জানুয়ারির মাঝামাঝিতে আসছে শৈত্যপ্রবাহ

ডিসেম্বর মাস চলে যাচ্ছে, অথচ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশী। তবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আসছে জানুয়ারির মাঝামাঝিতে সারাদেশে একটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এতে দেখা মিলতে পারে কনকনে শীতের।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তাসলিমা ইমাম বলেন, ডিসেম্বর মাসে তাপমাত্রা বেশি থাকলেও জানুয়ারিতে তুলনামূলক বেশী শীত অনুভূত হবে।
তিনি বলেন, “ডিসেম্বরের প্রথম দিকে একটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ছিল। জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের প্রথম দিকে একটি শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে”।
তাপমাত্রা তারতম্য হওয়ার অন্যতম নিয়ামক ঊর্ধ্ব আকাশে পশ্চিমা জেড প্রবাহ। এ বছর পশ্চিমা জেড প্রবাহ সক্রিয় না থাকায় ডিসেম্বর মাস চলে গেলেও শীতের প্রকোপ বাড়ছে না।
সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্র ১৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় ঢাকায়। অন্যদিকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায়।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছরের ডিসেম্বরে তুলনামূলক বেশি উষ্ণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ঊর্ধ্বাকাশে পশ্চিমা জেড প্রবাহ সক্রিয় না থাকায় এবার শীতে বেশী ঠাণ্ডা অনুভূত হচ্ছেনা।
অথচ গত বছরের এই দিনে (২৬ ডিসেম্বর) ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় সিলেটের শ্রীমঙ্গলে।
তাসলিমা ইমাম বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সারা বিশ্বই উদ্বিগ্ন। তাপমাত্রার তারতম্যের কারণেই জলবায়ু পরিবর্তন হয়। তবে জলবায়ু পরিবর্তন একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব। এই পরিবর্তনটি কয়েক বছরের তাপমাত্র দিয়ে এটি দিয়ে বিবেচনা করা যায় না।
তিনি জানান, গত ৩০ বছরের ডাটা এনালাইসিস করে দেখা গেছে, এই সময়ে তাপমাত্রা বেড়েছে দশমিক শূন্য ছয় (.০৬) শতাংশ। এটা নেহায়েত অনেক কম। তবে এভাবে বাড়তে থাকলে বিষয়টি আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।
আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ আরিফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৯৬৮ সালে। সেটা ছিল ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্র রেকর্ড করা হয় ১৯৫৩ সালে। সেটি ছিল ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তিনি জানান, ১৬ বছর আগে ২০০০ সালে ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেটি ছিল ১৩ ও ৩০ ডিসেম্বর। সারাদেশে সে বছর ৩১ ডিসেম্বর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় দিনাজপুরে।
কৃষি আবহাওয়াবিদ শামীম হাসান ভূইয়া বলেন, শীতে ফসলের সবচেয়ে ক্ষতি করে কুয়াশা। শীতের পরিমাণ বেশি হলে কুয়াশার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। তবে এ বছর তুলনামূলক কম শীত হওয়ায় কুয়াশার পরিমাণও কম। কুয়াশা হলে ফসলে পোকা-মাকড়েরর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
তিনি জানান, শীত কম হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় গম। গমের ফলন ভাল হয় না। বেশি বৃষ্টিপাত হলেও গমের ক্ষতিকর রোগ ব্লাস্টের আক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকে। গত বছর সাতক্ষিরায় ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়। ১৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। একারণে ব্লাস্ট আক্রমণ করে থাকতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা ব্যক্ত করেন।
শামীম হাসান বলেন, তাপমাত্রা বেশি হলে হঠাৎ প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়। আবার দীর্ঘ সময় বৃষ্টিপাত হয় না। যা ঋতু অনুযায়ী উৎপাদিত ফসলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে।

