লক্ষ্মীপুরে ডাকাত আতঙ্কিত এলাকায় ছুটে গেলেন এসপি

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে হঠাৎ বেড়েছে চোর ও ডাকাতের উপদ্রব। আজ এ বাড়িতে কাল ওই বাড়িতে। এমন চোর- ডাকাত আতঙ্কে ঘুম হারাম হয়ে গেছে উপজেলার কেরোয়া ও চরপাতা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে। পুলিশ চিহ্নিত ডাকাত এবং চোর -ডাকাতচক্রকে শনাক্ত করতে মসজিদে মাইকিং গ্রেফতার করতে না পারায় গ্রামবাসীদের পাহারায় রাত কাটাচ্ছে ওই এলাকার বাসিন্দারা।
এই চুরি, ডাকাতি ও মাদক প্রতিরোধে বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রায়পুর থানায় সকল শ্রেণীপেশার মানুষের সাথে এবং বিকাল থেকে-রাত ৮টা পর্যন্ত কেরোয়া ইউনিয়নবাসির সাথে মতবিনিময় করেন নবাগত পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ। এছাড়াও পুলিশ সুপার (এসপি) ডাকাত আতঙ্কিত এলাকায় ছুটে যান এবং চুরি ও ডাকাতি হওয়া বাড়িগুলো পরিদর্শন করে গৃহকর্তাদের সাহস ও শন্তনা দিয়েছেন। এসময় সঙ্গে ছিলেন সহকারি পুলিশ সুপার, ওসি, কমিউনিটি পুলিশিং সভাপতি, ইউপি চেয়ারম্যান, সাংবাদিক ও সুশিল সমাজের প্রতিনিধি।
গত সোমবার রাতে কেরোয়া ইউপির সাত বাড়ি একই সময়ে চুরি হয়। বাড়িগুরো হলো-বহরমুল্লা পাটওয়ারি বাড়ি, হাছান আালী মুন্সি বাড়ি,তোরাফ পাটওয়ারীর ২ ঘরে, মন্ডল বাড়িতে, জাহাবক্স ভুঁইয়া বাড়ির ২ ঘরে,তফদার বাড়িতে। আর লামছরি গ্রামের মাদরাসার পাশে প্রবাসির ঘরে ডাকাতি হয়। এসময় ছুরি দিয়ে দুই আঘাত করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত এক মাস যাবৎ চরপাতা ইউপির গাছিরহাট, গাজিনগর, বোয়াডার বাজার, সিঙ্গেরপুলসহ রায়পুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের লেংড়াবাজার থেকে বোয়াডারবাজার পর্যন্ত সড়ক। আবার কেরোয়া ইউপির জোড়পুল, খলিফার মসজিদ, লামছড়ি, মোল্লারহাট, মীরগঞ্জ, দেনায়েতপুর, পীরবাড়ি সংলগ্ন এলাকা, মালিবাড়ি এলাকা, সুনামগঞ্জ এলাকাসহ তার পাশে মাসুমপুর সহ কয়েকটি গ্রামে দুঃসাহসি চুরি এবং ডাকাতি হয়। ধারাবাহিকভাবে চুরি ও ডাকাতি করে মালামাল লুটে নিচ্ছে। কখনো কখনো গৃহকর্তাদের ছুরিকাঘাতে মারাত্মকভাবে আহত করছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ হাসপাতালে এখনো মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্চা লড়ছে। ডাকাতের কবল থেকে রক্ষা পেতে ইতোমধ্যে এলাকাবাসী মসজিদে মসজিদে মাইকিং করে গ্রামবাসিদের সতর্ক করছেন। চরমোহনা ইউপির কয়েকটি স্থানে কৃষকের গরুও চুরি হচ্ছে।
চরপাতা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সুলতান মামুন রশিদ বলেন, ২-৩ দিন পর পর চোর ও ডাকাত দল ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে গ্রামের মানুষের টাকা-পয়সা স্বর্ণালংকার লুটে নেয়। থানায় অভিযোগ করলেও কোন লাভ হয়না। কয়েকদিন আগে কয়েকটি স্থানে ডাকাত আতংক দেখা দিলে মসজিদের মাইকে সতর্ক করা হয় গ্রামবাসিদের।
