এসপি ফরিদ উদ্দিনের নির্দেশনায় মানুষের জন্য ক্লান্তিহীন ছুটে চলছে সিলেট জেলা পুলিশ
৩৬০ আউলিয়ার স্মৃতি বিজড়িত প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডার, দুটি পাতা একটি কুড়িঁর দেশ পূন্যভূমি সিলেট। প্রাকৃতিক সম্পদ, পাথর কোয়ারী, গ্যাসক্ষেত্র, চা-বাগানসহ সিলেটে রয়েছে শতাধিক পর্যটন কেন্দ্র। এছাড়াও ভারতের সীমান্তবর্তী জনপদ সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলার অবস্থান ভারতের সীমানা ঘেঁষা। তামাবিল স্থলবন্দরসহ ভারতের সীমানা ঘেঁষে উভয় দেশে বসে আসছে বৈধ-অবৈধ বেশক’টি হাট। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের সাথে মাদক দ্রব্যসহ বিভিন্ন অবৈধ পন্য নিয়ে যাতায়াত করে অনায়াসে তাই সিলেট জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। নানা কারণে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মধ্যে সিলেটের গুরুত্ব আলাদা।
এমন প্রেক্ষিতে সাধারণত দক্ষ অফিসারকেই পাঠানো হয় সিলেট জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে। পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর কাজ ও কর্মে সিলেটবাসীকে চমক দেখিয়ে দেন এসপি ফরিদ উদ্দিন। পৃথকভাবে প্রতিটি থানা পরিদর্শন ও থানার আওতাধীন এলাকার সার্বিক দিক বিবেচনা করে তৈরি করেন প্রতিটি থানায় একেকটি টিম। সততা, নিষ্ঠা, কর্মদক্ষতা, সাহসিকতা, কর্তব্যপরায়ণ, টিমওয়ার্কে বিশ্বাসী এসপি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম যোগদানের পর থেকেই সিলেট জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন মাত্র একশত টাকা খরচের মাধ্যমে পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ দেয়ায় দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় তোলেন তিনি। তার আমলে পুলিশে নিয়োগ ও রদবদলে নেই টাকার কোনো চাহিদা।
সিলেটে যোগদান করেন গেল বছরের ২৪ জুন। এর পর থেকে সিলেটজুড়ে বিভিন্নভাবে তার নাম আলোচিত হচ্ছে। বিভিন্ন ঘটনায় নিজের বাহিনীর সদস্যদেরও ছাড় দেননি এ কর্মকর্তা। বিশেষ করে করোনা পরিস্থিতিতে সিলেটের সব উপজেলায়ই তার পা পড়েছে। তার পরিকল্পনায় প্রথমে মাস্ক ও হ্যান্ডস্যানিটাইজার, মাইকিং এবং প্রচারপত্র বিলির মাধ্যমে শুরু হয় জেলা পুলিশের কার্যক্রম। এর পরই হোম কোয়ারান্টিন নিশ্চিত করা হয়। লকডাউন ঘোষণার পর পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন প্রথমে দাঁড়ান প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পাশে। বিশ্বনাথ, গোলাপগঞ্জ, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, বিয়ানীবাজার, জৈন্তাপুরসহ যেসব স্থানে বেদে সম্প্রদায় থাকে খবর নিয়ে তাদের খাদ্যসামগ্রী উপহার দেওয়া হয়। এর পরই খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের। তারই ধারাবাহিকতায় জাফলংয়ের খাসিয়াপুঞ্জি, পাথর শ্রমিক ও জেলে সম্প্রদায়ের (পুরো জেলার) পাশে দাঁড়ান এ কর্মকর্তা।
