শিরোনাম

South east bank ad

ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার ১২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেছে ঢাকা রেঞ্জ পুলিশ

 প্রকাশ: ০৯ মে ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   পুলিশ

ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার ১২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেছে ঢাকা রেঞ্জ পুলিশ

ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেছে ঢাকা রেঞ্জ পুলিশ।
ঢাকা রেঞ্জ পুলিশ এর ফেসবুক পেজে এ প্রসঙ্গে লেখাটি বিডিফিন্যান্সিয়ালনিউজ২৪.কম এর পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো:

বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী এ বিজ্ঞানী ২০০৯ সালের ৯ মে ইন্তেকাল করেন। তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী।
১৯৪২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার লালদীঘির ফতেহপুর গ্রামে ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার জন্ম। বাবা আবদুল কাদের মিয়া ও মা ময়েজুন্নেসার চার ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। তিনি ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন এবং ১৯৬২ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি ফজলুল হক হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। ছাত্রলীগ মনোনীত প্রার্থী হিসাবে ১৯৬১-৬২ শিক্ষা বছরের জন্য হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালে শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেফতার হন। ড. ওয়াজেদ মিয়া অনেক জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানবিষয়ক সম্মেলনে অংশ নেন। তার গবেষণামূলক ও বিজ্ঞানবিষয়ক অনেক প্রবন্ধ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্র-পত্রিকায় এবং সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের এক ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং এক মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
রংপুরের পিছিয়ে পড়া এক গ্রাম থেকে উঠে এসেছিলেন তিনি। নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন শুধুই শিক্ষার মাধ্যমে। পীরগঞ্জের ফতেপুরের সাদাসিধে ছেলেটিই বড়ো হয়ে দেশের অন্যতম একজন আণবিক বিজ্ঞানী হিসেবে নাম কুড়িয়েছেন। তাঁর বিজ্ঞানচর্চার পরিধি কতটা সুউচ্চ ছিল তা আমাদের অনেকেরই অজানা। ১৯৬৯ সালে ইতালির ট্রিয়েস্টের আন্তর্জাতিক তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান গবেষণাকেন্দ্র তাকে অ্যাসোসিয়েটশিপ প্রদান করে। ১৯৬৯ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন শহরের ড্যারেসবেরি নিউক্লিয়ার ল্যাবরেটরিতে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণায় ঔনিয়োজিত ছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত তিনি তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির কার্লসরুয়ে শহরের ‘আণবিক গবেষণাকেন্দ্রে’ আণবিক রি-অ্যাক্টর বিজ্ঞানে উচ্চতর প্রশিক্ষণ লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ১ অক্টোবর থেকে ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি ভারতের আণবিক শক্তি কমিশনের দিল্লি ল্যাবরেটরিতে গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন।
তার যোগ্যতার মাপকাঠি ছিল প্রশ্নাতীত। ১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালে তিনি পর পর দুবার বাংলাদেশ আণবিক শক্তিবিজ্ঞানী সংঘের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮৩, ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে তিনি পর পর তিনবার ঐ বিজ্ঞানী সংঘের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত চার বছর তিনি বাংলাদেশ পদার্থবিজ্ঞান সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি দুই বছর মেয়াদের জন্য ঐ বিজ্ঞান সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। আর এসব পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন শুধু তার যোগ্যতার নিরিখেই।
আজ বাস্তবায়নের পথে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। বলা যায়, এটা অনেক বড় এক স্বপ্নেরই বাস্তবায়ন। বাংলাদেশের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপনকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পূরণ হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। সফল হবে বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার আমরণ প্রচেষ্টা এবং সুফল ভোগ করবে সারাদেশের মানুষ।’
তিনি শুধু একজন মেধাবী ছাত্র বা পরমাণু বিজ্ঞানী ছিলেন না, তিনি ছিলেন নির্লোভ, নিভৃতচারী, নীতিবান, নিরহংকার, নির্ভীক, স্পষ্টবাদী, দৃঢ়চেতা, দেশপ্রেমিক, আদর্শবান, সহজ-সরল, বিনয়ী, চরিত্রবান, যুক্তিবাদী, অজাতশত্রু ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন আদর্শ মানুষ। এত গুণে গুণান্বিত মানুষ কয়জন আছেন এই ভুবনে! ড. ওয়াজেদ মিয়া সাতটি পাঠ্যবই লিখেছেন, এর মধ্যে ছয়টিই এরই মধ্যে প্রকাশিত। মৃত্যুর আগে সপ্তম বইটির সম্পাদনার কাজে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। ব্যক্তিজীবনে ক্ষমতার ভেতরে থেকেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহারের সামান্যতম সুযোগ নেননি। যা তার জন্য খুব সহজ ছিল। তিনি আপন অবস্থানে থেকেই কাজ করে গেছেন। তার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের রূপপুরে একটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা, দেশের বিজ্ঞানীদের পেশাগত কাজের উৎকর্ষ বৃদ্ধির জন্য একটি বিজ্ঞানভবন নির্মাণ করা। দেশে বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা প্রসারে তার অবদান অবিস্মরণীয়।
মৃত্যুর পর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেহপুর গ্রামে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। প্রতি বছরের মতো আজ দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করবে বলে জানা গেছে। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।

BBS cable ad

পুলিশ এর আরও খবর: