একাত্তরের এই দিনে
আনোয়ার হোসেন:
আজ ৮ ডিসেম্বর । মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আজকের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনীর ঢাকা সদর দপ্তর থেকে প্রথমবারের মতো জেনারেল নিয়াজী স্বীকার করেন পরিস্থিতি খুবই সংকটাপন্ন। এর মধ্যেই মেঘনার পূর্বাঞ্চল মিত্র বাহিনীর দখলে চলে আসে।
এদিন আরও শত্রুমুক্ত হয় খুলনার কপিলমুনি-পাইকগাছা, কুমারখালী, গাইবান্ধা, নকলা অভয়নগর, ত্রিশাল, ঈশ্বরগঞ্জ, গাজীপুরের শ্রীপুর নেত্রকোনার পূর্বধলা প্রকৃতি এলাকা।
একাত্তরের এই সময়টাতে এসে দৃশ্যপটের দ্রুত পরিবর্তন দেখে স্পষ্টতই অনুমান করা যাচ্ছিল খুব শীঘ্রই অবসান হতে যাচ্ছে নয় মাস ব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের। পাক হানাদার বাহিনীর অবস্থান হারানোর মধ্য দিয়ে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন এলাকা শত্রুমুক্ত হচ্ছিল।
কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বিজয় নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের অন্যতম মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তখনো তৎপর ছিল। এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন সপ্তম নৌবহরকে বঙ্গোপসাগরের দিকে রওনা হওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।
লক্ষ্য ছিল মিত্রবাহিনীর যোদ্ধাদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়া।
অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলা মোকাবেলা করার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন ভলাদিভস্তক থেকে একটি রণতরী দ্রুত বঙ্গোপসাগরের দিকে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
সপ্তম নৌবহর যখন বঙ্গোপসাগরের দিকে যাত্রা শুরু করে (11 ডিসেম্বর) ততক্ষণে মিত্রবাহিনীর চতুর্মুখী আক্রমণে পাক হানাদার বাহিনী পশ্চাদপসরণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
এদিন মিত্রবাহিনী টাঙ্গাইলের নিকটবর্তী কোন একটি স্থানে ৭০০ ছত্রীসেনা এবং ৮০ টন যুদ্ধ সরঞ্জাম সরবরাহ করে।
এভাবেই শেষ দিনগুলোতে এসে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল আমাদের গৌরবের মুক্তিযুদ্ধ।
(আনোয়ার হোসেন , ডিআইজি, চট্টগ্রাম রেঞ্জ)