মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে রেললাইন পারাপার

ট্রেনের হুইসেল বাজছে, পূর্ব পাশের ব্যারিয়ার (প্রতিবন্ধক) নামানো হলেও পশ্চিম পাশেরটা নামতে একটু দেরি হয়েছে- এই সুযোগেই ভিতরে প্রবেশ করেছে দু’টো প্রাইভেট কার, একটা মটরবাইকসহ কয়েকটি রিকশা। ট্রেনটি গেট ছুঁই ছুঁই করছে এমন মুহূর্তে আড়াআড়ি করে পার হয়ে গেলো যানবহনগুলো। এইভাবেই প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে এফডিসি রেলগেটে পার হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
রোববার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর এফডিসি সংলগ্ন রেলগেটে দুপুর থেকে বিকেল অবস্থান করে দেখা যায় এমন সব চিত্র।
ট্রেন আসবে বলে রেলগেট বন্ধ। এর মধ্যেই পায়ে হেঁটে বা মোটরবাইক নিয়ে বেপরোয়াভাবে পার হচ্ছে মানুষ। মনোযোগ একটু এদিক-সেদিক হলেই ঝরে যাবে একটি প্রাণ, স্বজন হারাবে অনেকে।
গাড়িতে বসে ব্যারিয়ার ওঠানোর অপেক্ষায় থাকা, আবু হেলাল (৪২) বলেন, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে মানুষ রেলগেট পারাপারে এই ঝুঁকিগুলো নিয়ে থাকে। যদি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বা সচেতন করা হতো তাহলে অন্যরা ঝুঁকি নিয়ে পারাপারের বিষয়টি এড়িয়ে যেতো।
যারা লাইন পেরিয়ে যাতায়াত করছেন তাদের মধ্যে একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিষয়ের ছাত্র খালিদুল ইসলাম। তার অভিযোগ, ওভারব্রিজ না থাকায় আমাদের এই ঝুঁকি নিতে হচ্ছে। সরকারের উচিৎ এই ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে ওভারব্রিজ দেওয়া।এদিকে, এই রেলগেটের ব্যারিয়ার দেরিতে নামানোর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত গেটম্যান জাহাঙ্গীর আলম (৩২) বলেন, আমরা যারা এখানে আছি সবাই দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছি, চারটি ব্যারিয়ার একসঙ্গে নামানোর নিয়ম। আমরাও তাই করি, কিন্তু মাঝে মধ্যে কিছু মানুষ গাড়ি ও মোটরবাইক নিয়ে ঢুকে পড়ে, মূলত তাদের জন্যই এই বিপত্তিটা ঘটে।
সাধারণ মানুষের উপর অভিযোগ নিয়ে এসে তিনি বলেন, আমরা নির্দেশনা পাবার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যারিয়ারগুলো নামিয়ে দেই, একটু সময় নেওয়ার কারণে সাধারণ মানুষই বিরক্তি প্রকাশ করে- এমনকি জোর করে ব্যারিয়ারের নিচ দিয়ে প্রবেশ করে। তাদের জীবন নিয়ে তারা ঝুঁকি নেন, আমাদের কী করার আছে!
অন্যদিকে, পথচারী রিপন মাহমুদ জানান, রেলগেটে ব্যারিয়ার নামানোর হুইসেল বাজলেও, রেললাইনের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকে রিকশাসহ ভাড়ায়চালিত বিভিন্ন যানবাহন। মাঝে মধ্যে আবার বন্ধ রেলগেটের ফাঁকা জায়গা দিয়ে অবাধে চলাচল করছে গাড়ি। ট্রাফিক পুলিশ এসব দেখেও না দেখার ভান করছেন। দুর্ঘটনা হওয়ার এটাও একটি কারণ।
এটা কেন হচ্ছে, সেটা রহস্য বলেই চালিয়ে দিলেন এই পথচারী।
রেল লাইনের ভিতর দিয়ে অবাধ চলাচল নিয়মিত ঘটনা, কে শুনছে কার কথা, অবশ্য তাদের বলারও কেউ নেই, এমনটি বলছেন অন্য পথচারীরা।
তবে কমলাপুর থানার ওসি, ইয়াছিন ফারুক মজুমদার বলেন, বন্ধ রেলগেটের ভেতরে পথচারী বা যানবাহন প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। রেলওয়ে আইন অনুসারে, এটা দণ্ডনীয় অপরাধ। আমরা তাদের এই অপরাধে মামলা দিলেও, সচেতন করে তুলতে পারি না। যতোদিন পর্যন্ত আইনকে না সম্মান করবে, আর নিজ থেকে সচেতন না হবে, ততোদিন এসব বন্ধ করা খুব কঠিন। তবে এটাই সত্য, এই সচেতনতার অভাবেই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে মানুষগুলো।