একাত্তরের এই দিনে মুক্তিযুদ্ধের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী
আনোয়ার হোসেন:
গভর্নর হাউজের মিটিংয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে ছিলেন পাকিস্তানি বাহিনীর প্রধান জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী। ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর। দিনটি ছিল বুধবার। এই দিনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ডাক্তার এ এম মালিক তৎকালীন গভর্নর হাউস বর্তমান বঙ্গভবনে এক বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেনারেল নিয়াজী, জেনারেল রাও ফরমান আলী, চিফ সেক্রেটারি মোজাফফর হোসেন প্রমুখ। উক্ত বৈঠকে গত কয়েক দিনের যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনী দিনাজপুর রংপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লাকসাম-চাঁদপুর এবং যশোরে মিত্র বাহিনীর হাতে যে হামলার শিকার হয়েছে সেগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। গত কয়েকদিনের খণ্ডযুদ্ধে পাক বাহিনী মিত্র বাহিনীর হাতে মারাত্মকভাবে পর্যুদস্ত হয়, তাদের জনবল এবং সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
এই পর্যায়ে এসে রাজাকারদের অস্ত্রসহ পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পায়।
ট্যাংক, ভারী কামান এবং বিমান বাহিনীর পর্যাপ্ত সমর্থন না থাকায় পাক-বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই যাচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে পাকবাহিনী সম্মুখ সমরের সৈন্যদের পিছিয়ে এনে প্রতিরোধ ঘাঁটিতে সমবেত করার কৌশল অনুমোদন করা হয়।
অপরদিকে আজকের এই দিনে জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট সাধারণ পরিষদে গৃহীত সিদ্ধান্ত সমূহ ভারত এবং পাকিস্তান সরকারকে অবহিত করে। জাতিসংঘ সাধারন পরিষদে গৃহীত সিদ্ধান্ত"শান্তির জন্য ঐক্য"এর আংশিক অর্থাৎ যুদ্ধবিরতি এবং সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়ে পাকিস্তান সম্মত হলেও ভারত এই বিষয়ে নীরব থাকে।
তবে সিদ্ধান্তের পক্ষে বিপুল সংখ্যক সদস্য রাষ্ট্র (পক্ষে১০৪টি, বিপক্ষে ১১ টি, এবং ভোটদানে বিরত থাকে ১৬ টি দেশ) ভোট দেওয়ায় ভারত কিছুটা বিব্রত হয়। ফলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরন সিং এর নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী প্রতিনিধিদল জাতিসংঘে প্রেরণ করা হয়। অপরদিকে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার জন্য পাকিস্তান ও তাদের নবনিযুক্ত উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল জাতিসংঘে প্রেরণ করে। এভাবেই রণাঙ্গনের যুদ্ধের পাশাপাশি জাতিসংঘেও চলতে থাকে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি।
মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের যোদ্ধা এবং যারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তাঁদের সকলের প্রতি রইল সশ্রদ্ধ সালাম।
(আনোয়ার হোসেন: , ডিআইজি, চট্টগ্রাম রেঞ্জ)