দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের নির্মাণকাজ সমাপ্ত

সাউথ ইস্ট এশিয়া-মিডলইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ-ফাইভ (এসইএএমইডব্লিউই-৫) সাবমেরিন কেবলের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ফ্রান্সের মার্সেলি থেকেসিঙ্গাপুর পর্যন্ত ২০ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এ সাবমেরিন কেবল নির্মাণের কাজ গত বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে এসইএএমইডব্লিউই-৫কনসোর্টিয়াম। এটি দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল সংযোগ।
বিকল্প সাবমেরিন কেবল সংযোগ স্থাপন, আন্তর্জাতিক গন্তব্যের সংখ্যা ও ব্যান্ডউইডথ সরবরাহের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশও একনসোর্টিয়ামের অন্যতম সদস্য হিসেবে কেবলটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত হতে সরকার ‘রিজিওনাল সাবমেরিনকেবল টেলিকমিউনিকেশন্স প্রজেক্ট, বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এর আওতায় ২০১২ সালের ২৭ জানুয়ারি দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলেরসঙ্গে সংযুক্ত হতে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডকে (বিএসসিসিএল) দায়িত্ব দেয়া হয়। বিএসসিসিএলকে এসইএএমইডব্লিউই-৫কনসোর্টিয়ামে যুক্ত হতে অনুমতি দেয়া হয়। এসইএএমইডব্লিউই-৫ স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণে ২০১৪ সালের ৭ মার্চ চুক্তি করে বিএসসিসিএল।
কুয়াকাটার ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে ঢাকা পর্যন্ত ট্রান্সমিশন ব্যাকহল তৈরির কাজ চলতি মাসের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো শুরুইকরতে পারেনি নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। ঢাকা-কুয়াকাটা অপটিক্যাল ফাইবারট্রান্সমিশন লিংক স্থাপনে যন্ত্রপাতি কেনার জন্য চলতি বছরের এপ্রিলে দরপত্র আহ্বান করে বিটিসিএল। এর পর দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় একটি প্রতিষ্ঠানকেনির্বাচিত করা হলেও গত ১৫ অক্টোবর টেন্ডার বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি আবার নতুন করে দরপত্র আহ্বানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।এতে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত হলেও নির্ধারিত সময়ে তা থেকে ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ ও ব্যবহার নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
জানা গেছে, ১০০ গিগাবিটস পার সেকেন্ড (জিবিপিএস) ডিডব্লিইডিএম প্রযুক্তি ব্যবহার করা এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৫ সাবমেরিন কেবলটিরব্যান্ডউইডথ সরবরাহের সক্ষমতা ২৪ টেরাবিটস পার সেকেন্ড (টিবিপিএস)। এসইএএমইডব্লিউই-৫ কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে স্থাপন করা নতুন একেবল যাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে পশ্চিম ইউরোপে। এর মাঝে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোও সংযুক্ত হবে। গত বছরের সেপ্টেম্বরেআনুষ্ঠানিকভাবে এটি স্থাপনের কাজ শুরু হয়।
কনসোর্টিয়ামে বাংলাদেশ (বিএসসিসিএল) ছাড়াও সদস্য হিসেবে রয়েছে— মালয়েশিয়া (টেলিকম মালয়েশিয়া), সিঙ্গাপুর (সিংটেল), ইন্দোনেশিয়া(টেলিন), মিয়ানমার (এমপিটি), শ্রীলংকা (শ্রীলংকা টেলিকম), পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ডিইউ), সৌদি আরব (এসটিসি), ওমান, মিসর,জিবুতি (জিবুতি টেলিকম), তুরস্ক, ফ্রান্স, ইতালি (টিআইএস), চীন (চায়না মোবাইল, চায়না ইউনিকম এবং চায়না টেলিকম) ও ইয়েমেন (টেলিইয়েমেন)। ১৮টি দেশের ১৯টি ল্যান্ডিং স্টেশনে যুক্ত হবে এ কেবল। গভীর সমুদ্রে স্থাপন করা মূল কেবল থেকে একটি সংযোগ কেবলের মাধ্যমে যুক্তহবে বাংলাদেশ। এটির ল্যান্ডিং স্টেশন স্থাপন করা হচ্ছে কুয়াকাটায়। এছাড়া মিসরের আবু তালাত, ইয়েমেনের আল হুদাইদাহ, ওমানের বারকা,ইতালির কাতানিয়া, জিবুতির জিবুতি সিটি, ইন্দোনেশিয়ার দুমাই ও মেদান, আরব আমিরাতের ফুজেইরাহ, পাকিস্তানের করাচি, তুরস্কের মারমারিস,শ্রীলংকার মাতারা, মালয়েশিয়ার মেলাকা, মিয়ানমারের নগওয়ি সাউঙ্গ, থাইল্যান্ডের সাতুন, ফ্রান্সের তৌলন, সিঙ্গাপুরের তুয়াস, সৌদি আরবেরইয়ানবু ও মিসরের জাফারানাতে ল্যান্ডিং স্টেশন থাকবে এ কেবলের।
এটি স্থাপনে বাংলাদেশের ব্যয় হয়েছে ৬৬০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) এতে ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার (প্রায়৩৫২ কোটি টাকা) ঋণ দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন ১৬৬ কোটি টাকা। আর বাকি ১৪২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা দিয়েছে বিএসসিসিএল।
বাংলাদেশ বর্তমানে একমাত্র সাবমেরিন কেবল সংযোগ হিসেবে সিমিউই-৪ এ যুক্ত। এ কেবলেরও বাংলাদেশ অংশটির ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণেরদায়িত্বে রয়েছে বিএসসিসিএল। প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এ কেবলের মাধ্যমে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের প্রায় ১৩টি দেশের ১৫টি ল্যান্ডিংপয়েন্টে সংযোগ স্থাপনের সুযোগ লাভ করছে বাংলাদেশ।