অ্যাকর্ডের কার্যক্রম নিয়ে ইইউতে বিজিএমইএ’র আপত্তি

তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ নেতারা কারখানা পরিদর্শন জোট অ্যাকর্ডের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়েছেন। গতকাল রাজধানীর গুলশানে বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুনের সঙ্গে বৈঠককালে তারা এ আপত্তির কথা জানান। এ সময় বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়, অ্যাকর্ডের মূল কাজ কারখানার অগ্নি, ভবনের কাঠামো ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তার বিষয়টি পরীক্ষা ও সংস্কার কার্যক্রম তদারক করা। কিন্তু অ্যাকর্ড কারখানায় শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের বিষয়ে উদ্বুদ্ধ কিংবা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। এছাড়া সেফটি কমিটি, পার্টিসিপেটরি কমিটি গঠনের বিষয়ে কারখানা মালিকদের চাপ দিচ্ছে। এর ফলে গার্মেন্টস খাতের বর্তমান স্থিতিশীল পরিবেশে বিপত্তি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, ইইউ রাষ্ট্রদূত বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে ফের বৈঠক করার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। তবে ইইউ’র পক্ষ থেকে কারখানা মালিকদের বর্তমান শ্রম আইনের বিধি যথাযথভাবে অনুসরণের পরামর্শও দেয়া হয়েছে। বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ছাড়াও সংগঠনের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর কারখানার নিরাপত্তা বিষয় পরীক্ষার লক্ষ্যে অ্যাকর্ড গঠন করা হয়। অ্যকর্ডের ২ শতাধিক ক্রেতা ও ব্র্যান্ড স্বাক্ষরকারী রয়েছে যাদের বেশিরভাগই ইউরোপের। এসব ব্র্যান্ডের কাছে পোশাক রপ্তানি করে এমন অন্তত দেড় হাজার কারখানা পরিদর্শন শেষে এখন সংস্কার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বর্তমানে সংস্কার কর্যক্রম তদারক করছে অ্যকর্ড। কিন্তু অ্যাকর্ডের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে দীর্ঘদিন থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছেন পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেও অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, অ্যাকর্ড নিয়ে সরকারের একাধিক মন্ত্রীর তীর্যক মন্তব্যের প্রসঙ্গটিও আলোচনায় এসেছে।
বৈঠকে উপস্থিত বিজিএমইএ’র একটি সূত্র জানিয়েছে, অ্যাকর্ড তাদের মূল কাজের বাইরেও কারখানায় কাজ করতে চায়। তারা এখন কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের জন্য প্রভাব খাটাচ্ছে। বিভিন্ন ধরণের কমিটি গঠনের বিষয়ে চাপ দিচ্ছে। আমরা বলেছি এসব কাজ করতে চাইলে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তাদের এ কার্যক্রম চলতে থাকলে কারখানার বর্তমান স্থিতিশীলতায় বিঘ্ন ঘটতে পারে।
এছাড়া কারখানা সংস্কারে আইএফসি ৫ কোটি মার্কিন ডলারের একটি তহবিলের ইস্যুটিও আলোচনায় এসেছে। এ অর্থ দেশের ৫টি ব্যাংকের মাধ্যমে দেয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করায় তা অনেক উদ্যোক্তার পক্ষে কঠিন হয়ে গেছে। তাদের জন্য সুদের হারও বেশি বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আইএফসি’র ‘সফ্ট লোন’ এখন আমাদের জন্য ‘হার্ড লোন’ হয়ে গেছে। এখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্ভিস চার্জ, বাণিজ্যিক ব্যাংকের চার্জ আর অন্য ব্যাংকের গ্রাহকদের ব্যাংক গ্যারান্টির চার্জ মিলিয়ে উদ্যোক্তার জন্য অনেক খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এর পরও সবাই অর্থ পাচ্ছে না। আমরা সব ব্যাংককে এতে অন্তর্ভূক্ত করার কথা বলে আসছি।
বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতের অগ্রগতির লক্ষ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্যোগে ‘সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্ট’ নামে একটি দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্রম শুরু করা হয়। আগামী ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি ঢাকায় এ বিষয়ে ইউরোপের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্ট এর কার্যক্রমের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে আগাম এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে বিজিএমইএ’র নতুন কমিঠিক গঠনের পর ইইউ’র সঙ্গে এটি প্রথম বৈঠক। বৈঠকে গত দুই বছরে গার্মেন্টস খাতের শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও শ্রম অধিকার রক্ষায় বিজিএমইএ ও সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরা হয়।
বৈঠকে উপস্থিত সংগঠনের সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, সাসটেইনিবিলিটি কমপ্যাক্টের বৈঠকের আগে এটি প্রাথমিক বৈঠক ছিল। আমাদের কার্যক্রমের অগ্রগতিতে ইইউ দূতাবাস সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তবে বাংলাদেশে শ্রম আইনের বিধির বাস্তবায়ন সম্পর্কে তারা জানতে চেয়েছে। সেই সঙ্গে শ্রম আইনের যথাযথ বাস্তবায়নেরও পরামর্শ দিয়েছেন।