কেরোয়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান সামছুল ইসলাম সামু জানান, রায়পুর উপজেলার ১০টির মধ্যে গুরুত্বপুর্ণ ইউনিয়ন হলো কেরোয়া ইউপি।। এই ইউপির পাশে বোয়াডারে ফরিদগঞ্জ, রামগঞ্জ, সদর উপজেলা। গত এক মাসে ওইসব এলাকায় অন্তত ৭ সিঁধেল চুরি ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতি রোধে দুই-তিনদিন গ্রামের মানুষ মসজিদে মাইকিং করে ডাকাত পাহাড়া দেন। দুইজন বৃদ্ধকে চোরেরা ছুরি দিয়ে আঘাত করলে তারা আহত হন। বুধবার নবাগত পুলিশ সুপার গ্রামবাসীদের সাথে মতবিনিময় করেন। ক্ষতিগ্রস্থ কয়েকজনের বাড়ি গিয়ে তাদের শান্তনা ও সাহস দেন।
রায়পুর কমিউনিটি পুলিশিং এর সভাপতি কাজি জামশেদ কবির বাকি বিল্লাহ বলেন, কেরোয়া ইউপিতে ডাকাতি ও চুরি সংগঠিত করছেন জামায়াতের নেতা ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনুস বাহিনীর ঘটানো। ইউনুস বাহিনী রাতে পাহারা দেয় লাঠি, রামদা,চাইনিজ কুড়াল ও সাপাল নিয়ে এবং সিএনজি চেকিং করে। গ্রামে ডাকাত পড়েছে বলে সেই মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্রামবাসিকে বিরক্ত করে । কয়েকদিন আগে লামছরি গ্রামে ডাকাতির ঘটনায় রক্তাক্ত দুই বৃদ্ধাকে আহতের ঘটনাকে সে সিনক্রিয়েট করেন। যারা রাতে পাহারারতরাই সামাজিক অন্যায় ও অত্যাচারের ইতিহাস জড়িত।
তবে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা ইউনুস বলেন, পুলিশ সুপারের মতবিনিময়সভায় আ’লীগ নেতা বাকি বিল্লাহের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। মূলত ইউনুস বাহিনী বলতে কেরোয়ায় কোন বাহিনী নেই, আমি দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থেকে কেরোয়ায় সামাজিক কর্মযজ্ঞ ও মানবিক কাজ করে আসছি। সমাজের যেকোন অন্যায় ও অনাচারের বিরুদ্ধে আমি সবসময় তৎপর ছিলাম। কেরোয়ার দীর্ঘদিনের ডাকাতির ঘটনা প্রশাসন, সাংবাদিকমহল, গোয়েন্দা সংস্থাসহ লক্ষ্মীপুরবাসী অবগত।
সাম্প্রতিক সময়ে ডাকাতিকালে একজন বৃদ্ধ মহিলাকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করার ঘটনায় দেশের সচেতনমহলকে নাড়া দিয়েছে। এর আগেও কেরোয়ায় অসংখ্য ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। কেরোয়ার কৃতি সন্তান এসপির বাড়িতেও ডাকাতি হয়। তাই আমরা সামাজিকভাবে ডাকাতির বিরুদ্ধে স্বোচ্ছার হই এবং প্রশাসন ও ইউপি মেম্বারকে অবহিত করে পাহারার ব্যবস্থা করি। পুলিশ সুপার সহ প্রশাসন কেরোয়ার ডাকাতি প্রতিরোধে অত্যন্ত আন্তরিক এবং যথেষ্ট তৎপর। সার্বক্ষনিক খোঁজ খবর রাখছেন এবং ডাকাত নির্মুলে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে আসছেন। প্রতি রাতে পুলিশের কয়েকটি টিম কেরোয়ার ডাকাত প্রতিরোধে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। গ্রামপুলিশ সহ পাহারা দিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে সহায়তা করে আসছি অথচ বাক্কি বিল্লাহ মিথ্যাচার করছেন। রাতে সিএনজি প্রশাসনের লোকজন চেক করেন।
মতবিনিময় সভায় পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, গত বুধবার এ জেলায় যোগদান করেই শুনছি রায়পুরে আইনশৃংখলা অবনতি। তখনিই সিদ্ধান্ত নিলাম দ্রুত সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় করে তার উন্নতি ঘটাতে হবে। শুধু একটাই বলবো, অপরাধিরা মানুষকে কস্ট দিবেন আমরাও তাদের শান্তিতে থাকতে দিবোনা। আপনি ভালো তো আমরাও আপনাদের সাথে ভালো। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি দুর করতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।