সমাজকর্মী পদে নিয়োগ: অনিশ্চয়তায় সাড়ে ছয় লাখ চাকরিপ্রার্থী
বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
সমাজকর্মী (ইউনিয়ন) সমাজসেবা অধিদপ্তরের স্থায়ী রাজস্ব পদ। শূন্য ৭৯৯ পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল ২০১৮ সালে। এরপর নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্র ছাড়া হয় দু'বার। সেই পরীক্ষা দু'বারই স্থগিত হয়ে যায়।
দীর্ঘ সময়েও নিয়োগ পরীক্ষা শেষ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ সাড়ে ছয় লাখ চাকরিপ্রার্থী। দু'দফা পরীক্ষা দিতে এসে ফেরত যাওয়ায় আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। অপচয় হচ্ছে সরকারি টাকার। এতে মাঠ পর্যায়ে সমাজকর্মী পদে ৮০০ পদ এখনও শূন্য থাকায় ব্যাহত হচ্ছে কার্যক্রম।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ৫৪টি কার্যক্রম এ অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করছে।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় তৃণমূল পর্যায়ে এক কোটি ৫ লাখ মানুষকে ভাতা দিয়ে আসছে। এই কাজ বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা রাখে সমাজকর্মী। সমাজকর্মীর পদ ৩ হাজার ২০০টি। এর মধ্যে ৭৯৯টিই খালি।
শূন্যপদ পূরণের লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ১১ জুলাই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তাতে আবেদন করেন ৬ লাখ ৬২ হাজার ২৭০ জন। লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার তারিখ ছিল ২০১৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। এজন্য ৬৩০টি পরীক্ষা কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়।
পরীক্ষাটি নেওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে সেই পরীক্ষার আগমুহূর্তে সেটি স্থগিত করা হয়।
জানা যায়, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তখন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে অবহিত নন মর্মে সমাজকল্যাণ মন্ত্রীকে পরীক্ষা স্থগিত রাখার অনুরোধ জানান।
ফার্মেসি বিভাগ ও বিজ্ঞান অনুষের অভ্যন্তরীণ সমন্বয়হীনতায় তখন ওই পরীক্ষা পিছিয়ে যায় বলে অভিযোগ ওঠে।
পরে ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর কোনো কারণ না জানিয়ে পরীক্ষা স্থগিতের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর পরীক্ষাটি নেওয়ার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু পরীক্ষার আগের দিন রাতে হঠাৎ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দ্বিতীয়বারের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়।
জানা যায়, প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠায় দ্বিতীয়বার পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তবে এ অভিযোগকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলছেন অধিদপ্তরের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমাজসেবা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ‘সমাজকর্মী পদে নিয়োগ নিয়ে একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করছে। দ্বিতীয়বার পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে গুজব ছড়ানো হয়।’
সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘সমাজকর্মী পদে নিয়োগ পরীক্ষার জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। আমাদের কোনো ত্রুটি ছিল না। পরীক্ষাটি স্বচ্ছ করতে সব রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। ফেসবুকে যে প্রশ্নপত্র ছড়ানো হয়েছে, তার সঙ্গে মূল প্রশ্নপত্রের কোনো মিল নেই, এমনকি মানবণ্টনেও কোনো মিল নেই।’
সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু সমকালকে বলেন, ‘সমাজকর্মী পদে কখনোই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। কোনো রকম অনিয়ম হয়নি। সর্বোচ্চ গোপনীয়তা ও স্বচ্ছতা বজায় রেখে পরীক্ষা প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছিল। একটি পক্ষ গুজব ছড়িয়েছে। খুব দ্রুত সমাজকর্মী পদে পরীক্ষা নেওয়া হবে।’