South east bank ad

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উন্নয়ন : দেশের লাখো তরুণের স্বপ্ন পূরণের হাতছানি

 প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   তথ্য প্রযুক্তি

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম

পড়াশোনা শেষ করে একটি চাকরি এ দেশের লাখো তরুণের স্বপ্ন। কিন্তু চাকরি যেন সোনার হরিণ। সেই তরুণসমাজকে হতাশা থেকে মুক্তি দিতে নিরলস কাজ করছে সরকার। দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে একের পর এক প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে সম্প্রতি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে তথ্যপ্রযুক্তি খাত। তরুণেরা যেন চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেরাই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেন, সে লক্ষ্যে নির্মাণ করা হচ্ছে একের পর এক প্রশিক্ষণকেন্দ্র। এরই মধ্যে দেশের আটটি স্থানে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টারের নির্মাণকাজ চলছে। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে আরও ১১টি প্রশিক্ষণকেন্দ্র তৈরির মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। শুধু তা-ই নয়, ২০৪১ সাল নাগাদ সারা দেশেই থাকবে আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার। ফলে তরুণদের আর চাকরির পেছনে ছুটতে হবে না।

সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ বলছে, ২০৪১ সাল নাগাদ সারা দেশে এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষ হলে প্রতিবছর ১০ লাখ তরুণ প্রশিক্ষণের আওতায় আসবে। আর ৫ লাখ তরুণের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। এতে তরুণদের স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন পূরণে আর কোনো বাধাই থাকবে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রথমে নাটোরের বড় হরিশপুরে পুরোনো জেলখানা মেরামত করে সেখানে গড়ে তোলা হয় তথ্যপ্রযুক্তির প্রশিক্ষণকেন্দ্র। ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিষয়, যেমন: গ্রাফিকস ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার অ্যান্ড নেটওয়ার্কিং ট্রাবলশুট, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, ই-কমার্স ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট প্রভৃতি বিষয়ের ওপর ৪৮০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সেই ধারণা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়, এ রকম প্রশিক্ষণকেন্দ্র আরও গড়ে তোলা হবে। পরিকল্পনা প্রণয়ন করে প্রকল্প শুরু হয়ে যায়। প্রকল্পের এসব প্রশিক্ষণকেন্দ্রের নাম রাখা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শেখ কামালের নামে। দেশের আটটি জেলায় শুরু হয় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণের কাজ। চলতি বছরই শেষ হওয়ার কথা রয়েছে এসব নির্মাণকাজ। প্রায় ৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নাটোরে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারের নতুন ভবনের নির্মাণকাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, ২০২৫ সালের মধ্যে ১৯টি জেলায় আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার গড়ে তুলতে চায় সরকার। আর ২০৪১ সাল নাগাদ দেশের সব কটি জেলায় একটি করে এমন প্রশিক্ষণকেন্দ্র থাকবে। সে লক্ষ্যে ওই আটটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র নির্মাণের মধ্যেই নতুন করে আরও ১১টি কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সে লক্ষ্যে পরিকল্পনা কমিশনে ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার’ স্থাপনবিষয়ক একটি প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়। এটি বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা।

গত ২৫ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। প্রকল্পটি ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, জয়পুরহাটের কালাই, দিনাজপুর সদর, মানিকগঞ্জের শিবালয়, কিশোরগঞ্জ সদর, নারায়ণগঞ্জ সদর, চাঁদপুরের মতলব, বান্দরবানের বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, ভোলা সদর, কুষ্টিয়া সদর ও মেহেরপুর সদরে হবে এসব প্রশিক্ষণকেন্দ্র।

তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের তথ্যমতে, বর্তমানে হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার সেবা খাতের যে প্রয়োজনীয় জনবল দরকার, সেটি মাথায় রেখেই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। ছয় মাসব্যাপী সার্টিফিকেট কোর্স এবং ১২-২৪ মাস মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স কারিকুলাম ডিজাইন করা হচ্ছে। এসব প্রশিক্ষণকেন্দ্রে একদিকে যেমন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে, অন্যদিকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের ইনকিউবেশনের সুযোগ থাকবে। আইটি ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য এসব সেন্টারে ছোট ছোট কিছু ওয়ার্কিং স্পেস থাকবে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ২০৪১ সাল নাগাদ ৬৪টি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং সেন্টার থেকে ১০ লাখ শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রায় ৫ লাখ শিক্ষার্থীর কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণকেন্দ্র থেকে নিশ্চিত করা যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। এসব সেন্টার থেকে ইমেজ প্রসেসিং, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, ফটোশপ, ডিজিটাল মার্কেটিং, ডেটা এন্ট্রি, কল সেন্টার এজেন্ট তৈরির মতো প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

এদিকে নাটোর ছাড়াও রাজশাহী, যশোর এলাকার তরুণেরা সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে পাওয়া সুবিধা কাজে লাগিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হচ্ছেন। বিশেষ করে রাজশাহীর শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার এবং যশোরের শেখ হাসিনা টেকনোলজি পার্ক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে হাজারো তরুণ আয়ের পথ খুঁজে নিয়েছেন।

তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের যুগ্ম সচিব আখতারুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ। এর অংশ হিসেবে হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের অধীন নেওয়া একাধিক প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। শেষ হওয়া প্রকল্পগুলোয় কার্যক্রমও শুরু হয়ে গেছে। যেখানে একঝাঁক তরুণের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

BBS cable ad

তথ্য প্রযুক্তি এর আরও খবর: