বীরাঙ্গনা মায়া রানীকে ঘর দিচ্ছেন ফরিদপুর ডিসি

মহান মুক্তিযুদ্ধে নিজ বাড়িতে ১৬ বছর বয়সে হানাদার বাহিনী ও স্থানীয় দোসরদের দ্বারা নির্যাতিত হন মায়া রানী। তবে তার এতদিন স্বীকৃতি কিংবা ভরসার জায়গা ছিল না তার। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসহায়ভাবে জীবনযাপন করছিলেন। পরে বীরাঙ্গনার স্বীকৃতির জন্য গণশুনানির সময় ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের সঙ্গে সাক্ষাত করেন মায়া রানী। এসময় তিনি অশ্রুভারাক্রান্ত কন্ঠে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সেই বিভীষিকাময় অধ্যায়ের কথা, তার অসহায়ত্বেতার কথা জানান জেলা প্রশাসককে।
তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসক ফরিদপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম রেজাকে মায়া রাণীর বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে সুস্পষ্ট মতামতসহ জামুকায় প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশনা দেন। পরে গত বছরের ১৪ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে উপজেলা বীরাঙ্গনা যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত গঠিত বিশেষ কমিটি প্রতিবেদন জামুকা বরাবর প্রেরণ করা হয়। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে মায়া রাণীকে বীরাঙ্গনা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
এদিকে, বীরাঙ্গনা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও তার ছিলনা কোনো থাকার ঘর। তাই তার জরাজীর্ণ আবাসস্থল সেমি পাকা ভবনে রূপান্তরে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেন জেলা প্রশাসক অতুল সরকার। ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে এ ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম রেজা বলেন, ‘ফরিদপুরে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত পাঁচজন বীরাঙ্গনা রয়েছেন। তাদের প্রত্যেককে একটি করে ঘর নির্মাণ করে দেবে সরকার। মায়া রানীর থাকার জায়গা না থাকায় জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে একটু আগেভাগেই আমরা তাকে ঘর তৈরি করে দিচ্ছি।’
শনিবার দুপুরে মায়া রানী সাহার ঘরের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম রেজা। এসময় প্রশাসনের কর্মকর্তারা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন। পরে মায়া রানীর হাতে ১০ কেজি চাল, পাঁচ কেজি আলু, দুই কেজি তেল, লবণসহ নানা ধরনের খাদ্যসামগ্রী হাতে তুলে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি আরো জানান, মুজিববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত সকল গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য আবাসস্থল নির্মাণ করে দিয়েছে সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় জেলা প্রশাসন মায়া রানীকে ঘরটি মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে দিচ্ছেন।
এদিকে মাথা গোজার ঠাঁই পেয়ে খুশি বীরাঙ্গনা মায়া রানী। তিনি জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘এমন ভালো মানুষ আর হয় না। তার কারণে আমার নাম তালিকায় উঠেছে। বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি পেয়েছি। এবার ঘর পেলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বাড়ি বাড়ি গিয়ে রান্না করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। সামনের দিনে আর হয়তো এই কাজ করতে হবে না। জীবনের শেষ বয়সে এই স্বীকৃতি আমাকে অনেক বেশি বাঁচার শক্তি জোগাবে।’