“সাবধানে তৈল দিন, কাইস্টা তেল পরিহার করুন” শামীম আহমেদ
“সাবধানে তৈল দিন, কাইস্টা তেল পরিহার করুন”
শামীম আহমেদ
সময়ের প্রয়োজনে বা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এখন বেশীর ভাগ গ্রামেই বিদ্যুৎ আছে, ভোজ্য তেল হিসেবে বাজারে আছে বহু ধরনের তেল যেমন সোয়াবিন, সূর্যমুখি, অলিভ অয়েল ইত্যাদি । আজ থেকে ৩০/৩৫ বছর আগে কোন গ্রামেই বিদ্যুৎ ছিল না এবং ভোজ্য তেল হিসেবে ছিল শুধু মাত্র সরিষার তৈল । এখন যেমন রাস্তার মোড়ে মোড়ে মুদি দোকান সহ নানান ধরনের দোকান পাওয়া যায় ৩০/৩৫ বছর আগে এমনটা ছিল না তখন গ্রামীন হাট বসতো সপ্তাহে একদিন । এমন কি কুরবানি ঈদ ছাড়া গ্রামের মানুষ গরুর মাংসও খেতে পারতো না। সেই সময় গ্রামের গৃহস্থ পরিবারের কর্তা ব্যাক্তি ঝুড়ি/পাতি/চাংগাড়ী/ধামার (বাঁশের ডালা জাতীয়) মধ্যে , সবজী বা মুরগী বা ধান বা গম জাতীয় কিছু একটা মাথায় করে গন্জের হাট বা গ্রামীন হাটে বিক্রি করতে নিয়ে যেতেন আর তার হাতে থাকতো দুইটি তেলের শিশি/বোতল ।
একটি বোতল ছিল কেরোসিন তেল আনার জন্যে অপরটি ছিল ভোজ্য তেল হিসেবে সরিষা তেল আনার জন্যে মাঝে মাঝে নারিকেল তেলের শিশিও থাকতো তবে খুব সৌখিন গৃহস্থ হলে কারণ তখন অনেক গৃহিনী নিজেরাই নারিকেল দিয়ে তেল তৈরী করতো ।
গৃহিনীরা সরিষার তেল ব্যাবহার করতো আংগুল দিয়ে মেপে মেপে দুই বা তিন আংগুল পরিমান তেল দিয়ে প্রতিদিনের রান্না হতো । কেউ ধার চাইলে আংগুল দিয়ে মেপে দিতো । তখনকার দিনে রান্না করা তরকারিও ধার করার প্রচলন ছিল অথবা কেউ একটু ভালো কিছু রান্না করলেও বিতরন করতো কাঁসার বাটিতে করে । তখনকার দিনে সাবান হিসেবে মহিলারা নদীর পারের এঁটেল মাটি ব্যবহার করতেন আর রূপচর্চার জন্যে সবচেয়ে সৌন্দর্য সাবান ছিল “কসকো” তবে তা শুধু ঈদের আগের হাটেই কেনা হতো নাম ছিল “বাসনা সাবান” ঈদের পরে যত্ন করে রেখে দেয়া হতো ঘনিষ্ট মেহমানদের জন্যে ।
তখনকার কাপড় সেলানোর সূচ ভালো রাখার জন্যে সরিষার তেলের শিশি বা নারিকেল তেলের শিশিতে রাখা হতো অবশ্য নারিকেল তেলের শিশিতে মেথিও রাখা হতো । দীর্ঘ দিনের তেলের শিশির জন্যে হউক আর সূচ রাখার জন্যেই হোক বোতল বা শিশির তলায় তেল কাইস্টা বা কাইস্টা যুক্ত একটা লেয়ার থাকতো । কোন বাচ্চা বা বৃদ্ধের ঠান্ডা লাগলে তখন সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা ছিল বুকে সরিষার তেল মাখা এবং রাতের বেলা বাচ্চা বা বৃদ্ধের কাশি হলেই চলতো বুকে তেল মালিশ চিকিৎসা । কুপি বা হারিকেন জ্বালানি রাতে তেল মালিশ করতে করতে গৃহিনী বুঝতেই পারতো না আয়রনযুক্ত কাইস্টা তেল মাখার ফলে বাচ্চাটার বুকের চামড়া উঠে গেছে অথবা সকালে দেখা যেতো বুকটা ধক ধকে লাল হয়ে গেছে ।
আমাদের অফিস পাড়ায় বা সমাজে এমন কিছু তেল মাখার লোক বা গৃহিনী বা তৈলবাজ লোক আছে যারা তৈল মারতে মারতে টেরই পান না, কখন যে কাইস্টা তেল মেখে ফেলেছেন। তবে সচেতন লোকের খেয়াল রাখা উচিত বাচ্চাদের মতো তেল মালিশ না নেয়া, তাহলে দেখবেন এক সময়ে আপনার বুকের মধ্যে কাইস্টা তেলের প্রভাবে চামড়া উঠে ঘা এর সৃস্টি হবে এবং লক্ষ লক্ষ টাকার চিকিৎসা করেও ধক ধকে ঘা শুকানোর পাউডার পাবেন না ।
(শামীম আহমেদ, ব্যাংকার)