টেকনিশিয়ান থেকে নকল ওষুধের কারখানা গড়ে তোলেন আনিস : আরএমপি কমিশনার

রাজশাহীতে নগরীর চন্দ্রিমা থানার ছোটবনগ্রাম আবাসিক এলাকা-১ এর একটি বাড়িতে আনিস (৪৬) নামের এক ব্যক্তি গড়ে তুলেছিলেন নকল ওষুধের কারখানা। অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধসহ তাকে আটক করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে নগর ডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক। সেখানে নগর ডিবি পুলিশের উপ-কমিশনার আরেফিন জুয়েল ও সহকারী কমিশনার রাকিবুল হাসানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল আনিসের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ জব্দ করা হয়। ওই অভিযানে আটক করা হয় আনিস ও তার সহযোগী রবিউল ইসলামকে (৩২)।
সংবাদ সম্মেলন থেকে জানা গেছে, আনিস অনেকটা নির্জন এলাকার তার বাড়ির একটি ঘরে মেশিন বসিয়ে ওষুধ প্যাকেজিং করতেন। অত্যাধুনিক সেই মেশিনটি জব্দ করেছে ডিবি পুলিশ। আনিসের বাড়ি থেকে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের বিপুল পরিমাণ সেকলো-২০, এসবি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের পাওয়ার-৩০, নাভানার পিজোফেন-০.৫, এপেক্স ফার্মার রিলামক্স-৫০০ এবং ইলিমিক্স-২০০ জব্দ করা হয়।
এর মধ্যে সেকলো ছিল ১ হাজার ৮৬৪ প্যাকেট। যৌন উত্তেজক পাওয়ার-৩০ মোড়কসহ ছিল ৭৬৯ প্যাকেট। আর মোড়ক ছাড়া ছিল ৫ হাজার ১৮৮ প্যাকেট। এছাড়া এই ওষুধটির সবুজ রঙের পাওয়া গেছে ৬৫ পাতা এবং খোলা ওষুধ পাওয়া গেছে ১৬ কেজি। পিজোফেন পাওয়া গেছে ১ হাজার ৩৫৬ পাতা, ইলিক্সিম ১২৫ পাতা এবং রিলামক্স ২২ পাতা। বড় বড় ১২টি কার্টুনে সেকলো এবং ৭টি কার্টুনে পাওয়ার-৩০ দেখা গেছে। এছাড়া বাড়িটি থেকে বিপুল পরিমাণ ওষুধের খালি খোসা, স্টিকারসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদিও জব্দ করা হয়েছে।
পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক জানান, জব্দ করা নকল ওষুধগুলোর আনুমানিক মূল্য ৭০ লাখ টাকা। আনিস পুলিশকে জানিয়েছেন দুই বছর ধরে তিনি নকল ওষুধ তৈরি করতেন। তবে তাদের কাছে মনে হয়েছে, দীর্ঘ সময় ধরেই আনিস এই কাজে জড়িত ছিলেন। তিনি এসব ওষুধ বাজারেও ছেড়েছেন। তথ্য নিয়ে সেসব ওষুধ বাজার থেকে তুলে নেয়া হবে। এসব নকল ওষুধ খেয়ে কোনো কাজ হয় না। বাজারে যেসব ওষুধের চাহিদা বেশি সেগুলোই নকল করতেন আনিস। আনিস ও তার সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
ক্যাপসুলের ভেতরে এবং ওষুধ তৈরিতে কী ধরনের পাউডার ব্যবহার হতো জানতে চাইলে পুলিশ কমিশনার বলেন, এটা যেকোনো পাউডার হতে পারে। তবে রাসায়নিক পরীক্ষা ছাড়া স্পষ্ট করে বলা যাবে না। এগুলোর রাসায়নিক পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হবে।’
রাতে আটকের সময় আনিসুর জানিয়েছিলেন, আগে তিনি দেশের বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিতে টেকনিশিয়ান হিসেবে চাকরি করেছেন। তারপর চাকরি ছেড়ে নিজেই এই কারখানা গড়ে তুলেছেন। প্রয়োজনীয় সব উপাদান আসত ঢাকা থেকে। বাড়িতে তিনি শুধু প্যাকিং করতেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, চন্দ্রিমা থানা পুলিশ তার এই কারখানার ব্যাপারে জানত। থানায় মাসোহারা দিতে হতো। শহরের চারজন সাংবাদিককেও টাকা দিতে হতো।
এ বিষয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘আনিসের সঙ্গে যার যার সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে অনিসের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুম মুনীর বলেন, নকল ওষুধ কারখানা পাওয়া গেছে বলে শুনেছি। কিন্তু আমার সঙ্গে আনিসের কোনো সম্পর্ক ছিল না। তাকে আমি চিনতামও না। আনিস কেন বলছে তা জানি না।