পরচর্চা না করে নিজের শুদ্ধতার চর্চা করা সবচে উত্তম- কবি খোশনুর

খোশনুর। সদা হাস্যোজ্জল, উদার মনের একজন আলোর পথচারী। মানুষের যোগ্যতায় বিশ্বাসী একজন স্পষ্টভাষী কবি আবার গীতিকার। ৬০ সালের থেকে ঢাকায় বসবাস করেন। বাবা মা দুজনের বাড়ী নওগাঁ। বাবা ছিলেন পুলিশ অফিসার। চেতনায় এখনও বালিকা। সরল সহজ পরহেজগার কবি খেশনুর মনে করেন পরচর্চা না করে নিজের শুদ্ধতার চর্চা করা সবচে উত্তম। সম্প্রতি বিডি ফিন্যান্সিয়াল নিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম এর সাথে একান্ত আলাপ চারিতায় এ কথা বলেন তিনি। সেদিনের আলোচনায় আরো যা কিছু আলাপ হয় পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।
খোশনুর বলেন, নারীর সৌন্দর্য সূকর্ম এবং সু সচেতনতা। একজন সন্তানের গড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে একজন নারীর সৌন্দর্য যেমন প্রকাশ পায় আবার একজন মায়ের ও পরিচয় পাওয়া যায়। মায়েদের অজ্ঞতার কারনে অনেক সন্তান সঠিক ভাবে বিকশিত হতে পারে না। সৃষ্টির নিয়মে নারী মা হয় একথা ঠিক। কিন্তু প্রতিটি নারীই তার সন্তানের মাধ্যমে পূর্ণতা পেতে চায়। তবে অনেক নারী না বুঝে মা হয় অর্থ্যাৎ বোধের ধারনা পাওয়ার আগেই মা হয়ে যায়। আমি মনে করি প্রতিটি নারীকেই মানুষের প্রকৃতি সম্পর্কে ধারনা নিয়ে মা হওয়া উচিৎ।
পঁচিশ বছর সংসার করার পর ঘর ভেঙ্গেছে খোশনুরের। এ নিয়ে তিনি ভাবনাচ্ছন্ন হননি। কমেনি কর্ম চাঞ্চল্য, এখনও গতিশীল-খোশনুর ঘর ভাঙ্গা নিয়ে বলেন- আমি স্বপ্নেও ভবিনি আমার ঘর ভেঙ্গে যাবে। এটি আমার কাছে এখনও দুঃস্বপ্ন। মনে হয় সব ঠিকই আছে। তবে মন যখন মনের কাছে আর থাকে না তখন আর ঘর থাকেনা। কখনোবা একজনের সাথে অন্য জনের আচরনের তারতম্যের কারনে অনেক সময় সংসার ভেঙ্গে যায়। পৃথিবীতে ঘর বাধা খুব কঠিন।
দুঃখ নিয়ে খোশনুর বলেন, আমার দুঃখই শুধু আছে। দুঃখ কখনো ফিকে হয়। কখনো সজিব হয় কখনো মাথা উচু করে দাড়ায়। মনে করিয়ে দেয় আমি আছি আমিই আছি।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফের সঙ্গে আবার ঘর বেধেছেন খোশনুর। এখন যেমন আছেন জানতে চাইলে খোশনুর বলেন, সুখে আছি, বেচে আছি। সবাইকে নিয়ে আছি। কি পেলাম এ কথা ভাবি না। আত্ম-পরিতৃপ্ততার মধ্যে আছি।
ইষ্ট বেঙ্গল ইনস্টিটিউট ঢাকা তেজগাঁও পলিটেকনিক বালিকা বিদ্যালয়, হলিক্রস কলেজ ও তিতুমীর কলেজ থেকে একাডেমিক শিক্ষা অর্জন করেন খোশনুর। তিনি তার কবিতার দর্শন সম্পর্কে বলেন, সত্য, বাস্তবতা, ভনিতা থাকবেনা জীবন মৃত্যুর মাঝ স্থলে যা আছে প্রত্যয়। কল্পনীয় জটিলতা থাকবেনা। থাকবেনা কোনো প্রবঞ্চনা। জীবন মৃত্যুই আমার দর্শন।
বিডি ফিন্যান্সিয়াল নিউজ টুয়েন্টিফোর এর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের গুণী এই গীতিকবির কাছে প্রশ্ন করা হয় ভালোবাসা কিঃ
খোশনুর বলেন কাল্পনিক আপেক্ষিক একটি শব্দ শুধু মাত্র। আবার শরীর ও আত্মার যে বন্ধন।