বাহরাইন প্রবাসী এক ব্যক্তির স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানের পরিবার থাকে সিলেট শহরের একটি মহল্লায়। সিলেটে লকডাউন ঘোষণার দিনই বিপাকে পড়ে পরিবারটি। সব দোকানপাট বন্ধ। ঘরে বাজারসদাই কিছুই ছিল না। কোনো উপায় না পেয়ে বাহরাইন থেকে ওই প্রবাসী ব্যক্তি সরাসরি সিলেটের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিনের মুঠোফোনে কল করে সহায়তা চান। ঠিকানা নিয়ে তাৎক্ষণিক খোঁজ করে সত্যতা পেলেন পুলিশ সুপার। পরে তিনি চাল, ডাল, আলুসহ নিত্যপণ্যের একটি প্যাকেট পৌঁছে দেন ওই প্রবাসীর বাড়িতে। গত ১২ এপ্রিলথেকে এ পর্যন্ত পুলিশ সুপারের দেওয়া মুঠোফোন নম্বরে এক মাসে ফোন কলের মাধ্যমে অন্তত ১৫ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রবাসী, মধ্য ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সংখ্যাই বেশি।
যত দিন এমন পরিস্থিতি থাকবে, তত দিন এই সহায়তা অব্যাহত রাখবেন বলে জানিয়েছেন সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। ফেসবুকে এই কার্যক্রম দেখে অনেক প্রবাসী ও সমাজের বিত্তবান ব্যক্তি আমাদের অর্থ সহায়তা দিতে আগ্রহ জানিয়েছেন। আমি তাঁদের সবিনয়ে বলেছি, এটা সম্পূর্ণ আমাদের উদ্যোগ। যত দিন পারি আমরা সাধ্য মতো চালিয়ে যাব। আপনারা আমাদের সহায়তা না করে নিজ থেকে এভাবেই মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন।'
বেদে পল্লীতে পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন
লকডাউনের কারণে বন্ধ গণপরিবহন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে বহিরাগতদের এলাকায় প্রবেশে কড়াকড়ি। তাই তাঁবুর ভিতরেই আটকে আছে তাদের জীবন। কিন্তু জীবিকা না থাকলে জীবন যে চলে না। আর জীবন চালানোর জন্য জীবিকার সন্ধানে বের হওয়ারও নেই কোনো সুযোগ। এমন কঠিন অবস্থায় পরিবার নিয়ে উপোস করছিল সীমান্তবর্তী উপজেলা জৈন্তাপুরের বেদেপল্লীর লোকজন। সে খবর পেয়ে সেখানে ছুটে গিয়ে পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন নিজে তুলে দেন খাদ্য উপহার। পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন এর নেতৃত্বে শুধু জৈন্তাপুরের বেদেপল্লীই নয়, সিলেটের সব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা পুলিশ। খাদ্য উপহার আর আর্থিক অনুদান দিয়ে তারা পাশে দাঁড়াচ্ছে মানুষের। ইতিমধ্যে সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলার বেদে, জেলে, হিজড়া, চা শ্রমিক, পাথর শ্রমিকসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬ সহস্রাধিক পরিবারের মধ্যে পাঠানো হয়েছে খাদ্য উপহার। সংকটে থাকা মধ্যবিত্ত পরিবারদের জন্য চালু করা হয়েছে হটলাইন। ফোন পেলেই ঘরে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে খাবার।
মায়েদের প্রতি ভালোবাসা
বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে এবং করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হত দরিদ্র মা’দের প্রতি ভালবাসার অংশ হিসেবে জৈন্তাপুরে আসন্ন ঈদ উপলক্ষে খাদ্য সামগ্রী ও ইফতার বিতরণ করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম। হতদরিদ্র প্রায় একশত পঞ্চাশ জন মা’কে ঈদের বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীসহ ইফতার বিতরণ করেন তিনি। তিনি বলেন, প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে আমাদের মা’দের প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত। বৃদ্ধকালে কোন মা যেন পরিবারের সদস্য দ্বারা অবহেলার শিকার না হয় সেজন্য সবাইকে তিনি অনুরোধ করেন।
