উৎসব ভাতার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি মালিকরা

পোশাক শিল্প শ্রমিকরা ২০ রোজার (১৬ জুন) মধ্যে উৎসব ভাতা পাবেন— এমন সিদ্ধান্ত হয়েছিল গার্মেন্টস শিল্প-বিষয়ক ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কোর কমিটির সভায়। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পোশাক শিল্প মালিকরাও। কিন্তু বরাবরের মতো এবারো নিজেদের প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেননি শিল্প মালিকরা। ঘোষিত সময় পেরিয়ে গেলেও উৎসব ভাতা পেয়েছেন অর্ধেকেরও কম কারখানার শ্রমিক।
প্রতিশ্রুত সময়ে উৎসব ভাতা প্রদানে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে চট্টগ্রামের কারখানাগুলো। বন্দর নগরীতে তৈরি পোশাক ও অন্যান্য খাত মিলিয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে ১ হাজার ২০টি। এর মধ্যে পোশাক কারখানার সংখ্যা ৬৩৮। শিল্প পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এসব কারখানার কোনোটিই শুক্রবার পর্যন্তও উৎসব ভাতা পরিশোধ করেনি। তবে গতকাল থেকে কিছু কিছু কারখানায় উৎসব ভাতা প্রদান শুরু হয়েছে। ১৯-২১ জুনের মধ্যে পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শিল্প মালিকরা।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের অনেক পোশাক কারখানা শ্রমিকদের মে মাসের বেতন এখনো পরিশোধ করেনি। উৎসব ভাতা প্রদানের শেষ দিন গত শুক্রবার পর্যন্ত মে মাসের বেতন পরিশোধ করেছে চট্টগ্রামের ৫০৯টি পোশাক কারখানা। এ অবস্থায় চট্টগ্রামে ৭০টির মতো পোশাক কারখানা শ্রম অসন্তোষের ঝুঁকিতে রয়েছে।
চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকার একটি তৈরি পোশাক কারখানা এমএনএস সোয়েটার। কারখানাটির মালিকপক্ষ ১৮ জুনের মধ্যে শ্রমিকদের মে মাসের বেতন পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু আস্থার সংকট থেকে শ্রমিকরা হঠাত্ করে গত বৃহস্পতিবার কাজ বন্ধ করে দেন। পরে শিল্প পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সমঝোতায় শ্রমিকরা আবারো কাজ শুরু করেন।
শ্রমিক প্রতিনিধিরা বলছেন, অধিকাংশ কারখানায় শ্রমিকদের উৎসব ভাতা পরিশোধ হয়নি। বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, ক্ষুদ্র-মাঝারি অনেক কারখানায় বেতন-বোনাস পাওয়া নিয়ে এখনো সংশয় রয়েছে। আমাদের হিসাবে ঝুঁকিপূর্ণ কারখানার সংখ্যা প্রায় ৫০০।
নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও নরসিংদীতে পোশাক ও অন্যান্য খাত মিলিয়ে মোট শিল্প-কারখানা রয়েছে ২ হাজার ৪৪২টি। এর মধ্যে পোশাক কারখানার সংখ্যা ৯২৫। ওই এলাকার শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ২৫২টি কারখানায় উৎসব ভাতা দেয়া হয়েছে। মে মাসের বেতন পরিশোধ নিয়েও সংশয় রয়েছে অনেক কারখানায়। বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যা তৈরি হতে পারে এমন কারখানার সংখ্যা শিল্পাঞ্চলটিতে ৩৬৬।
ঢাকার আশুলিয়া, সাভার ও ধামরাই এলাকায় কারখানা আছে মোট ১ হাজার ৭৩টি। শিল্প পুলিশ বলছে, এ অঞ্চলের ২৭ শতাংশ বা ২৯৭টি কারখানা উৎসব ভাতা পরিশোধ করেছে। বড় কোনো সমস্যা না হলেও কিছু কারখানার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন শিল্প পুলিশ। উদ্বেগের কারণ রয়েছে এমন কারখানা আছে এ অঞ্চলে ২৫টি।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে কারখানা রয়েছে মোট ১ হাজার ৮৮৪টি। এর মধ্যে পোশাক কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৩০০। এ অঞ্চলের শিল্প পুলিশের তথ্য বলছে, কারখানায় উৎসব ভাতা পরিশোধ কেবল শুরু হয়েছে। শ্রম অসন্তোষের ঝুঁকিতে আছে ১৮২টি কারখানা। গতকাল এ এলাকার পাঁচটি কারখানায় কাজ বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা ঘটে। বেশির ভাগ কারখানা কর্তৃপক্ষই শ্রমিকের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে উৎসব ভাতা পরিশোধ করছে।
বিজিএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ নাসির জানান, পোশাক কারখানার বেতন-বোনাস পরিশোধ শুরু হয়েছে। সংগঠনের পর্যবেক্ষণের আওতায় ৪০০-৫০০ কারখানা আছে, যেগুলোয় অর্থ সংকট চলছে। এর মধ্যে বেশি সমস্যাগ্রস্ত কারখানা রয়েছে ১০-১২টি।
দেশের শিল্প-কারখানাগুলোর ওপর আগেরবারের মতো এবারো কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছে বলে জানান শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিদর্শক ড. মো. আনোয়ার উল্লাহ। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে শিল্প পুলিশ ও খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন কাজ করছে। নিয়ন্ত্রণকক্ষ স্থাপনের মাধ্যমে আমরা সমন্বয়ের কাজ করছি।
উল্লেখ্য, দেশের শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া ও চট্টগ্রাম। শিল্প পুলিশের হিসাবমতে, এসব অঞ্চলে সব খাত মিলিয়ে ৬ হাজার ৬৬১টি শিল্প-কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ২৭৮টি পোশাক কারখানা। বাকি ৩ হাজার ৩৮৩টি অন্যান্য খাতের। এসব কারখানার মধ্যে বিভিন্ন সমস্যায় শ্রম অসন্তোষপ্রবণ হিসেবে ৫১৮টি কারখানা শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্য কারখানা রয়েছে ২৪৭টি। আর বিকেএমইএর সদস্য কারখানার সংখ্যা ৮৯। বাকি ১৬৮টি কারখানা অন্যান্য খাতের।