একাত্তরের এই দিনে
আনোয়ার হোসেন:
আজ ৯ ডিসেম্বর। সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হওয়ার আজ সপ্তম দিন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রাক্কালে মিত্র বাহিনীর অন্যতম রণকৌশল ছিল ক্ষিপ্র গতিতে আক্রমণ করে দু সপ্তাহের মধ্যেই ঢাকা পৌঁছাতে হবে। লক্ষ্য বাস্তবায়নের একেবারে কাছাকাছি এসে পৌঁছায় মিত্রবাহিনী।
জাতিসংঘে চরম উত্তেজনা চলমান থাকলেও রণাঙ্গনে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। ৯ ডিসেম্বর নাগাদ দেশের বড় একটি অংশ শত্রুমুক্ত হয়ে পরে। কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুরোপুরিভাবে, এবং যশোর, কুষ্টিয়া, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহের অধিকাংশ অঞ্চল শত্রুমুক্ত হয়ে পরে। রাস্তায় নেমে আসে জনতার ঢল। ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে অভিনন্দন জানায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের।
চারদিক থেকে মিত্রবাহিনী দ্রুতগতিতে এগোতে থাকে রাজধানী ঢাকার দিকে।
আজ আমরা ভিন্ন একটি বিষয়ের দিকেও নজর দিব।
আর সেটি হচ্ছে রাজাকার, আলবদর, আল শামস, এবং শান্তি কমিটি।
রাজাকার, আলবদর, আল শামস এই শব্দগুলোর সঙ্গে ১৯৭১ সালের আগে বাঙালি জাতির তেমন কোনো পরিচয় ছিল না।
আসুন এবার জেনে নেই এদের সম্পর্কে।
রাজাকার: রাজাকার বাহিনী, তথা রাজাকারদের সংগঠন গঠন করেছিল তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। ১৯৭১ সালের জুন মাসে রাজাকার অধ্যাদেশ' জারি করেছিলেন জেনারেল টিক্কা খান। পূর্বতন আনসার, মুজাহিদদের নিয়ে প্রাথমিকভাবে এই দল গঠিত হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার পাকিস্তান পন্থীরা এই বাহিনীতে যোগ দেয়। এরা ছিল সশস্ত্র। পাক হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জামায়াত নেতা এ কে এম ইউসুফ সর্বপ্রথম খুলনা এলাকায় রাজাকার বাহিনীর সূত্রপাত করেন।খুলনা এলাকায় ৯৬ জন জামায়াত কর্মী নিয়ে এই বাহিনীর সূত্রপাত যা পরবর্তীকালে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।
আলবদর: আলবদররা ছিল ডেথ স্কোয়াড। রাজাকার বাহিনীর পরপরই এই বাহিনী গঠিত হয়। তবে রাজাকার অধ্যাদেশের মত কোন আইনগত বিধান এর ভিত্তি ছিল না। পাকিস্তানি বাহিনীর প্রেরণায় এরা সংঘটিত হয়েছিল এবং হানাদার বাহিনীর সঙ্গে এদের গভীর যোগাযোগ ছিল। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী এদের কে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র সরবরাহ করতো। বদর যুদ্ধের স্মৃতি কে সামনে রেখে আলবদর বাহিনী গঠন করা হয়েছে বলে প্রচার করা হতো। ১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর আল বদর দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
আল শামস: এরা আলবদর ধরনের আরেকটি বিশেষ স্কোয়াড। হত্যাই ছিল এদের প্রধান কাজ।
শান্তি কমিটি :মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই পাকিস্তানপন্থী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার দালালদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল শান্তি কমিটি। প্রথম শান্তি কমিটি গঠিত হয় রাজধানী ঢাকা শহরে। সভাপতি করা হয় খাজা নাজিমুদ্দিনের ভাই খাজা শাহাবুদ্দিনকে। খাজা শাহাবুদ্দীনের নেতৃত্বে শান্তি কমিটি ৪ এপ্রিল ঢাকা শহরে শান্তি মিছিল বের করে। পাক হানাদার বাহিনী যখন নির্বিচারে গুলি করে এদেশের সাধারণ মানুষকে হত্যা করছিল, নিরীহ মা বোনদের ধর্ষণ করছিল তখন এই দালাল শ্রেণীর লোকেরা শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে বিভিন্ন জায়গায় কমিটি গঠন করেছিল। এরা পাক বাহিনীকে রাজনৈতিক সমর্থনদানের কাজটি করেছিল । আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের, ঘৃণা জানাই সকল রাজাকার-আলবদর-আলশামস এবং তথাকথিত শান্তি কমিটির নামে যারা অশান্তির সৃষ্টি করেছিল তাদের প্রতি।
(আনোয়ার হোসেন , ডিআইজি, চট্টগ্রাম রেঞ্জ)