সাফল্যের সিঁড়িতে আরেক ধাপ এগিয়ে গেলেন এএসপি মোঃ পারভেজ আলম চৌধুরী

নুর উদ্দিন সুমন (হবিগঞ্জ):
অত্যন্ত মেধাবী,গভীর মানবিকবোধ সম্পন্ন এবং বিনয়ী সিনিয়র এএসপি মোঃ পারভেজ আলম চৌধুরী সাফল্যের সিঁড়িতে আরেক ধাপ এগিয়ে গেলেন । তাঁর পেশাগত জীবনের আরেকটি বর্ণাঢ্য ধাপের সূচনা ঘটলো। মো: পারভেজ আলম চৌধুরী সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) থেকে পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডিশনাল এসপি) হয়েছেন বাহুবল সার্কেলের সিনিয়র এএসপি মো: পারভেজ আলম চৌধুরী । গত (২ মে) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে এই পদোন্নতি দেয়া হয়। একই প্রজ্ঞাপনে আরও ১০৪ জন সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাদেরকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত মো: পারভেজ আলম চৌধুরী ৩৩ তম বিসিএস এর পুলিশ ক্যাডারের একজন দক্ষ, মেধাবী ও চৌকস কর্মকর্তা। মো: পারভেজ আলম চৌধুরী ২০১৮ সালে ৭ মার্চ বাহুবল সার্কেলের এএসপি হিসেবে যোগদান করেন। বাহুবল সার্কেলে দায়িত্ব গ্রহনের পর বিভিন্ন ছোট বড় আলোচিত বিরোধ নিষ্পত্তি করে সকল স্তরের মানুষের নজর কেড়েছেন মো: পারভেজ আলম চৌধুরী। যোগদানের পর থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ২০টি ইউনিয়নে বসেই পুলিশি সেবা দেয়ার পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী বিরোধ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মাদকসেবন, মাদক নিমূল, চুরি ডাকাতি, ইভটিজিং বন্ধে বাহুবল সার্কেলের নেতৃত্বে থানার কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করতে শিক্ষক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, চিকিৎসক, আইনজীবি, ব্যবসায়ী সহ সকল শ্রেনীর ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে ছোট বড় আলোচিত গ্রাম্য বিরোধ নিষ্পত্তিসহ আইনশৃংখলা রক্ষায় নানামূখী উদ্যোগ গ্রহন করেন । তার নিরলস প্রচেষ্টায় এসব এলাকায় দাঙ্গা হাঙ্গামা প্রায় অনেকটা শুন্যের কোটায় নেমে এসেছে। মো: পারভেজ আলম চৌধুরী জানান, বাহুবল সার্কেলাধীন বাহুবল ও নবীগঞ্জ দুইটি থানা রয়েছে।এ দুইটি থানাই দাঙ্গাপ্রবণ। গ্রাম্য মাতব্বরদের আধিপত্যকে কেন্দ্র করে গোষ্ঠিগত বিবাদ এর ফলে প্রায়ই দাঙ্গা লেগে থাকত। প্রায় সময়ই হতাহতসহ হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত সংগঠিত হত। গ্রাম পঞ্চায়েত প্রথা প্রধান এর মূলে ছিল। নানা জরিপে জানা গেছে একসময় তুচ্ছ ঘটনায় মামলা এবং খুনের ঘটনায় জেলার শীর্ষ স্থান ছিল এ জনপদ। তিনি যোগদানের পর প্রথমে প্রতিটি ইউনিয়নের দাঙ্গা প্রবণ অঞ্চল গুলি চিহ্নিত করে গোষ্ঠীগত বিষয়গুলি নিয়ে বিকল্প পরিকল্পনা তৈরী করেন। প্রথমে পঞ্চায়েত কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে গঠন করেন ”অপরাধ নির্মূল কমিটি”। উক্ত কমিটিতে প্রতিটি গোষ্ঠীর লোকজনকে সদস্য করা হয়। এই কমিটির মাধ্যমে শেষ করা হয় তাদের গোষ্ঠিগত বিবাদ এবং গোষ্ঠীগত দ্বন্দ। মাদকমুক্ত করতে প্রতি বিটে মাদক নির্মূল (মানিক) কমিটি গঠন করেন। উক্ত কমিটি প্রতিটি ইউনিয়নের সচেতন শিক্ষিত লোকদের সমন্বয় গঠন করে মাদক নির্মূল কমিটি। এই কমিটির মাধ্যমে মাদক বিরোধী জনসচেতনামূলক কর্মসূচি ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় করা হয়। এছাড়াও মাদক ছেড়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে চায় এমন অনেককেই এই কমিটির মাধ্যমে পূর্ণবাসিত করে কর্মস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। এছাড়া কমিটির