শীতের রাতে সবাই লেপ-কম্বলের ওমে থাকুক
মির্জা ইয়াহিয়া:
শীত পড়তে শুরু করেছে। এবার কিছুটা আগাম পরিবর্তিত হয়েছে আবহাওয়া। দেশের উত্তরাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিয়েছে। শীতের দিন এলে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়। সেই সময় দিনগুলো ছিলো অন্যরকম।
শীত থেকে বাঁচতে একসময় লেপ অনেক জনপ্রিয় ছিলো। সারাবছর এই জিনিসটি প্যাকেট করে স্টোর রুমে, আলমিরা কিংবা বড় সিন্দুকে রাখা হতো। শীত আসার শুরুতে তা বের করে বাড়ির আঙিনায় বা ছাদে রোদ দিয়ে মচমচে করা হতো। তারপর ব্যবহার শুরু। তবে ইঁদুর কেটে ফেললে তালি দেয়ার প্রয়োজন পড়তো। আবার কেউ সেই লেপের তুলা দিয়েই নতুন লেপ বানাতেন।
এই মৌসুমে লেপ-তোষক বানানোর কাজ যারা করতেন, তাদের ব্যস্ততা বেশি থাকতো। তারা যে শুধু দোকানে কাজ করতেন তা নয়। অনেক ভ্রাম্যমান কারিগরও ছুটে বেড়াতেন পাড়া-মহল্লায়।
এটা মনে আছে। ছোটকালে এই মৌসুমে সকাল-বিকাল তাদের হাঁকডাক শোনা যেতো। তাদের কমন একটা কথা ছিলো, সজোরে বলতেন- “বানাই লেপ-তোষক”। এমন কারিগরদের সাধারণত বাড়ির ছাদে বা উঠোনে নতুন লেপ-তোষক বানাতে দেয়া হতো। আমরা খুব আগ্রহ নিয়ে তাদের কাজ দেখতাম। বিশেষ করে বাদ্যযন্ত্রের মতো জিনিসটি দিয়ে তুলা যখন ধুনতেন, তা দেখতে খুব ভালো লাগতো। এখন কিন্তু লেপ-তোষক তৈরির প্রবণতা কম। সবাই লেপের বিকল্প রেডিমেড কমফোর্টার আর ম্যাট্রেস ব্যবহার করে। আগে তোষকের নিচে আরো একটা জিনিস থাকতো। সেটার নাম ছিলো জাজিম। নারকেলের ছোবড়া দিয়ে তৈরি করা হতো এটা।
সময়ের সাথে সাথে আসলে অনেক কিছুই হারিয়ে যায়। আবার নতুন কিছু আসে। এটাই বাস্তবতা। এই কারণে বর্তমান প্রজন্ম লেপের সাথে সেভাবে পরিচিত নয়। কারণ এখন শীত নিবারণে বেডরুমে বেশি জনপ্রিয় কমফোর্টার কিংবা কম্বল। তাই লেপের কারিগরদের চাহিদা আগের মতো নেই। তার চেয়ে শীত সামনে রেখে বেশি জমজমাট কম্বলের মার্কেট। তবে গ্রামগঞ্জে লেপের ব্যবহার এখনো কিছুটা আছে।
শীতের রাতে সবাই লেপ-কম্বলের ওমে থাকুন; এই কামনা রইলো।
(মির্জা ইয়াহিয়া,সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং জনসংযোগ ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান। সিটি ব্যাংক লিমিটেড, বাংলাদেশ, এর ফেসবুক পেইজ থেকে নেয়া।)