উৎসাহমূলক বাজেট উপহার দিয়েছেন শেখ হাসিনা : ভোরের পাতা ফেসবুক সংলাপে বিশিষ্টজনরা
বৃহস্পতিবার ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস। এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করা হয়। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সময় সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার বাজেট এবং শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার রাত ৯ টায় দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা ফেসবুক লাইভে এসে আলোচনা করেন বিশিষ্টজনরা। মো. বেলাল হোসাইনের সঞ্চালনায় বৃহস্পতিবারের লাইভে অতিথি হিসাবে আলোচনায় অংশ নেন সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা অপু উকিল, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক হাবিব উল্লাহ ডন এবং তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা রাশেক রহমান।
ভোরের পাতা ফেসবুক লাইভে সংসদ সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, সারা বিশ্বই করোনায় আক্রান্ত। অনেক দেশই চরম ব্যর্থ হয়েছে। আমরা বাংলাদেশের মানুষও আতকিংত ছিলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসনিা আমাদের সাহস দিয়েছেন। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মৃতু্যর হার তেমন নেই। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত সফল হয়েছে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায়।
তিনি বলেন, এতবড় একটি বাজেট এসেছে, তা নিয়ে বিশ্বের অনেক দেশই অবাক হয়নি। গত ১২ বছরে যত বাজেট এসেছে, সেগুলো নিয়ে কেউ বলতে পারেনি গরিব মারার বাজেট। বাজেট নিয়ে কোনো হরতাল হয়নি। কৃষকরা বলেন, কৃষি বান্ধব বাজেট। ছাত্ররা বলেন, শেখ হাসিনার সরকার ছাত্রবান্ধব সরকার। বছরের শুরুতেই নতুন বই উপহার দেয়া হয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। প্রাথমকি ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য হিসাবে নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, এবারো বাজেটে শিক্ষাখাতেই সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। নতুন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে শিক্ষাখাতে আরো উন্নয়ন হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কে কেউই জানতো না, বিএনপি এ দেশের বিভিন্ন খাতকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারই, বঙ্গবন্ধু কন্যা ঐশ্বরিক শক্তি নিয়ে মহান রাব্বুল আলামীনের দোয়াতে তিনি ২৯ বার হত্যাচেষ্টার পরও বেঁচে আছেন শুধু বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণের জন্য। করোনামুক্ত বাংলাদেশ শেখ হাসিনার সরকার উপহার দেয়া হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন নজরুল ইসলাম বাবু। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। করোনাকালে একজন যোগ্য নেতৃত্ব প্রয়োজন ছিল, তিনি আমাদের শেখ হাসিনা। মৃতু্যকে ভয় না তিনি, আল্লাহকে বিশ্বাস করেন। সৎ কর্মের মধ্য দিয়ে তিনি আল্লাহর রহমতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন ইনসাল্লাহ।
যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা অপু উকিল, জেল জুলুম হুলিয়া উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলনে কাজ করেছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো। প্রতিদিনই সংসদ ভবনের জেলখানার সামনে কালো কাপড় মুখে বেঁধে দাঁড়িয়েছিলাম। আমরা বয়সের কারণে মুক্তিযুদ্ধ করতে পারি নাই, তবে শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলন ছিল আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ। শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে, তিনি সকল ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে বিজয়ের মালা নিয়েই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
বাজেট সম্পর্কে অপু উকিল বলেন, পৃথিবী এখন বিধ্বস্ত। এরিমধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পুরো বাজেটটি পেশ করা হয়েছে। এই সংকটকালে, জীবিকার সাথে সংগ্রামের সময় সংকট মোকাবিলার দলিল হিসাবে এসেছে। এই করোনা সংকটের সময় করোনাযুদ্ধে উৎসাহমূলক বাজেট এসেছে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের জন্য। জীবন জীবিকার প্রয়োজন মিটিয়ে স্বাস্থ্যখাতে বিশেষ বরাদ্দের কারণে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের বাজেট এসেছে।
বিএনপি আমলে সাবেক অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকে গিয়ে বসে থাকতেন কত টাকা ঋণ দিবে, তার ওপর নির্ভর করে বাজেট প্রণয়ন করা হতো। কিন্তু বর্তমান সরকারের এ অবস্থা নেই। এখন উন্নয়নমূলক বাজেট প্রণয়ন করা হয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেট পেশ থেকে শুরু করে অনুমোদন পর্যন্ত সবকিছু তদারকি করেন। তিনিই জনগণের আশা পূরণের উৎসাহমূলক এবং আত্নপ্রত্যয়ী বাজেট উপহার দিয়েছেন।
