২০২০ সালের মধ্যে পায়রার দুই টার্মিনাল চালু

দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পটুয়াখালীর পায়রাকে দ্রুত কার্যকরে ২০২০ সালের মধ্যে দু’টি টার্মিনাল নির্মাণ করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে পায়রা বন্দরের মূল চ্যানেলে ক্যাপিটাল ও রক্ষণাবেক্ষন ড্রেজিংয়ের কাজ বাস্তবায়নে যৌথ কম্পানি গঠনে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
বন্দর বাস্তবায়নে সব কাজের তত্ত্বাবধানও করবে এই যৌথ কোম্পানি।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও এককভাবে সুয়েজ খাল খননের অভিজ্ঞতা থাকা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ড্রেজিং কোম্পানি বেলজিয়ামভিত্তিক ‘জান ডি নুল’ মিলে যৌথ কোম্পানিটি গঠন করবে।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর এক হোটেলে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর জাহাঙ্গীর আলম ও জান ডি নুলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জান পিটার ডি নুল। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।
শাজাহান খান বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে পায়রা বন্দরে একটি কয়লা বা বাল্ক টার্মিনাল ও একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল চালু হবে।
তিনি বলেন, পায়রা বন্দরের বাণিজ্যিক সক্ষমতা বাড়াতে ১৯টি কম্পোনেন্টের সবগুলোর উন্নয়ন কার্যক্রম একই সঙ্গে নেওয়া জরুরি। এ লক্ষ্যে ড্রেজিং কার্যক্রম সম্পন্ন হলে পায়রা বন্দর সংশিষ্ট সকল প্রকল্পের উন্নয়ন কার্যক্রম বেগবান হবে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ড্রেজিং কোম্পানি জান ডি নুলের মাধ্যমে ড্রেজিং করা হলে তা আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ও বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা তৈরি করবে।
মন্ত্রী বলেন, গত বছর পায়রা বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে ১১টি জাহাজ বহির্নোঙ্গরে এসেছে। এতে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১৮ কোটি টাকা আর পায়রা বন্দর আয় করেছে এক কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য মাহবুবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আবদুস সামাদ এবং দিল্লিস্থ বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত জান লুইক্স।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের জানানো হয়, ৩৬ দশমিক ৫ নটিকেল মাইল চ্যানেলের প্রথম পর্যায়ে টার্নিং বেসিনে ৯ মিটার ও টার্মিনাল এলাকায় ১১ মিটার গভীরতায় ড্রেজিংয়ের প্রাক্কলিত প্রকল্প ব্যয় ধরাহয়েছে ৫৩২ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন ইউরো। সার্বিকভাবে চ্যানেলের প্রশস্ততা হবে টার্নিং বেসিনে ১২৫ মিটার ও টার্মিনাল এলাকায় ৪০০ মিটার। প্রথম পর্যায়ের ড্রেজিং শেষে ১১ মিটার গভীরতার জাহাজ মূল বন্দরে প্রবেশে সক্ষম হবে। পরে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্যায়ে ১২ মিটার ও তৃতীয় পর্যায়ে ১৪ মিটার গভীরতার জাহাজ মূল বন্দরে প্রবেশের ব্যবস্থা করা হবে।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় জানায়, কোম্পানি গঠনের শেয়ার হবে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের ৫১ শতাংশ ও জান ডি নুল’র ৪৯ ভাগ। প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর। প্রাক্কলিত ইক্যুইটি পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের ৫৪ দশমিক ৩১ মিলিয়ন ইউরো ও জেডিএনের ৫২ দশমিক ১৮ মিলিয়ন ইউরো।
২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নে দেশের তৃতীয় হিসেবে পায়রা সমুদ্রবন্দরের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বছরের ১৩ আগস্ট পায়রা বন্দরের বহির্নোঙ্গর থেকে পণ্য খালাসের মাধ্যমে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমেরও উদ্বোধন করেন তিনি।
গত বছরের ২৫ মে ঢাকায় পায়রা সমুদ্রবন্দরের মূল চ্যানেলে ক্যাপিটাল ও রক্ষণাবেক্ষন ড্রেজিং করতে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও জান ডি নুলের মধ্যে সমঝোতা স্মারকপত্র স্বাক্ষরিত হয়।