ডিসি ওয়ারী শাহ ইফতেখার আহমেদ এর নির্দেশনায় স্বজনদের কাছে বৃদ্ধ মহিলা

ডিসি ওয়ারী শাহ ইফতেখার আহমেদ এর নেতৃত্বে ও চমৎকার দিক নির্দেশনায় সবার পাশে আছে টিম ওয়ারী। এটা শুধু স্লোগান নয়। এক একজন বৃদ্ধ মহিলাকে নিজের স্বজনের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে এক একটি মানবিকতার গল্প জন্ম দিয়েছে টিম ওয়ারী।
গতকাল যাত্রাবাড়ী থানার আওতাভুক্ত এলাকায় পেট্রোল ডিউটি করছিলেন এস আই বিশ্বজিৎ সরকার। এমন সময় থানার বেতার মারফত জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এর ফোনকলের মাধ্যমে তথ্য পায় যে, ঢাকা -চট্টগ্রাম মহাসড়কের রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ডে একজন বৃদ্ধা মহিলা নাম ঠিকানা বলতে পারছেন না এবং বসে বসে অনেক কান্নাকাটি করছেন। তিনি এই সংবাদ পেয়ে বায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে দেখেন, অনেক লোকজন একজন বৃদ্ধ মহিলাকে ঘিরে আছে এবং নাম ঠিকানা জানার চেষ্টা করছে। বৃদ্ধা মা অনেক কান্নাকাটি করছে। বয়সের ভারে তিনি ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না।
এস আই বিশ্বজিৎ তার নাম ঠিকানা জানার অনেক চেষ্টা করেন। তিনি আধো আধো অস্পষ্ট ভাষায় নাম ঠিকানা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু উপস্থিত কেউ তার কথা বুঝতে পারছিলো না। পরে অনেক চেষ্টা করে জানা যায়, তার বাড়িতে যেতে হলে সোনারগাঁও থানাধীন চৌরাস্তা হতে বৈদ্যের বাজার যেতে হবে। অতঃপর এস আই বিশ্বজিৎ বিষয়টি অফিসার ইনচার্জকে অবহিত করেন। অফিসার ইনচার্জ এর কথামতো বৃদ্ধাকে থানা নিয়ে আসা হয়। অফিসার ইনচার্জ বৃদ্ধা মায়ের সাথে কথা বলেন। সব কিছু জানার পর অফিসার ইনচার্জ এস আই বিশ্বজিৎকে ঐ বৃদ্ধা মাকে তার বাড়িতে তার আত্মীয় স্বজনদের কাছে পৌঁছে ও বুঝিয়ে দিয়ে আসার জন্য বলেন।
এর পরের কাহিনি বৃদ্ধা মাকে তার স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেয়ার গল্প।এরপর বিশ্বজিৎ সঙ্গীয় ফোর্সসহ সোনারগাঁও থানাধীন বৈদ্যের বাজার নামক স্থানে যায়। কিন্তু ওখানে গিয়ে অনেক জিজ্ঞাসার পর জানতে পারে তার বাড়ি কুমিল্লা জেলার মেঘনা থানার চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের শিবনগর মেঘনার চর গ্রামে। যেখানে যেতে ট্রলার অথবা স্পীড বোটে করে মেঘনা নদী পাড় হয়ে যেতে হবে। যার দূরুত্ব হবে প্রায় ৪ কি.মি.। পরে উপস্থিত লোকজন ও সঙ্গীয় ফোর্সসহ নদীর ঘাটে যায় বিশ্বজিৎ। কিন্তু ঘড়ির কাঁটা তখন রাত ১২ঃ৩০ এর ঘর ছাড়িয়ে গিয়েছে। তাছাড়া এলাকাটাও প্রত্যন্ত হওয়ায় এরই মধ্যে সব ট্রলার চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। । পরে একটি মাছ ধরার ট্রলার এর জেলে ভাইকে অনুরোধ করলে, তিনি জানান এখান থেকে চালিভাঙ্গা যেতে ১৫-২০ মিনিট সময় লাগবে, যার দুরুত্ব আনুমানিক ৪কি. মি । অনেক অনুরোধ করার পর তিনি তাদের সাথে নিতে রাজি হন। পরে সঙ্গীয় ফোর্স ও উপস্থিত লোকজন নিয়ে চালিভাঙ্গার শিবনগর গ্রামে পৌঁছায় এস আই বিশ্বজিৎ । বৃদ্ধা মায়ের, ছেলে মান্নাফ জানান যে, তার মায়ের বয়স ১০০ বছরেরও বেশি।পরে বৃদ্ধা মাকে তার ছেলে মান্নাফ এর কাছে বুঝিয়ে দেন বিশ্বজিৎ । মাকে পেয়ে ছেলে অনেক খুশি। সেই বৃদ্ধা মায়ের মায়াবী চাহনি আর বাড়িতে ফিরে যেতে পারার আনন্দের কাছে অনেক প্রাপ্তিই তুচ্ছ বলে মনে হয় এস আই বিশ্বজিতের। টিম ওয়ারী এভাবেই পাশে থাকে অসহায় পথহারা মানুষের।
"পথিক তুমি পথ হারাইয়াছো?" এই প্রশ্নটি বঙ্কিমের কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের নায়িকা কপালকুণ্ডলা নায়ক নবকুমারকে জিজ্ঞেস করেছিলো। ১৫৫ বছর পরে টিম ওয়ারীর সদস্যগনের কাছে উক্ত বাক্যটি শুধু একটি রোমান্টিক বাক্য হিসেবেই নয়, নগরবাসীকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দিতে ভালোবাসাময় দায়িত্ববোধের জিজ্ঞাসা।