ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিন্দা জানালেন সৌদি বাদশাহ
গতকাল শুক্রবার (২১ মে) ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে ফোন করে গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ। আরব নিউজ সু্ত্রে জানা গেছে । এসময় সৌদি বাদশাহ ইসরায়েলি হামলায় নিহত নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের জন্য দোয়া এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
সালমান বিন আব্দুল আজিজ বলেন, আমরা জেরুজামেলে মুসলিমদের ওপর হামলা ও উচ্ছেদ বন্ধে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। সৌদি আরব সব সময় ফিলিস্তিনের জনগণের সুরক্ষা ও শান্তি কামনা করে। দখলদার ইসরায়েলি সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান অব্যাহত রাখবে সৌদি আরব।
এসময় ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস সৌদি বাদশাহকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধে সৌদি আরব বিশ্ব সম্প্রদায়, মুসলিম বিশ্ব ও আরব সংগঠনগুলোকে একত্রিত করতে কাজ করেছে। এজন্য ফিলিস্তিনের জনগণের পক্ষ থেকে আমি সৌদি আরবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
টানা ১১ দিনের সহিংসতায় কেবল ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নিহত হয়েছে ৬৬ শিশু ও ৩৯ নারীসহ অন্তত ২৪৩ জন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন এক হাজার ৯১০ জন ফিলিস্তিনি নাগরিক। এখনো বিভিন্ন স্থান থেকে আহতদের উদ্ধার করা হচ্ছে। দাতা সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন বলেছে যে, সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত শিশু ও তাদের পরিবারের দিকে সহায়তার নজর বাড়াতে হবে।
সেভ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর জেসন লি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের মধ্যে অনেকেই এখন এক ধরনের মানসিক,সংবেদনশীল এবং শারীরিক ভয় ও ক্ষত নিয়ে বেঁচে থাকবে। তাই সকলপক্ষকে অবশ্যই মানবাধিকার কর্মীদের অনুমতি দিতে হবে, যেন তারা ওই শিশুদের নিকট পৌঁছে তাদের পর্যাপ্ত সহায়তা করতে পারে।
সংঘাতের স্থায়ী সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলি শিশুদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার সমঅধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হওয়া ভূ-গর্ভস্ত টানেল থেকে শুক্রবার ৫ জনের মরদেহ ও আহত অবস্থায় ১০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ২৪৩ জনে।
গাজার নাগরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর সহকারী প্রধান রায়েদ আল-দহশান বলেন, সিভিল ডিফেন্স এবং গণপূর্ত ও পৌরসভা মন্ত্রণালয়ের কর্মীরা এখন ধ্বংসস্তূপ দূর করার কাজ করছে।
অন্যদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘পৃথিবীতে যদি কোনো নরক থাকে, তাহলে সেখানে বাস করছে গাজার শিশুরা’। তিনি বলেন, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান সংঘর্ষ অগ্রহণযোগ্য। এই লড়াই অবিলম্বে থামা উচিত। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেওয়া বক্তব্যে এই মন্তব্য করেন তিনি।
গুতেরেস বলেন, গাজায় ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্সের বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণে ৬০ শিশুসহ অন্তত ২০৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যদিও গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৬৫ শিশুসহ নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ২৩০। জাতিসংঘ প্রধান বলেন, নাইজার ও আলজেরিয়ার অনুরোধে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। নাইজার বর্তমানে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) ও আলজেরিয়া জাতিসংঘে আরব গ্রুপের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছে।
১৯৬৭ সালের সীমান্ত অনুসারে দুই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আলোচনা পুনরায় শুরু করা চলমান সংকট ও আন্তঃসীমান্ত নিরাপত্তার জন্য ইতিবাচক বলেও উল্লেখ করেন জাতিসংঘ প্রধান। গুতেরেস গাজায় সংবাদমাধ্যমের কার্যালয় গুঁড়িয়ে দেওয়াকে চরম উদ্বেগের বলে অভিহিত করেছেন।