গভীর সমুদ্র থেকে জেনেটিক সম্পদ আহরণ করতে চায় সরকার

ক্যান্সার, আলঝেইমার, এ্যান্টি-এজিং ক্রিমসহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত মেরিন জেনেটিক রিসোর্সেস (এমজিআর) গভীর সমুদ্র থেকে আহরণের প্রযুক্তি চায় বাংলাদেশ। এজন্য উন্নয়নশীল দেশসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আলোচনা করে একটি দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চায় সরকার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম ইউনিটের সচিব এবং গ্লোবাল সি বেড কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমরা জানতাম সূর্যের আলো পানির নিচে যতটুকু পৌঁছায় ততটুকু পর্যন্ত প্রাণী বেঁচে থাকে কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আবিষ্কার হয়েছে সমুদ্রের ৫ হাজার এমনকি দশ হাজার ফিট নিচে পর্যন্ত প্রাণী বেঁচে থাকে। তাদের অনেকের জেনেটিক উপাদান ক্যান্সার, আলঝেইমারের মতো প্রাণঘাতী রোগের চিকিৎসা থেকে শুরু করে ত্বকের প্রসাধন বা এ্যান্টি-এজিং ক্রিম তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।’
গত ১৫ বছরে মেরিন জেনেটিক রিসোর্সেস ব্যবহৃত হয় এমন ১৪ হাজার পণ্যের পেটেন্ট নিয়েছে বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি। এরমধ্যে বেশিরভাগই ওষুধ কোম্পানি।
মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, ‘দুই বছর আগে এ সম্পদের সুষম বণ্টনে একটি বৈশ্বিক ব্যবস্থা সৃষ্টির জন্য জাতিসংঘে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ মাসে আমরা আমাদের চূড়ান্ত সুপারিশমালা জাতিসংঘের মহাসচিবের দফতরে জমা দিয়েছি। আশা করছি আসন্ন সাধারণ অধিবেশনে এটি নিয়ে আলোচনা করে একটি বৈশ্বিক লিগ্যালি বাইন্ডিং সুষ্ঠু বণ্টন ব্যবস্থা তৈরির দিক নির্দেশনা আসবে।’
সুপারিশমালায় কী আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি হস্তান্তর, উন্নয়নশীল দেশগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, পণ্যের উৎসমূল বা ট্রেসেবিলিটি, ক্লিয়ারিং হাউস মেকানিজমসহ আরও অনেক বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘গভীর সুমদ্র থেকে মেরিন জেনেটিক রিসোর্সেস সংগ্রহে অত্যন্ত উচ্চপ্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়। এ প্রযুক্তি উন্নয়নশীল দেশগুলোকে দেওয়ার জন্য সুপারিশ করার পাশাপাশি এ প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করারও প্রস্তাব করা হয়েছে।’
অনেক প্রতিষ্ঠান মেরিন জেনেটিক রিসোর্সেস থেকে পণ্য উৎপাদন করেও এর ঘোষণা দেয় না। সুপারিশমালায় বলা হয়েছে, মেরিন জেনেটিক রিসোর্সেস উপাদান ব্যবহার করে কেউ পণ্য উৎপাদন করলে ক্লিয়ারিং হাউস মেকানিজমের মাধ্যমে সবাইকে অবহিত করতে হবে।
এছাড়া ট্রেসেবিলিটির মাধ্যমে একটি পণ্যের কাঁচামাল থেকে শুরু করে এর উৎপাদন প্রক্রিয়া কিভাবে সম্পন্ন হয়েছে সেটিরও উল্লেখ থাকতে হবে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সক্ষমতা বৃদ্ধি ছাড়া আরও তিনটি সুপারিশে উন্নত বিশ্বের আপত্তি আছে কিন্তু আমরা আশা করছি সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সবাই একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারবে।’
ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমানা নির্ধারণের পর থেকে সুমদ্র সম্পদ আহরণের জন্য বাংলাদেশ বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। সর্বশেষ গভীর সমুদ্রে জেনেটিক সম্পদে বিশ্বের সব দেশের অধিকার রক্ষায় সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনা করবে সরকার।
উল্লেখ্য, সমুদ্রসীমানার ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মাছ ও সব ধরনের সম্পদের উপর বাংলাদেশের নিরঙ্কুশ অধিকার আছে অর্থাৎ অন্য কোনও দেশ এ সম্পদ আহরণ করতে পারবে না। ২০১ মাইল থেকে ৩৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মাছ ব্যতীত অন্যান্য সম্পদ যেমন তেল, গ্যাস বা খনিজ পদার্থের উপর বাংলাদেশের অধিকার আছে। এর বাইরের সম্পদ সারা বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত অর্থাৎ সেখানকার সম্পদ আহরণের জন্য কোনও অনুমতির প্রয়োজন হয় না।