South east bank ad

‘করোনা’ ক্ষুধার্ত বাঘের মতো চারপাশে ঘোরাঘুরি করছে না যে পাওয়া মাত্রই খেয়ে ফেলবে

 প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২০, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   সম্পাদকীয়

এহছান খান পাঠান: আসলে গুজবের যেমন হাত-পা নাই, তেমনি আতঙ্কেরও হাত-পা নাই। ভয় সবসময়ই দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়, নষ্ট করে দেয়, দুর্বল করে দেয়। ‘করোনা’ যেন ক্ষুধার্ত বাঘের মতো চারপাশে ঘোরাঘুরি করছে- পাওয়া মাত্রই খেয়ে ফেলবে। করোনাতে যত লোক আক্রান্ত হয়ে যতজন মারা গেছেন, তার চেয়ে আরও অনেক অনেক বেশি পরিমাণ মানুষ সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। অতএব করোনাকে ভয় পাওয়ার কিছু নাই। প্রয়োজন সতর্ক হওয়া, সাবধান হওয়া। জনসমাগম এড়িয়ে চলা। সম্ভব হলে ঘরে থাকা। বিশিষ্ট চিকিৎসকদের মতে, শুধু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সংক্রান্ত যে শুদ্ধাচার, সেটা যদি আমরা অনুসরণ করি তাহলে সংকট আমাদেরকে তেমন কিছুই করতে পারবে না। যে কারণে আমাদের এখানে করোনার সুযোগ করতে পারার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম। যদি আমরা একটু সচেতন হই এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করি। চিকিৎসকরা বলছেন, মানে সরকার বলছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছেন যে, হাতটাকে ভালোভাবে ধোয়া এবং কারো হাঁচি-কাশি বা এই জাতীয় কোনোকিছু দেখলে তার থেকে দুই ফিট/তিন ফিট দূরত্ব মেইনটেইন করা। তার বডি-টাচের মধ্যে না যাওয়া। এটা একটা সুন্দর পদক্ষেপ। বাস্তব সত্য হচ্ছে- করোনা ভাইরাসে যারা আক্রান্ত হন, তাদের ৮১ শতাংশই মাইল্ড বা সাধারণ অসুস্থ হন। যেটার জন্যে হাসপাতালে যাওয়ারও কোনো প্রয়োজন হয় না! ১৪ শতাংশ অসুস্থ হন, যাদেরকে হাসপাতালে নিতে হয়। বাকি ৫ শতাংশ ক্রিটিকেল বা জটিল। ইনটেনসিভ কেয়ারে নিতে হয়। তাদের অক্সিজেন সাপোর্ট লাগবে। এটা হচ্ছে নিউইয়র্ক টাইমসের ১৮ মার্চের রিপোর্ট। করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৩ জানুয়ারি থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা হচ্ছে ৫৯ হাজার ১৬৫ জন। অর্থাৎ যদি আমরা গড় করি- ৭২ দিনে গড়ে মৃত্যুর হার হচ্ছে প্রতিদিন ৮২১ জন। আর প্রত্যেকদিন সারা পৃথিবীতে মারা যাচ্ছেন গড়ে প্রায় এক লাখ ৫৩ হাজার মানুষ। এর মাঝে শুধু হৃদপিণ্ডের সাথে সম্পর্কিত রোগে ও স্ট্রোকে মারা যান প্রতিদিন প্রায় ৪১ হাজার ৬৪৩ জন (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী)। প্রতিদিন বিশ্বে যে দেড় লাখ মানুষের মৃত্যু হয় তার জন্য তেমন কোনো আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে না বা হৃদরোগে যে প্রতিদিন ৪১ হাজার মৃত্যু হচ্ছে, তা নিয়ে কোনো সাড়া শব্দ নেই। কিন্তু এই আটশ মৃত্যু আতঙ্ক সৃষ্টি করছে! মৃত্যু- করোনায়, নাকি অন্য কারণে?: করোনায় মৃত্যু নিয়ে রহস্য রয়ে যাচ্ছে। বয়স্ক যারা মারা যাচ্ছেন এই ‘ফ্লু’র সময়ে; তারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন, নাকি অন্য রোগ তাদের মৃত্যুর কারণ- এটা নিয়ে যুক্তরাজ্য, ইটালি এবং বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞদের সংশয় রয়েছে, সন্দেহ রয়েছে। ইটালিতে যারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, ৯৯ শতাংশ আগে কোনো না কোনো রোগে আক্রান্ত ছিলেন । ইটালিতে যারা মারা যান ‘করোনা-আক্রান্ত’ বলে কথিত তাদের মাত্র ১২ শতাংশের ডেথ সার্টিফিকেট হচ্ছে যে, তারা সরাসরি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন (সূত্র: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ৩০ মার্চ ২০২০)। অতএব এ থেকে বোঝা যায় যে, যারা মারা গেছেন তারা অধিকাংশই বয়স্ক এবং তারা আগে থেকেই নানান রকম জটিলতায় ভুগছিলেন। এ ব্যাপারে ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি কমিটির কাছে বক্তব্য দিতে গিয়ে যুক্তরাজ্যের সেন্টার ফর গ্লোবাল ইনফেকশাস ডিজিজ এনালাইসিস-এর প্রফেসর নীল ফার্গুসন খুব পরিষ্কারভাবে বলেছেন যে, “আসলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কতজন মারা গেছেন যুক্তরাজ্যে এটা বলা মুশকিল। কারণ যারা এ সময় মারা গেছেন তাদের দুই-তৃতীয়াংশ বা কমপক্ষে অর্ধেকের বয়স এতটাই ছিল যে, তারা যেকোনোভাবেই এসময়ে মারা যেতে পারতেন। অর্থাৎ ‘করোনা’ না হলেও তারা মারা যেতে পারতেন। এদের বয়স ৭০-এর ওপরে।” যুক্তরাজ্য, স্পেন এবং ইটালির মৃত্যুর হার ও কারণ খুব সুস্পষ্টভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, করোনায় তারাই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন, যারা আগে থেকে অসুস্থ ছিলেন। বয়সের কারণে যাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়েছিল। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস কাউকে আক্রমণ করবে কি করবে না- এটা সবসময় নির্ভর করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপরে। আমাদের চারপাশে কোটি কোটি ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস-এলার্জেন-ফাঙ্গি এগুলো রয়েছে এবং প্রতিদিন আমরা এই কোটি কোটি ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস-এলার্জেন-ফাঙ্গির সাথে লড়াই করেই আমরা বেঁচে আছি, সুস্থ আছি, ভালো আছি। কারণ একটাই, আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম। এটা যদি ঠিক থাকে, তাহলে ব্যাকটেরিয়া ভাইরাসের আক্রমণ খুব সহজেই ঠেকানো সম্ভব। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পাশ্চাত্যের যে-কোনো মানুষের চেয়ে, যে-কোনো জাতির চেয়ে অনেক বেশি! এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। আমরা অনেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। আমরা অধিকাংশই প্রতিদিন স্বাভাবিক পানি, ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করি ছোটবেলা থেকে। যার ফলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রবল।
BBS cable ad

সম্পাদকীয় এর আরও খবর: