত।
এখন শান্তির সু-বাতাস বইছে সুন্দরবনে। অপহরণ-হত্যা এখন তিরোহিত। জেলেদের কষ্টার্জিত উপার্জনের ভাগও কাউকে দিতে হচ্ছে না। মাওয়ালী, বাওয়ালী, বনজীবী, বন্যপ্রাণী এখন সবাই নিরাপদ। নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে আসছে দর্শনার্থী-পর্যবেক্ষক এবং জাহাজ বণিকেরা। এভাবেই সরকারের দূরদর্শিতায় সুন্দরবন কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক গতিশীলতার ব্যাপক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। মূলতঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব, দিক নির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান এবং র্যাবের সক্রিয় অংশগ্রহণে সুন্দরবন আজ জলদস্যু মুক্ত।করোনা পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া বরিশাল র্যাব-৮ সদর দফতরে আত্মসমর্পণকারী ২৭টি বাহিনীর ২৮৪ জলদস্যুকে ঈদ উপহার সহ সারাবছরই বিভিন্ন সহায়তা করা হয়। ঈদ উপহার স্বরূপ আত্মসমর্পণকৃত ২৮৪ জলদস্যুর প্রত্যেককে ভাত ও পোলার চাল, ডাল, সয়াবিন তেল, সেমাই (লাচ্ছা), চিনি, গুড়া দুধ, লবণ, পেঁয়াজ, মসলা, হুইল পাউডার, দুই ধরনের লাক্স সাবান, বহনকরা ব্যাগ ও মাস্কসহ যাতায়াত ভাড়া বাবদ সম্মানী পৌছে দেন র্যাব-৮’র অধিনায়ক আতিকা ইসলাম ।
এমনকি মহিপুরে আম্পানে ক্ষতিগ্রস্থ অসহায়, গৃহহীন ও নিন্ম আয়ের মানুষের মাঝে বিভিন্ন প্রকার খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে র্যাব-৮ পটুয়াখালী ক্যাম্পের সদস্যরা। র্যাব-৮’র অধিনায়ক আতিকা ইসলামের নিজস্ব উদ্যোগে প্রতিজনকে ৫কেজি চাল, ডাল ১কেজি, চিনি আধা কেজি, তৈল ১কেজি, পিয়াজ ১কেজি, আলু ২কেজি, সেমাই ১প্যাকেট ও চিরা আধা কেজি বিতরণ করা হয় ।
র্যাব ৮ এর কার্যক্রম অত্র অঞ্চলের মানুষ এখন অধিকতর শান্তিতে। এ অঞ্চলের ১১ জেলার অপরাধ দমনের এই নেতৃত্বে রয়েছেন র্যাব-৮ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি আতিকা ইসলাম। র্যাব-৮ এর বর্তমান অধিনায়ক আতিকা ইসলামের যোগদানের পর থেকেই কার্যক্রম গড়ে উঠেছে শক্ত ভিত্তিতে।
আইনশৃংখলা পরিস্থিতি ও শান্তিশৃংখলা বজায় রাখতে দক্ষিণাঞ্চলে র্যাব-৮ এর অভিযান চলমান রয়েছে। এর মধ্যে যেসব উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে তা প্রশংসনীয়। জানা গেছে, র্যাব-৮ বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি, ভোলা, ফরিদপুর, রাজবাড়ি, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ এবং শরীয়তপুরে মাদকের ব্যবহার বৃদ্ধি রোধে অভিযান কার্যক্রম বৃদ্ধি করেছে। “চল যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে”- এই স্লোগানের মাধ্যমে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে র্যাব। অভিযানের পাশাপাশি সকলকে মাদকের কুফল সম্পর্কে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ‘মাদক বিরোধী ক্যাম্পেইন’ পরিচালনা করছে তারা। এবং এর সুফল পাওয়া শুরু করেছে ১১ জেলার মানুষ।
ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নগরীর সরকারি বিএম কলেজ, সরকারি বরিশাল কলেজ, সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদক বিরোধী বিতর্ক প্রতিযোগিতারও আয়োজন করছে র্যাব-৮। এছাড়াও যৌন হয়রানির নামে ইভটিজিং রোধে তাদের সক্রিয় দৃষ্টি রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন সড়কগুলোতে।
দেশে জঙ্গিগোষ্ঠী শক্তিশালী অবস্থায় না থাকলেও তারা যাতে ফের মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে সে জন্য র্যাব-৮ কঠোর ভূমিকা রাখছে। এর অন্যতম দৃষ্টান্ত হিসেবে গত ৩১ আগস্ট নগরীর দরগাবাড়ি এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবি সদস্য আব্দুল্লাহ আল মিরাজ ওরফে খালেদ সাইফুল্লাহ ওরফে সাইফুলকে আটক করে র্যাবের একটি চৌকস দল। জঙ্গিদের তথ্য সংগ্রহ এবং এদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তৎপরতা শুরু করেছে র্যাব। র্যাবের শক্তিশালী গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৮ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অপারেশনের মাধ্যমে জঙ্গি গ্রেপ্তার, উগ্রবাদী পুস্তক ও জীবননাশক দ্রব্য উদ্ধার করেছে এবং এর বিরুদ্ধে অপারেশন কার্যক্রম অব্যাহত রাখছে।
র্যাব-৮ এর বরিশালের দায়িত্বপূর্ণ এলাকা বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি, ভোলা, ফরিদপুর, রাজবাড়ি, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ এবং শরীয়তপুরে বিভিন্ন সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যে র্যাব-৮ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। বিশেষ করে বরিশাল সিটি নির্বাচনে র্যাবের টহল ও কঠোর দায়িত্বপালনে ভোট কেন্দ্রের বাইরের পরিবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক। যে কারণে ভোটারদের মাঝেও আস্থা ফিরে আসে র্যাবের ভূমিকায়।
সড়ক এবং নৌ-পথে দুর্ঘটনা ও অপরাধ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে র্যাব-৮ এর আওতাধীন এলাকায় চেকপোস্ট স্থাপনের মাধ্যমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে লাইসেন্সবিহীন যানবাহন আটক ও জরিমানায় প্রশাসনকে সহায়তাদানের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদ, বড়দিন, দুর্গাপূজা এবং বিভিন্ন যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন এবং অতিরিক্ত টহলের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে র্যাব-৮ কাজ করে আসছে।
সফল অভিযান পরিচালনা করে র্যাব-৮ বিপুল পরিমাণে মাদক ও ভেজাল ওষুধ, খাদ্যপণ্য, কারেন্ট জাল এবং আর্থিক জরিমানাসহ আসামি গ্রেপ্তার এবং এর বিরুদ্ধে অপারেশন কার্যক্রম আরো অর্থবহ করেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্র গ্রেপ্তারের মাধ্যমে র্যাব-৮ সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নকলের কুফল সম্পর্কে উদ্বুদ্ধ করার কাজ করে আসছে। এমনকি র্যাব-৮ ,২০১৮ -২০১৯ সালে জেএসসি , এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার বিভিন্ন প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্যদের আটক করে আইনের আওতায় এনেছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মাদক বিরোধী অভিযান, জলদস্যু গ্রেপ্তার এবং জঙ্গি দমনের কার্যক্রম আপোষহীনভাবে চালাচ্ছে এ সংস্থাটি- এমনটাই মনে করেন এতদাঞ্চলের মানুষ। যার ফলশ্রুতিতে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলছে জনগণ।
অতিরিক্ত ডিআইজি আতিকা ইসলাম এর উদ্যোগে সম্প্রতি চালু হয়েছে একটি অত্যাধুনিক সাইবার মনিটরিং সেল যা ইতিমধ্যেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সাইবার অপরাধ দমন করেছে এবং নিয়মিত ভাবে সাইবার পেট্রোলিং কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে । ফেসবুকে বা কোনো গণমাধ্যমে কাউকে নিয়ে মানহানিকর বা বিভ্রান্তিমূলক কিছু পোস্ট করলে, ছবি বা ভিডিও আপলোড করলে, কারও নামে অ্যাকাউন্ট খুলে বিভ্রান্তমূলক পোস্ট দিলে, কোনো স্ট্যাটাস দিলে কিংবা শেয়ার বা লাইক দিলেও সাইবার অপরাধ হতে পারে। কাউকে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে হুমকি দিলে, অশালীন কোনো কিছু পাঠালে কিংবা দেশবিরোধী কোনো কিছু করলে তা সাইবার অপরাধ হবে। আবার ইলেকট্রনিক মাধ্যমে হ্যাক করলে, ভাইরাস ছড়ালে কিংবা কোনো সিস্টেমে অনধিকার প্রবেশ করলে সাইবার অপরাধ হতে পারে। এ ছাড়া অনলাইনে যেকোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে তা-ও সাইবার অপরাধ। আর সাইবার অপরাধ দমনে সবসময় সক্রিয় র্যাব-৮ ।