অপু উকিল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে করোনা একটি অপ্রতিরোধ্য যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে আমাদের জিততে হবে। তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০০৯ থেকে প্রতিটি খাতেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এই করোনাকালেও বাংলাদেশে যে পরিমাণ ধান উৎপাদিত হয়েছে, প্রতিটি মানুষের ঘরে খাবার আছে। কেউ অভুক্ত নেই।
এফবিসিসিআই পরিচালক হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, বাজটে ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের যেসব প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল, সেগুলোকে গ্রহণ করা হয়েছে। এবারের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা করা হয়েছে। এটা খুবই ইতিবাচক। কালোটাকা সাদা করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি ব্যবসায়ী হিসাবে সব সময়ই এটাকে ইতিবাচক হিসাবে দেখি। কালো টাকা এবং অপ্রদর্শিত টাকার ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। ১০ শতাংশ কর প্রদান করে এই টাকা বৈধ করার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এই টাকাকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার প্রয়োজন বলেও মনে করেন এফবিসিসিআইয়ের এই পরিচালক। এবারের বাজেটকে বাঁচার বাজেট হিসাবে উল্লেখ করে হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনে এবার মুনাফা নাই করবে, তবু অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে কাজ করবে।
তিনি আরো বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের গরিবের যানবাহন খ্যাত রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানি নিষিদ্ধ করার পর ব্যবসায়ীরা মিলে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিানর কাছে গিয়েছিলাম। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন যে, ক্ষমতায় আসলে বিষয়টি আমলে নেয়া হবে। তিনি কথা রেখেছিলেন। এই করোনা সংকটের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে সাহস নিয়ে সবার সাথে কথা বলেন, তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। এই বাজেটের ঘাটতি পূরণে ব্যবসায়ীরা সমন্বিতভাবে কাজ করলে সুদিন আসবেই বলে উল্লেখ করেন হাবিব উল্লাহ ডন।
তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা রাশেক রহমান বলেন, আমরা সত্যিই সোভাগ্যবান যে আমাদের মাঝে শেখ হাসিনা আছেন। সেনাসমর্থিত সরকার বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে সেদিন জনগণের আন্দোলনের কারণে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল। তাকে গ্রেপ্তার করাটা ছিল পরাজয় এবং মুক্তি দেয়াটা ছিল জয়। একসময় বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুঁড়ি বলা হয়েছিল, কিন্তু এখন বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করোনাকালে প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে বিশ্বের ৩৮তম দেশ। স্বৈরশাসক এরশাদও তাকে গৃহবন্দী করেছিল। শত সংকটের মধ্যেও তিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনা আছেন বলেই, নিন্দুকেরা, সমালোচনাকারীরা পরাস্ত হবে।
করোনা পরবর্তী বাজেট কেমন হবে এমন প্রশ্নের জবাবে রাশেক রহমান বলেন, ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিংয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, একটা দেশের বাজেট শুধু দেশটার অর্থনৈতিক দিককেই নিরুপণ করে না, দেশের পরবর্তী সময়ে যেমন ১০ বছর পর বা ১০০ বছর পর দেশ কেমন হবে তা নির্ধারণ করে। বাজেটে মানবিক ব্যাপারগুলোও সন্নিবেশিত করতে হয়। বাংলাদেশর এবারের বাজেট অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর পাশাপাশি, মানবিক দিকগুলোও রয়েছে। এই করোনা সংকটের কালেও এবারের বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এই বাজেট হচ্ছে মনোবিকাশের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতার বাজেট। আমরা সকল সংকট মোকবিলা করেই এগিয়ে যাবো। করোনাকালে বিশ্বের সকল দেশে যখন বাজেট সংকীর্ণ হচ্ছে সেখানে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটা সম্প্রসারিত বাজেট উপহার দিয়েছেন। স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রাশেক রহমান বলেন, একদিনেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয়। একদিনেই ডাক্তার, নার্স এবং টেকনিশিয়ান তৈরি করা সম্ভব নয়। বাস্তবতার নিরিখেই এই বরাদ্দ হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
করোনা ভাইরাস পরবর্তী সময়ে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আমদানি নির্ভর ব্যবসায় নতুন স্বাভাবিকতায় খাপ খাইয়ে ব্যবসা করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। শেখ হাসিনার সরকার ব্যবসায়ের জন্য অনুকূল পরিবেশ দিয়েছে। এই সংকটকালীনও সময়ে একজন মানুষও অভুক্ত ছিলেন না। এটাও আমাদের আশার কথা।