মানবতা সম্পর্কে খোশনুর বলেন, মানুষ মূল্যায়িত হোক। সমবেদনা, শ্রদ্ধা, স্নেহ, সম আচরন প্রতিষ্ঠিত হোক। নিজের সত্বার মত করে অন্যের সত্বাকে ভালোবাসার নামই মানবতা।
কবিদের রাজনৈতিক ছায়া প্রচ্ছায়া থেকে বের হয়ে আসতে হবে খোশনুর বলেন, কবিরা সীমাবদ্ধ হওয়া উচিৎ নয় কেননা কবিতা বিশ্ব জনীন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট সম্পর্কে খোশনুর বলেন বঙ্গবন্ধুকে দল মতের উর্ধ্বে রাখতে না পারাই আমাদের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকট। আর এ সংকট দূর করার জন্য রাজনীতিতে প্রয়োজন পড়বে গুণী, সচেতন উদার শিক্ষিত ও নিবেদিত মানুষ। প্রতি হিংসা পরায়নতা আমাদের উন্নয়নের মূল বাঁধা।
শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা কালে খোশনুর জানান আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ব্রিটিশ আমলে যা ছিলো তাই আছে। দেশ প্রেম, শৃঙ্খলা, শ্রদ্ধাবোধ এবং দায়িত্ব সঠিক ভাবে না বুঝিয়ে নিজের স্বার্থকে যে কোন ভাবে চরিতার্থ করার একটা ঘৃন্য মানসিকতাই দেশের শিক্ষিত উচ্চ পদস্থদের মাঝে।
শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে এমন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। দেশকে ভালোবাসলে দেশের স্বারর্থে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো উচিৎ।
বর্তমান সভ্যতা সম্পর্কে খোশনুর বলেন এখন সভ্যতার নামে অসভ্যতা বেশী মনুষ্য-ত্বনেই। ইচ্ছের নিয়ন্ত্রনই গড়ে দেবে নতুন সভ্যতার ভিত।
বর্তমানের ব্যস্ততা সম্পর্কে খোশনুর বলেন কবিতা লিখছি। গান লিখছি শিল্পী আঁখি আলমগীর, রুমানা ইসলাম, তারেক-জুবায়ের ও সুবীর নন্দীর জন্য গান লিখছি। বর্র্তমান গানের মান সম্পর্কে খোশনুর বলেন, বর্তমানে গানে কোনো কাব্য ময়তা নেই। তার উপর এখন গানগুলো এতো হাই ভলিউমে বাজানো হয় যে কি বলা হচ্ছে বোঝাই যায় না। খোশনুর বলেন মিউজিক নিচে থাকবে ভোকাল থাকবে উপরে। মিউজিক ডিরেক্টর কে গীতিকার কে শ্রোতাদের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারনা থাকতে হবে। বাংলাদেশের শিল্পীদের চর্চা অনেক বাড়াতে হবে। গানের কথার সাথে একত্ব হওয়ার ক্ষমতা যার যত বেশী থাকবে প্রকৃত শিল্পী সেই হবে।
প্রায় চার হাজার গান লিখেছেন খোশনুর এর মধ্যে তিন হাজার গান চলচ্চিত্র সহ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে। এতো সব গানের মধ্যে নিজের লেখা কোন গানটি বেশী প্রিয় জানতে চাইলে খোশনুর বলেনঃ-
তুমি ছিলে মেঘে ঢাকা চাঁদ
এইমনে ছিলো বড় সাধ
একবার তোমাকে দেখার।
দায়ী কে? চলচ্চিত্রের গান এটি।
সবশেষে পরিবার নিয়ে খোশনুর বলেন একজন মানুষকে সত্যিকারের মানুষ হয়েওঠার জন্য পরিবারের ভুমিকা অনেক বড়। কিন্তু লক্ষ করা যাচ্ছে বর্তমান যান্ত্রিক দ্রুততা এবং চাকচিক্য ময়তা অনেক পরিবারে শান্তি নষ্ট করে। সম্পদের প্রতিযোগিতা পরিবার গুলোকে অনৈতিকতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখান থেকে বের হতে আমাদের কে জ্ঞান ভিত্তিক পরিবার গড়ে তুলতে হবে।
