সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অবদান ও অঙ্গীকার
মহান মুক্তিযুদ্ধের অগ্রযাত্রা ও বিজয়ের স্মারক হিসেবে প্রতি বছর ২১ নভেম্বর ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ পালন করা হয়। এ বছর ৪৬তম ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ পালিত হচ্ছে। ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর সাহসী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী সমন্বয়ে গঠিত ‘বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী’ সম্মিলিতভাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক আক্রমণের সূচনা করে।
‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ উপলক্ষে জাতির জনক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, আমাদের দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা, বীরত্বপূর্ণ মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি পরম শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। গভীর শ্রদ্ধা জানাই মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী সব বীর শহীদানের প্রতি। বিশেষ করে দেশের জন্য শাহাদাৎ বরণকারী সশস্ত্র বাহিনীর বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। সশ্রদ্ধ সালাম জানাই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এবং আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন জানাই বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর বীর সদস্যদের।
স্বাধীনতা আমাদের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ অর্জন। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই মহান স্বাধীনতার স্থপতি। দীর্ঘ ২৩ বছর (১৯৪৮-১৯৭১) ধরে বাঙালি জাতিকে স্বাধিকার আদায়ে উদ্বুদ্ধ এবং প্রস্তুত করে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। যুদ্ধের বিজয়কে ত্বরান্বিত করতে ১৯৭১ সালের এই দিনে অর্থাৎ ২১ নভেম্বর আমাদের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা সম্মিলিতভাবে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ সূচনা করে। এর ফলে আমাদের বিজয় অর্জন ত্বরান্বিত হয়। আমাদের জাতীয় ইতিহাসে তাই দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশে নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৫ মার্চ মধ্যরাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে অর্থাৎ ১২টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ইপিআরের ওয়্যারলেস এবং টেলিগ্রামের মাধ্যমে সে বার্তা ‘ঞযরং সধু নব সু ষধংঃ সবংংধমব, ঋৎড়স ঃড়ফধু ইধহমষধফবংয রং রহফবঢ়বহফধহঃ. ও পধষষ ঁঢ়ড়হ ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব ড়ভ ইধহমষধফবংয যিবৎবাবৎ ুড়ঁ সরমযঃ নব ধহফ রিঃয যিধঃবাবৎ ুড়ঁ যধাব, ঃড় ৎবংরংঃ ঃযব ধৎসু ড়ভ ড়পপঁঢ়ধঃরড়হ ঃড় ঃযব ষধংঃ, ুড়ঁৎ ভরমযঃ সঁংঃ মড় ড়হ ঁহঃরষ ঃযব ষধংঃ ংড়ষফরবৎ ড়ভ ঃযব চধশরংঃধহ ড়পপঁঢ়ধঃরড়হ ধৎসু রং বীঢ়বষষবফ ভৎড়স ঃযব ংড়রষ ড়ভ ইধহমষধফবংয ধহফ ভরহধষ ারপঃড়ৎু রং ধপযরবাবফ’ (অনুবাদ : সম্ভবত এটাই আমার শেষ বার্তা আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনসাধারণকে আহ্বান জানাচ্ছি তোমরা যে যেখানেই আছ এবং যাই তোমাদের হাতে আছে তার দ্বারাই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দখলদার সৈন্যবাহিনীকে প্রতিরোধ করতে। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈনিকটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতাড়িত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।)’ সেনাবাহিনীর বাঙালি সদস্য, আধা সামরিক বাহিনী তথা ইপিআর, পুলিশ এবং আনসারসহ আপামর জনগণ যে যেখানে পেরেছে সেখান থেকেই বিদ্রোহ করে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে। শুরু হয় বীরত্বপূর্ণ মুক্তিযুদ্ধ।
১৭ এপ্রিল ১৯৭১ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমপিকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম এমপিকে উপরাষ্ট্রপতি এবং অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দীন আহমদ এমপিকে প্রধানমন্ত্রী করে মেহেরপুরের মুজিবনগরে ‘বাংলাদেশের প্রথম সরকার’ গঠিত হয়। সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত বাঙালি সদস্য, ইপিআর, পুলিশ, আনসারসহ ছাত্র, শ্রমিক, জনতা তথা বীর বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। সর্বাধিক কার্যকরী এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য সামরিক নেতৃত্বের প্রয়োজন বোধ করে সরকার এবং এ লক্ষ্যে কার্যকর অবকাঠামো গঠনের নিমিত্তে কর্নেল এম এ জি ওসমানীকে (পরবর্তীতে জেনারেল) কেবিনেট মিনিস্টার মর্যাদাসহ বাংলাদেশ ফোর্সেসের প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। এ ছাড়াও কর্নেল (অব.) এম এ রবকে বাংলাদেশ ফোর্সেসের চিফ অব স্টাফ এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকারকে ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হিসেবে নিযুক্তি দেয়া হয়। কর্নেল ওসমানী মুক্তিবাহিনীর সব বিচ্ছিন্ন সংগঠনকে কেন্দ্রীয় কমান্ডের আওতায় নিয়ে আসেন এবং ফোর্সেস সদর দপ্তর থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে অপারেশনাল নির্দেশনা প্রণয়ন করেন। এ বিরাট বাহিনীকে সাহায্য, সহযোগিতা, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, জনবল সংগ্রহ এবং সাধারণ জনগণকে দেখাশোনা করার জন্য ১৯৭০-এর নির্বাচনে নির্বাচিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নেতৃত্বে সাব সেক্টর/ক্যাম্প পরিচালিত হয় যা মুক্তিযুদ্ধের এক বিরাট নিয়ামত এবং সহযোগিতা হিসেবে বিবেচিত হয়।
রণনীতির কৌশল হিসেবে প্রথমেই সমগ্র বাংলাদেশকে ভৌগোলিক অবস্থা বিবেচনা করে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। প্রতিটি সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে একেকজন জ্যেষ্ঠ সশস্ত্র বাহিনীর অফিসারকে নিয়োগ দেয়া হয়। বিভিন্ন সেক্টর ও বাহিনীর মাঝে সমন্বয় সাধন করা, রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, অস্ত্রের জোগান নিশ্চিত করা, গেরিলা বাহিনীর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রভৃতি কাজ কর্নেল এম এ জি ওসমানীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে করতে থাকে। গেরিলাযুদ্ধের জন্য নিয়োজিত অংশকে বলা হতো গণবাহিনী যা সাধারণ জনগণ হতে বাছাইকৃত লোকবল নিয়ে গঠিত হয়েছিল। নিয়মিত যুদ্ধের জন্য সেনা, নৌ এবং বিমানবাহিনী, ইপিআর, পুলিশ, আনসার ইত্যাদি বাহিনীর লোকবল নিয়ে একটি নিয়মিত বাহিনী এবং তিনটি ব্রিগেড গঠন করা হয়েছিল। (১) জেড ফোর্স, (২) এস ফোর্র্স (৩) কে ফোর্স। ‘জেড ফোর্সের’ অধিনায়ক নিয়োগ দেয়া হয় মেজর জিয়াউর রহমানকে যা ১ম, ৩য় এবং ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে গঠিত হয়। ‘এস ফোর্স’ এর অধিনায়ক নিয়োগ দেয়া হয় মেজর কে এম শফিউল্লাহকে যা ২য় এবং ১১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে গঠিত হয়েছিল। মেজর খালেদ মোশাররফকে ‘কে ফোর্সের’ অধিনায়ক নিয়োগ দেয়া হয় যা গঠিত হয়েছিল ৪র্থ, ৯ম এবং ১০ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে। বাংলাদেশ ফোর্সেসের অধীনে এই ১১টি সেক্টর এবং তিনটি ব্রিগেডের মাধ্যমে ৪ ডিসেম্বরে যৌথবাহিনী গঠনের পূর্ব পর্যন্ত ব্যাপকভাবে সমগ্র বাংলাদেশে কার্যকরভাবে পাকিস্তানি দখলদারের বিরুদ্ধে অসংখ্য সামরিক অভিযান পরিচালিত হয়েছিল। নৌ কমান্ডোরা চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দর অকেজো এবং বিমানবাহিনী বিভিন্ন স্থাপনায় বোমা হামলা করে আমাদের নৌ ও বিমানবাহিনীও মুক্তিযুদ্ধে সাহসী এবং কার্যকর অবদান রাখে।
১৯৭১-এর ২১ নভেম্বর বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী এবং আপামর জনসাধারণ একযোগে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যে সমন্বিত আক্রমণের সূচনা করে, শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের বাহিনী এবং ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথ কমান্ডের নেতৃত্বে ৩ ডিসেম্বর চূড়ান্ত অভিযানের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে সম্পূর্ণ পরাস্ত করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে আত্মসমর্পণে বাধ্য করা হয়।
বিশ্বের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে অধিকাংশ সময়ই মিত্রবাহিনী (অষষরবফ ঋড়ৎপবং) অধিকৃত অঞ্চল/দেশ থেকে ফেরৎ আসে না। যেমন- দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর আজও আমেরিকার সশস্ত্র বাহিনী জার্মানি এবং জাপান থেকে, ব্রিটিশ সশস্ত্র বাহিনী জার্মানি থেকে ফেরত আসেনি বরং কৌশলগত কারণে আজও সে দেশে অবস্থান করছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সাহসী এবং দূরদর্শী নেতৃত্বে ভারতীয় মিত্র বাহিনী আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শেষেই মাত্র তিন মাসের মধ্যে ১৭ মার্চ ১৯৭২ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফিরে যায় যা ইতিহাসে বিরল। রাশিয়ান বাহিনী যারা যুদ্ধবিধ্বস্ত চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দর চালু করতে এসেছিল, তারাও যথাযথভাবে কার্য পালন শেষে ফিরে যায়।
