শিরোনাম

South east bank ad

শুধু কৃষিকাজেই ব্যবহার হবে কৃষি জমি

 প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০১৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   সম্পাদকীয়

দেশে কৃষি জমির পরিমাণ প্রতি বছরই প্রায় ৬৯ হাজার হেক্টর কমছে। তবে গবেষণা ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে ফসলের উৎপাদনও বেড়েছে প্রত্যাশা অনুযায়ী। কিন্তু দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে কৃষি জমি কমে যাওয়ার যে প্রবণতা, তা ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এ প্রেক্ষাপটে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত কৃষি ও ভূমি বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে এবার 'কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন ২০১৫' নামে একটি আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। খসড়ায় বলা হয়েছে, দেশের সব কৃষি জমির ওপর কৃষক বা কৃষিজীবীদেরই অধিকার থাকবে। কৃষিজমি যে কেউ কেনাবেচা করতে পারবেন না। এ ছাড়া কৃষি জমি শুধু কৃষি কাজেই ব্যবহার করতে হবে। এই জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা হলে ওই জমির মালিকানা সরকারের অধীনে ন্যস্ত হবে। ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, গত বছরের ৯ এপ্রিল কৃষি জমি হ্রাস বন্ধে হাইকোর্টে জনস্বার্থে একটি রিট করে পরিবেশ ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ। রিটে একই বছরের ১৬ এপ্রিল হাইকোর্ট ৯০ দিনের মধ্যে ভূমিসহ পাঁচ মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং কৃষি ও ভূমি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠন করে কৃষি জমি রক্ষায় আইন প্রণয়নসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর পর কমিটি কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহারের বিষয়ে একটি খসড়া প্রস্তাব ভূমি মন্ত্রণালয়ে দাখিল করে। সেই আলোকে সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে 'কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন ২০১৫' নামে নতুন এ আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। এখন এটি মন্ত্রিসভায় উত্থাপনের আগে খুঁটিনাটি বিষয় দেখা হচ্ছে। মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদনের পর তা বিল আকারে পাসের জন্য জাতীয় সংসদে পাঠানো হবে। খসড়াটি কার্যকর হলে স্বাধীনতার পর থেকে ভূমি ব্যবহার, কৃষি জমি সুরক্ষা এবং ভূমি জোনিং-সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন, বিধিমালা, ম্যানুয়াল, প্রজ্ঞাপন ও নির্দেশনার কার্যকারিতা বিলুপ্ত হবে। জানতে চাইলে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ  বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি 'কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন'-এর একটি খসড়া তৈরি করেছিল। মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে সেটিই চূড়ান্ত করছে। তিনি আরও বলেন, দেশ ও জনগণের স্বার্থেই নতুন আইন প্রণয়নের এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খুব শিগগির এটি কার্যকর হবে। হাইকোর্টে রিটকারী সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, পরিসংখ্যান বলছে, গবেষণা ও প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে কৃষি জমির পরিমাণ প্রতি বছর প্রায় ৬৯ হাজার হেক্টর করে কমছে, এটা যদি রোধ করা না যায়; তাহলে অচিরেই দেশে খাদ্য সংকট প্রবল আকার ধারণ করবে। এ প্রেক্ষাপট থেকে হাইকোর্টে রিটটি করা হয়েছিল। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। বিশ্বব্যাংকের 'বিশ্ব উন্নয়ন সূচক ২০০৯' থেকে জানা যায়, ১৯৯০ সালে দেশের ২০ শতাংশ মানুষ শহরে বাস করত। ২০০৭ সালে তা বেড়ে হয় ২৭ শতাংশ। বৃদ্ধির এই হার দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশে রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর বাড়ছে। এর বড় অংশই হচ্ছে কৃষিজমিতে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১২ অনুযায়ী, ২০০১ সালে দেশে জাতীয় মহাসড়কের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৮৬ কিলোমিটার। বর্তমানে জাতীয় মহাসড়ক আছে তিন হাজার ৫৪৪ কিলোমিটার। কৃষি জমি সুরক্ষা :খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো কৃষি জমি নষ্ট করে আবাসন, শিল্পকারখানা, ইটের ভাটা বা অন্য কোনো অকৃষি স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। তবে অনুর্বর, অকৃষি জমিতে আবাসন, বাড়িঘর, শিল্পকারখানা স্থাপন করা যাবে। এ ছাড়া কৃষি জমিতে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ফসলের (যেমন_ তামাক) উৎপাদনও করা যাবে না। ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন নয় :সরকার কর্তৃক বনভূমি হিসেবে ঘোষিত ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এরই মধ্যে যেসব জমি বনভূমি, টিলা-পাহাড় শ্রেণীর জমি, জলাভূমি, চা বাগান, ফলের বাগান, রাবার বাগান ও বিশেষ ধরনের বাগান হিসেবে পরিচিত, সেসব ভূমিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া ভূপ্রকৃতিগত কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না। ভরাট করে বা বিনষ্ট করে আবাসিক এলাকা তৈরি বা শিল্পায়ন ইত্যাদি করা যাবে না। এর ব্যত্যয় ঘটলে সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। ভূমির অপচয় রোধ :ভূমির অপচয় রোধকল্পে জমির অধিগ্রহণ নূ্যনতম পর্যায়ে রাখতে হবে। অধিগ্রহণ করা জমির অপব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া কৃষি জমি চিংড়ি মহাল হিসেবে ঘোষণা করা যাবে না। শাস্তি :খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আইন অমান্য বা লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ব্যক্তিকে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
BBS cable ad

সম্পাদকীয় এর আরও খবর: