শহরের পাশাপাশি গ্রামের কর্মসংস্থান ও শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে নজর দিতে হবে
মির্জা ইয়াহিয়া:
করোনাভাইরাস সারা পৃথিবীর মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এই পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ভালোর চেয়ে খারাপ খবরই বেশি। এরইমধ্যে করুণ একটা সংবাদ চোখে পড়েছে। প্রিয় রাজধানী ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে অনেকে। ফিরে যাচ্ছে গ্রামের বাড়িতে। এই যাওয়ায় কিন্তু আনন্দের কোনো ব্যাপার নেই। আসলে বাধ্য হয়ে যাচ্ছে। কারণ আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। কেউ চাকরি হারিয়েছেন, কেউবা ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। অনেক প্রতিষ্ঠানই লোকসানের কারণে কর্মী ছাঁটাই করছে। যারা রেস্তোরাঁর মালিক বা শোরুমে জামাকাপড় বিক্রি করেন, তারা ব্যবসায় অনেক মার খেয়েছেন। তাই লোকবল কমানো ছাড়া তাদের কোনো উপায় নেই। আমরা জানি, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাতে শত-হাজার ব্যবসায়ী ও কর্মী ছিলো। তাদের প্রায় সবাই বেকার হয়ে গেছে। এ অবস্থায় নিজেরাই ঢাকায় থাকতে পারছেন না। পরিবার নিয়ে থাকবেন কীভাবে?
বড় বড় অনেক প্রতিষ্ঠানও ব্যবসার পরিধি কমিয়ে খরচ কমিয়ে ফেলছে। উবার ইটস বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। এসব কারণে শিক্ষিত বেকারও বাড়ছে। ঢাকা শহরে পরিবার নিয়েই তারা থাকতো। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের কর্মসংস্থান অনিশ্চিত। তাই গ্রামে যাওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই তাদের সামনে। পত্রিকায় পড়লাম ঢাকা শহর ছেড়ে এরইমধ্যে ৫০ হাজার পরিবার গ্রামে চলে গেছে। আরো একটি খবরে দেখলাম ৫০ বছর ঢাকায় থাকার পর জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় এক ব্যক্তি পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে যাচ্ছেন।
লোকজন শহর ছেড়ে দিচ্ছে, এই কারণে আবার ঢাকা শহরের অনেক বাড়ি ও ফ্ল্যাট খালি হয়ে যাচ্ছে। টু-লেট লেখা ঝুলছে অনেক বাড়িতে। তাই যারা বাড়ি ভাড়ার টাকায় চলেন তারাও খুব একটা ভালো থাকতে পারছেন না। এরমধ্যে আবার বিদ্যুৎ বিল, পানি বিল, গ্যাস বিল নিয়ে তারা স্বস্তিতে থাকতে পারছেন না। তাই সময়টা কারো জন্যই ভালো নয়।
করোনাভাইরাস অনেকভাবেই মানুষের জীবন পাল্টে দিচ্ছে। আমাদের দেশে যারা রাজধানী বা অন্য কোনো শহরে থাকে। তাদের অনেকেরই শিকড় গ্রামে। তাইতো ঈদের মতো বড় কোনো উৎসবে গ্রামের দিকে ছুটে চলেন অনেক মানুষ। কিন্তু এখন উৎসব নয়। অনেককে গ্রামে যেতে হচ্ছে বেকারত্ব সঙ্গী করে। সেখানে তাদের কর্মসংস্থান কী হবে- কোনোকিছু ঠিক নেই। যারা পরিবার নিয়ে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে। শহরের পরিবেশে থাকা শিশুরা গ্রামের পরিবেশে মানিয়ে নিতে সমস্যার সম্মুখীন হবে। সেই ছেলেমেয়েদের নতুন লেখাপড়ার বিষয়টিও প্রচণ্ড ধাক্কা খাবে। সবকিছু মিলিয়ে এটা বলতে হচ্ছে, আমাদের শহরের পাশাপাশি গ্রামের কর্মসংস্থান ও শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে নজর দিতে হবে। বর্তমানে শহরমুখী যে কর্ম-পরিকল্পনা তার বদলে গ্রামেও কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে শহরে মানুষের চাপও কমবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে যে যেখানেই থাকুন, সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
(মির্জা ইয়াহিয়া,সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং জনসংযোগ ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান। সিটি ব্যাংক লিমিটেড, বাংলাদেশ, এর ফেসবুক পেইজ থেকে নেয়া।)