শুধু স্বাধীনতাযুদ্ধে নয়, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী। শুধু দেশেই নয়, বিদেশের মাটিতে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকাণ্ড বিশ্বের সব দেশের শীর্ষস্থানে রয়েছে। যার প্রশংসায় পঞ্চমুখ জাতিসংঘ। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে সিয়েরালিয়ন, লাইবেরিয়া, আইভরিকোস্ট, কঙ্গো, হেইতি, লেবানন, সোমালিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি সশস্ত্র বাহিনী শান্তিরক্ষার পাশাপাশি ওইসব দেশের আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ এবং অসহায় মানুষের পুনর্বাসনে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। গত ২৩ জুলাই ২০১৫ইং তারিখে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ব্যবস্থাপনায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন গঙঘটঝঈঙ (কঙ্গো) পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। কঙ্গোর রাজধানী কিনসাসাতে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত (ঝজঝএ) এবং ফোর্স কমান্ডার লে. জেনারেল কার্লোস আলবার্টো মনিটোসর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তারা উভয়ই বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের কঙ্গো মিশনে অবদান, অর্জন ও কার্যকরী ভূমিকার জন্য ভূয়সী প্রশংসা করেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে তাদের অবদান দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে এবং বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর হয়েছে।
১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে কাউন্টার ইন্সারজেন্সি অভিযানে জড়িয়ে পড়ে শান্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে, যারা উপজাতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদের জন্য লড়ছিল। বিচ্ছিন্ন এ যুদ্ধে অফিসারসহ বিভিন্ন পদবির অনেক সৈনিকদের অকালে প্রাণ দিতে হয়েছে কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম বিছিন্ন হতে পারেনি। ১৯৯৭ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ও শান্তিবাহিনীর সঙ্গে শান্তিচুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অপেক্ষাকৃত শান্ত। পার্বত্য চট্টগ্রামে সাধারণ নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন অব্যাহত রাখতে সেনা সদস্যদের প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে।
জাতীয় উন্নয়নে সশস্ত্র বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল অবদান আজ সর্বজন স্বীকৃত। সশস্ত্রবাহিনী এমনি এক বাহিনী যার প্রতি এদেশের জনগণের রয়েছে অগাধ আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসা। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কল্যাণে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা ছাড়াও দেশের অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ছিন্নমূল মানুষের জন্য বাসস্থান তৈরি করা এবং অন্যান্য জনকল্যাণমুখী কাজে প্রতিনিয়ত সশস্ত্রবাহিনী নিবেদিতপ্রাণ। ছবিসহ ভোটার তালিকা, জাতীয় পরিচয়পত্র, মেশিন রিড্যাবল পাসপোর্টসহ জাতীয় মহাসড়ক নির্মাণ, ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস নির্মাণে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের ভূমিকা অত্যন্ত গৌরবজনক।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অতীতে আমাদের প্রিয় সশস্ত্রবাহিনীর কিছু সদস্য ভুলক্রমে অভ্যুত্থান, পাল্টা অভ্যুত্থান, অর্থাৎ হত্যা, ক্যু এবং ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে নিজেদের এবং সশস্ত্রবাহিনীর ক্ষতিসাধন করেছে। সূ² বিশ্লেষণে দেখা যাবে, এসব রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশ এবং সশস্ত্র বাহিনীর ওইসব সদস্যরা যারা এর সঙ্গে জড়িত ছিল অথবা জড়িত বলে সন্দেহ করা হয়। অর্থাৎ প্রকারান্তরে সার্বিকভাবে দেশ এবং সশস্ত্র বাহিনীই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা জানি, একজন সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যকে প্রশিক্ষণসহ পেশাগতভাবে উপযুক্ত করতে দেশের অনেক সম্পদের প্রয়োজন হয়। কেউ চায় না দেশ ও জাতির এ মহান সম্পদ অকালে ক্ষতিগ্রস্ত বা বিনষ্ট হোক। পরিশেষে আমরা আশা করব গণতান্ত্রিক এবং নিয়মতান্ত্রিক নেতৃত্বের প্রতি অনুগত ও শ্রদ্ধাশীল থেকে পেশাগত দক্ষতা ও দেশপ্রেমের সমন্বয় ঘটিয়ে আমাদের সশস্ত্রবাহিনী তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সদা তৎপর থাকবে। জাতির সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়াই হবে তাদের অঙ্গীকার।
মুহাম্মদ ফারুক খান, এমপি : প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, সাবেক মন্ত্রী।