পোল্ট্রি শিল্পে কর প্রত্যাহারের দাবি

পোল্ট্রি শিল্পের ওপর আরোপিত কর প্রত্যাহার না করলে ডিম ও মুরগির দাম বাড়বে ও বাজারে অস্থিরতা তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন পোল্ট্রি শিল্প সংশ্লিষ্টরা। পোল্ট্রি শিল্পের ওপর আরোপিত কর প্রত্যাহারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন পোল্ট্রি নেতারা।
বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর নিকেতনে ‘বাংলাদেশ পোল্ট্রি শিল্প সমন্বয় কমিটির (বিপিআইসিসি) কার্যালয়ে এক সভায় এসব দাবি জানান পোল্ট্রি উদ্যোক্তারা।
চলতি অর্থবছর সরকার পোল্ট্রি শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে আমদানি শুল্ক, অগ্রিম আয়কর ও কাস্টমস ডিউটি আরোপ করে।
এতে পোল্ট্রি ফিড, একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চা, ডিম ও মুরগির মাংসের উৎপাদন খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। ফলে বেড়ে যায় ডিম ও মুরগির দাম। অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে পোল্ট্রি বাজার।
বিপিআইসিসি’র আহ্বায়ক মসিউর রহমান বলেন, চলতি অর্থবছরে সরকার পোল্ট্রি শিল্পের কর অব্যাহতি বাতিল করে দেয়। এতে অস্থির হয়ে পড়ে বাজার। একই সাথে পোল্ট্রি ও হ্যাচারিতে করহার শূণ্য থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ, পোল্ট্রি ফিডের আয়ের ওপর ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এতে এ শিল্পে বিশেষ করে ডিম ও মাংসের বাজারে কী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সে সম্পর্কে নীতি-নির্ধারকদের বোঝাতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।
বর্তমানে কাঁচামালের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হু হু করে বাড়ছে ডিম ও মাংসের দাম। অস্থিতিশীল হচ্ছে বাজার। এ শিল্পকে সম্ভাব্য ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান মশিউর রহমান।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিআইএ) মহাসচিব ডা. এম এম খান বলেন, বাজেটে এ শিল্পের কাঁচামালের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়ানো ও ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আরোপ করা হয়েছে। ফলে কাঁচামালের বাজারেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) সভাপতি ফজলে রহিম খান শাহরিয়ার বলেন, সরকারের আন্তরিকতায় এ শিল্প কম সময়ে অনেক বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে হলে কর অব্যাহতি সুবিধা আগামী ২০২৫ সাল পর্যন্ত অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।
ওয়ার্ল্ডস পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখার (ওয়াপসা-বিবি) সভাপতি সামছুল আরেফিন খালেদ অঞ্জন বলেন, ধাপে ধাপে কর আরোপ করলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতো না।
তিনি বলেন, বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য স্বল্পমূল্যে প্রাণিজ আমিষের যোগান নিশ্চিত করতে হলে উৎপাদন খরচ নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখতে হবে।
অ্যানিম্যাল হেলথ কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আহকাব) এর সাধারণ সম্পাদক ডা. এম নজরুল ইসলাম বলেন, ২০০৭-২০১১ সাল পর্যন্ত বার্ড-ফ্লুসহ অন্যান্য রোগে পোল্ট্রি শিল্পের প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। বর্তমান সরকার বার্ড-ফ্লুর ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ায় গত দুই বছর এ শিল্প বার্ড-ফ্লুর সংক্রমণ থেকে মুক্ত আছে। তবে চলতি অর্থবছর এসব ভ্যাকসিন আমদানিতে ৪ শতাংশ এটিভি ও ৫ শতাংশ এআইটি আরোপ করেছে। ফলে ভ্যাকসিন খরচ অনেক বেড়ে গেছে।
করের ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে সারাদেশে অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। আরও কয়েক হাজার খামার বন্ধ হওয়ার পথে বলেও দাবি করেন পোল্ট্রি নেতারা।
এ অবস্থার উন্নতি না হলে কোরবানির ঈদের পর ডিম ও মুরগির দাম আরও বাড়বে। নেতারা কর অব্যাহতি সুবিধা আরও ১০ বছর বর্ধিত ও আরোপিত কর প্রত্যাহারের দাবি জানান।