চার নদীর ভরাটে দখলে ডুবছে ঢাকা
প্রকৃতির আশীর্বাদ ছিল ঢাকার ওপর। চারটি নদী এ শহরকে ঘিরে রেখেছে চারদিক দিয়ে। পৃথিবীর খুব কম শহরই আছে এ রকম নদীঘেরা। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, বালু- এই চারটি নদী একদিকে যেমন হতে পারত ঢাকাবাসীর প্রয়োজনীয় পানির উৎস, তেমনি আবার হতে পারত শহর থেকে পানি নিষ্কাশনের আধার। তাহলে ঢাকাবাসীর মতো সুখী মানুষ আর কোন শহরে থাকত? কিন্তু দুঃখের বিষয়, তা না হয়ে হয়েছে উল্টোটা। মানুষেরই কোপানলে পড়ে নদীর আশীর্বাদ আজ হয়ে উঠেছে অভিশাপ। দখল আর ভরাট হতে হতে নদী চারটি এখন মৃতপ্রায়। না পারছে শহরবাসীর পানি জোগান দিতে; না পারছে শহরের নিষ্কাশিত পানি ধারণ করতে। তাই পানি বের হওয়ার পথ না থাকায় একটু বৃষ্টিতেই পথ-ঘাট ডুবে, যানজট বেধে ঢাকা হয়ে পড়ছে অচল। দুর্বিষহ হয়ে উঠছে ঢাকাবাসীর জীবন। এমন অবস্থার মধ্যে পড়েও স্বার্থবাজরা মেতে রয়েছে নদী চারটি দখল আর ভরাটের 'উৎসবে'।
ষাটোর্ধ্ব মো. আবদুল মন্নাছ বুড়িগঙ্গা নদীর কামরাঙ্গীরচর লোহার ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে বলছিলেন নিজের স্মৃতিবিজড়িত নদী কিভাবে সময়ের বিবর্তনে খালে পরিণত হলো তার গল্প। এক সময়ের মিঠা পানির নদীতে ময়লা-আবর্জনার স্তরের ওপর শত শত ঘরবাড়ি দেখিয়ে বললেন প্রভাবশালী মহলের ক্ষমতার দাপটের কথা। বললেন, এরশাদের শহর রক্ষা বাঁধ, নদীর ওপর সরকারি বেশ কয়েকটি স্থাপনাই নদী দখলের পথকে ত্বরান্বিত করেছে। তবে সবচেয়ে বেশি দখল হয়েছে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় আসার পর। সেই সময় রাতারাতি দখলে মেতে ওঠে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরও স্থানীয় প্রভাবশালীরা বসে নেই। তারাও যে যার মতো করে দখল করে নিচ্ছে নদীর অংশ। এদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চললেও তা তেমন কাজে আসে না।
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, 'পৃথিবীতে ঢাকাই একমাত্র রাজধানী শহর, যার চারপাশে চারটি নদী রয়েছে। আমরা ভাগ্যমান যে আমাদের এ চার নদীর পানিই স্বাদু পানি। এদিক দিয়েও আমরা বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ নদীর পানি আজ খাওয়া তো দূরের কথা; দুর্গন্ধে এর কাছেও যাওয়া যায় না। আবার ভারি বর্ষণে নগরীর পানির রিজার্ভার হিসেবেও কাজে লাগছে না। সরকার দখল-ভরাট ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এসব নদী বাঁচানো সম্ভব হবে না।'