সদস্যদের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে মাদকের বিরুদ্ধে কার্যকর অভিযান পরিচালনা করা হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন রোধকল্পে ও দ্রুত আইনি সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোন নারী বা শিশু যদি কোনরূপ নির্যাতনের শিকার হয় সেটা যেন গ্রাম্য মাতব্বরদের মাধ্যমে চাপা না পড়ে এবং নারী ও শিশু নির্যাতন রোধকল্পে ভুক্তভোগীকে উপযুক্ত সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিটি ইউনিয়নে তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন নির্মূল কমিটি গঠন করেন। কমিটিতে শিক্ষিত সচেতন মহল স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয় । এ কমিটি বিভিন্ন জনসচেতনামূলক সভার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করে তোলে। ইভটিজিং বাল্যবিবাহ রোধ কল্পে বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে তাদের মধ্য থেকে স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক কমিটি গঠন করা হয়। জনসচেতনতা মূলক সভার পাশাপাশি স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ইভটিজিং, যৌন হয়রানি, বাল্য বিবাহ বন্ধ করা সহ নারী ও শিশু নির্যাতন রোধ কল্পে সচেতনতা কার্যক্রমের মাধ্যমে উপরোক্ত যে কোন অপরাধ সংঘটিত হলে সাথে সাথে পুলিশকে অবহিত করার জন্য থানার অফিসার ইনচার্জ এর মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়। এদিকে করোনা ভাইরাস নামক ভাইরাস এর সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচেতনতা মূলক সভা করা হয়। করোনাকালীন সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সরকারের বিভিন্ন নির্দেশনা বাস্তবায়ন সহ জনসচেতনামূলক প্রচার প্রচারণা এবং বাহুবল সার্কেলাধীন থানা সমুহের বিভিন্ন অঞ্চলে করোনা ভাইরাস এর সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচেতনতা মূলক লিফলেট বিতরণ, পৌরসভা এলাকা বিভিন্ন হাট-বাজারে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য হ্যান্ড মাইক নিয়ে প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে সম্পৃক্ত করেন তিনি । তার নেতৃত্বে প্রতিটি ইউনিয়নের বিট অফিসে এএসপির চেম্বার স্থাপন করা হয়। সাধারণ জনগণকে খুব কাছে থেকে আইনি সহযোগিতা ও অপরাধীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার লক্ষ্যে এই চেম্বার স্থাপন করা হয়।"পুলিশ-জনতা পাহারা একসাথে,নিরাপদ থাকবো প্রতি রাতে" এই স্লোগানকে সামনে রেখে বাহুবল ও নবীগঞ্জ থানাধীন দূরবর্তী অন্যান্য থানাসংলগ্ন সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে চুরি-ডাকাতি প্রতিরোধকল্পে পুলিশ ও গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় পাহারা কার্যক্রম চালু করেন। দীর্ঘদিন বাহুবল সার্কেলের এএসপি হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সিলেটে জেলার কৃতি সন্তান মো: পারভেজ আলম চৌধুরী বাহুবলের দাঙ্গা মুক্ত করতে অবদান রেখেছেন যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। পদায়নের খবরে নানা পেশার লোকজন ও তার সহকর্মীগণ তাঁর কর্মকান্ডের স্মৃতিচারণ করার মধ্য দিয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাঁর দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বে আরো এগিয়ে যাবে পুলিশি সেবা। আলোকিত করবে পুলিশ বিভাগ। প্রশংসায় ভাসছেন চৌকশ অফিসার মো: পারভেজ আলম চৌধুরী । তিনি বলেন,এই পদোন্নতি আমার কাজের গতিকে আরো গতিশীল করবে। তিনি সকলের নিকট দোয়া ও সহযোগীতা কামনা করেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ বিভাগের প্রতি।